রহমাতুল্লিল আলামিন: বিশ্বকে সুন্দর করার জন্য নবী (সা.)-এর শিক্ষা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ও নবীদের শেষ। তাঁকে “রহমাতুল্লিল আলামিন”—সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত—হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে, যাতে তিনি মানবজাতিকে অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির অন্ধকার থেকে মুক্ত করে হিদায়াতের আলোয় পথ দেখাতে পারেন। পবিত্র কুরআনে বহু আয়াতে তাঁর এই মহত্ত্বের উল্লেখ রয়েছে এবং তাঁকে সমগ্র মানবজাতির জন্য আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সীমাহীন করুণা: জাতি, ধর্ম ও ভূগোলের ঊর্ধ্বে
“রহমাতুল্লিল আলামিন” অর্থ হলো, নবী (সা.)-এর করুণা কোনো নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম বা ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর দয়া ও মমতা সমগ্র মানবজাতি, এমনকি প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের প্রতিও বিস্তৃত। এই সীমাহীন করুণা তাঁকে সৃষ্টিজগতের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
করুণা ও ন্যায়বিচারের সমন্বয়
অনেকে প্রশ্ন করেন, নবী (সা.)-এর অসীম করুণা কীভাবে সেই কুরআনিক নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ধর্মের শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। এর উত্তর হলো—নবী (সা.)-এর করুণা কখনো ন্যায়বিচার থেকে বিচ্যুত নয়। তিনি সহমর্মিতা, ধৈর্য ও সদয়তার মাধ্যমে মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করেছেন এবং একই সঙ্গে নিপীড়িতদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।
তওবার দরজা খোলা
পূর্ববর্তী যুগে অনেক জাতি কুফর ও গুনাহের কারণে আল্লাহর শাস্তিতে ধ্বংস হয়েছে। কিন্তু নবী (সা.)-এর আবির্ভাবের মাধ্যমে আল্লাহ তওবার দরজা খুলে দেন। তাঁর মাধ্যমে মানুষকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে ভুল থেকে ফিরে এসে সঠিক পথে চলার।
ঐক্যের ভিত্তি: নবী (সা.)-এর জীবনচরিত
নবী (সা.)-এর জীবন মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের প্রধান ভিত্তি। তাঁর জীবনচরিত অনুসরণ করলে মুসলমানরা বিভেদ ভুলে একত্রিত হতে পারে এবং ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
বর্তমান যুগে নবী (সা.)-এর আদর্শের প্রয়োজনীয়তা
আজকের পৃথিবীতে সহিংসতা, বিভাজন ও বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। এমন সময়ে নবী (সা.)-এর শিক্ষা—দয়া, ক্ষমাশীলতা, ন্যায়বিচার ও বিনয়—অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য এই আদর্শকে জীবনে ধারণ করে বিশ্বে শান্তি ও করুণা ছড়িয়ে দেওয়া।
নবী (সা.): আল্লাহর করুণার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন আল্লাহর করুণার জীবন্ত প্রতিফলন। “রহমাতুল্লিল আলামিন” শুধু একটি উপাধি নয়, বরং এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনপথের দিকনির্দেশনা, যা বিশ্বমানবতার ঐক্য, সহমর্মিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি স্থাপন করে।
আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি
হুজ্জতুল ইসলাম ও মুসলিমিন মোহাম্মদ ইস্তোয়ার মিমান্দি, ইরানের হাওযা ইলমিয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ক দপ্তরের পরিচালক, বলেন: “নবী মুহাম্মদ (সা.) শুধু মুমিনদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্যই অতুলনীয় করুণা।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, নবী (সা.)-এর জন্ম কাফেরদের জন্যও আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষার উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং তাঁদের জন্য হিদায়াত ও তওবার দরজা খুলে দিয়েছিল। তাঁর মতে, “রহমত”—এই মহান ধারণা—শুধু মুসলিম উম্মাহ নয়, বরং সব তাওহিদী ধর্মের অনুসারীদের জন্যও ঐক্যের ভিত্তি।
কুরআনের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন: “وَمَا أَرْسَلْنَاکَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِینَ”—অর্থাৎ নবী (সা.) সমগ্র জগতের জন্য রহমত। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন: “فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللّهِ لِنتَ لَهُمْ…”—নবী (সা.)-এর কোমলতা আল্লাহর করুণারই প্রতিফলন, যা মানুষকে তাঁর চারপাশে আকৃষ্ট করেছে।
উম্মতের ঐক্য ও প্রতিরোধের ভিত্তি
মিমান্দি বলেন, নবী (সা.)-এর “রহমাতুল্লিল আলামিন” হওয়াই উম্মতে আহমদের ঐক্যের মূল ভিত্তি। তাঁর করুণা শুধু মুসলিমদের নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য। তিনি আল্লাহর “রহমান” ও “রহিম”—এই দুই গুণের বাস্তব প্রতিফলন।
যারা নবী (সা.)-এর রিসালাত, আল্লাহর একত্ব, কুরআনের হিদায়াত, আখিরাত ও নবুয়তের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং একই কিবলার দিকে নামাজ পড়ে—তাঁদের মধ্যে এই সাধারণ ভিত্তি ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তুলতে পারে।