গায়েবাতকালে শিয়াদের পথপ্রদর্শন: ইমাম হাসান আসকারীর ঐতিহাসিক ভূমিকা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৪ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: মারজাদারান ইসলামি ইতিহাসের বিশ্লেষক, জানান যে এগারতম ইমাম হযরত হাসান আসকারী (আ.) গায়েবি ইমাম মাহদীর আগমনের জন্য শিয়া সমাজকে দক্ষভাবে প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁর সূক্ষ্ম কৌশল ও নবাবদের মাধ্যমে পরিচালিত যোগাযোগ শিয়াদের হৃদয়ে গায়েবি ইমামের প্রতি আনুগত্য ও ভক্তি ধরে রেখেছে।
১: গায়েবি ইমামের অস্তিত্বের প্রাথমিক প্রকাশ
ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বিশেষ কিছু বিশ্বস্ত সাহাবাদের সামনে তাঁর পুত্রের অস্তিত্ব প্রকাশ করতেন। আহমদ বেন ইসহাক কোমি ছিলেন একজন যিনি তিন বছর বয়সে শিশুটিকে “বাকিয়াতুল্লাহ” হিসেবে পরিচয় দিতে দেখেছিলেন। এটি কেবল ইমাম মাহদীর অস্তিত্ব প্রমাণই নয়, বরং শিয়াদের মধ্যে গায়েবি ইমামের গ্রহণযোগ্যতার সামাজিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল।
২: ধাপে ধাপে গায়েবি
মারজাদারান ব্যাখ্যা করেন, গায়েবি দুই ধাপে সংঘটিত হয়েছিল: ছোট গায়েবি (গায়েবি সাগিরা) – প্রায় ৭০ বছর স্থায়ী, বিশেষ নবাবদের মাধ্যমে শিয়ারা ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
বড় গায়েবি (গায়েবি কবিরা) – বিশেষ প্রতিনিধিত্বের শেষ ও ইমামের তৈওকিফ প্রকাশের মাধ্যমে শুরু, যা আজও চলমান।
এই সময়ে শিয়া সমাজের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব ফিকাহি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়।
৩: আল্লাহর ও ইমামের জ্ঞান
ইমামের সঙ্গে আল্লাহর জ্ঞান জড়িত। হযরত সাজ্জাদ (আ.) বর্ণনা করেছেন, “যে ব্যক্তি তার ইমামকে চিনবে না, সে আল্লাহকেও চিনবে না।” এটি প্রমাণ করে, আল্লাহর জ্ঞান অর্জন শুধুমাত্র ইমামের চেতনায় সম্ভব। তাই ধর্মীয় আলেমদের প্রচেষ্টা শিয়াদের ইমামের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪: গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও প্রমাণ
ইমাম হাসান আসকারীর (আ.) পবিত্র দেহে জানাজা পড়ার সময় পাঁচ বছর বয়সী শিশুটি উপস্থিত হয়ে পিতার দেহে জানাজা আদায় করেন। এটি ইমাম মাহদীর উপস্থিতির স্পষ্ট নিদর্শন।
৫: শিয়াদের জন্য কৌশল ও প্রস্তুতি
ইমাম আসকারী (আ.) নবাবদের মাধ্যমে শিয়াদের সঙ্গে সংযোগ বজায় রেখেছিলেন। এটি কেবল সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অটুট রাখেনি, বরং শিয়াদের হৃদয়ে গায়েবি ইমামের প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য স্থায়ী করেছে।
৬: শত্রু ও হুমকি মোকাবিলা
আব্বাসি শাসকরা ইমামের আধ্যাত্মিক প্রভাবের কারণে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইমামের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও সতর্ক পদক্ষেপ শত্রুদের প্রতিহত করে, গায়েবি পথকে নিরাপদ রাখে।
উপসংহার:
ইমাম হাসান আসকারীর কৌশল ও প্রচেষ্টা শিয়া ইতিহাসে স্থায়ী উত্তরাধিকার রচনা করেছে। এটি ইমামতের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেছে এবং ভবিষ্যতে হযরত মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথও প্রস্তুত করেছে।



