SliderUncategorizedকুরআন

কিভাবে শবে কদরে সমগ্র কুরআন নাযিল হয় ?

কিভাবে শবে কদরে সমগ্র কুরআন নাযিল হয় ?

সূরা কদরের প্রথম আয়াত সম্পর্কে সর্বপ্রথমে যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় তা হলো, ’কিভাবে সমগ্র কুরআন এক রাতে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব অথচ মহান আল্লাহ প্রতিটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াত অবতীর্ণ করতেন?’ সূরা কদরের প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন নাযিলের সময় সম্পর্কে বলেছেন,

«إِنَّا أَنْزَلْناهُ فی لَیْلَةِ الْقَدْرِ»

“নিশ্চয়ই আমরা এটাকে ( সম্পূর্ণ কুরআন) কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। এবং সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

«شَهْرُ رَمَضانَ الَّذِی أُنْزِلَ فِیهِ الْقُرْآنُ»

” রমযান মাস এমন মাস যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে’।

“এই আয়াতগুলো দু’টি পড়ার পরে একজন মানুষের মনে সর্ব প্রথম যে প্রশ্নটি চলে আসে তাহ হলো, কীভাবে সম্ভব যে সমগ্র কুরআন এক রাতে নাযিল হয়েছে, অথচ কুরআনে ইসলাম ও মুসলমানদের ভবিষ্যতের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা রয়েছে এবং আল্লাহ্ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল করতেন।”

অন্য কথায়, প্রতিটি আয়াতের একটি শানে নুযুল (নাযিলের প্রেক্ষাপট) বা নাযিলের কারণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন ‘লাইলাতুল মাবীত’-এর কথা বলা হয়, তখন তা সেই রাতের দিকে ইঙ্গিত করে যখন আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) নবীজি (সা.)-এর বিছানায় শুয়েছিলেন, যেদিন নবীজি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। হযরত আলী (আ.)-এর সাহসিকতাপূর্ণ এ কাজ পবিত্র কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। আয়াতটি: “আর মানব মণ্ডলীর মধ্য থেকে এমন ব্যক্তিও আছে যে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের জীবন-প্রাণ বিক্রি করে দেয় [যেমন আমীরুল মু’মিনীন আলীর (আ.) মতো] এবং মহান আল্লাহর বান্দাদের প্রতি দয়ালু।

মহানবী (সা.)-এর আহলুল বাইত (আ.) শিক্ষক ও পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে এবং যেহেতু তাঁরাই পবিত্র কুরআনের তা’বীল (অর্থ বা বিষয়ের বাস্তব নমূনা নির্ধারণ) সংক্রান্ত আলেম ও বিশেষজ্ঞ সেহেতু তাঁরা এ সন্দেহের অপনোদন করেছেন ও জবাব দিয়েছেন। ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেন: সমগ্র কুরআন শবে কদরে বা ভাগ্য রজনীতে বাইতুল মা’মূরে এক সাথে ও একদফায় অবতীর্ণ হয়; অতঃপর সেই বাইতুল মা’মূর থেকে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ওপর অবতীর্ণ হতে থাকে। এ ধরনের নুযূলকে ( অবতীর্ণ হওয়া) নুযূলে দাফ’ঈ ( এক দফায় নুযূল্ বা অবতীর্ণ হওয়া) বলা হয় অর্থাৎ সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআন এক দফায় মহানবীর (সাঃ) প্রতি অবতীর্ণ হয়; অত:পর এ গ্রন্থের আয়াতসমূহ প্রতিটি ঘটনার সাথে সংগতি রেখে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে এ পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে অবতীর্ণ হতে থাকে। তবে বাইতুল মা’মূর কোথায় অবস্থিত? হাদীস সমূহে বাইতুল মা’মূরের স্থান সপ্তম আকাশে, কখনো চতুর্থ আসমানে এবং কখনো কখনো এ পৃথিবীতেও বলা হয়েছে।

বাহ্যত: বোঝা যায় যে পবিত্র কা’বার সমান্তরালে নীচের দিকেই হচ্ছে বাইতুল মা’মূরের নিম্নমুখী বা নিম্নগামী অবতরণ ও পরিক্রমণ। ইমাম বাক্বের (আ.) বাইতুল মা’মূরকে ফেরেশতাদের স্থান বলে পরিচিত করিয়ে দিয়েছেন এবং বাইতুল্লাহিল হারামের স্তম্ভ ও পায়া সমূহকে আকাশস্থ বাইতুল মা’মূরের সমকক্ষ বলে গণ্য ও বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, পবিত্র মক্কার হারামে ভালো কাজের বহুগুণ বেশি সওয়াব, পূণ্য, প্রতিদান ও পুরস্কার প্রদান করা হবে এবং মন্দ কাজসমূহের (পাপসমূহ) ক্ষেত্রেও বহুগুণ বেশি শাস্তি দেওয়া হবে।

এরপর মহান আল্লাহ বলেন, খিমা বা তাঁবুর রশিগুলো এর চারপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং এর পেরেকগুলোর শেষ ভাগ এমন এক স্থানে প্রোথিত রয়েছে যেখানে এখন মসজিদুল হারাম অবস্থিত। এ সব পেরেক ছিল বেহেশতের খাঁটি স্বর্ণের পাথরের নির্মিত এবং খিমা বা তাঁবুর রশিগুলো ছিল আরঘাভনের ( এক ধরনের বেগুনী বর্ণের পুষ্প এবং সেটার গাছ যা লাভ ট্রি বা প্রেমের গাছ বলে পরিচিত) আঁশ বা তন্তু থেকে বয়নকৃত। মহান আল্লাহ হযরত জিব্রাঈল (আ.)-কে ওহী মারফত নির্দেশ দিলেন যে সে যেন ৭০ হাজার ফেরেশতা নিয়ে ঐ খিমা বা তাঁবুর দিকে অবতরণ করে যাতে তারা ওটা কে বিদ্রোহী উদ্ধত শয়তানদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে, হযরত আদম (আ.)-এর পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ সহচর ও সঙ্গী হয় এবং উক্ত খিমাকে( তাঁবু) তারা যেন তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করতে থাকে। হযরত জিবরীল (আ.) ফেরেশতাদের নিয়ে অবতরণ করেন এবং উক্ত খিমার নিকটে অবস্থান নিয়ে ওটাকে শয়তানদের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করেন। ঠিক যেমন ভাবে তারা আসমানে বাইতুল মা’মূরের চারপাশে তাওয়াফ করতেন ঠিক তেমনি তারা প্রতিদিন ঘর ( কা’বা) ও খিমার তাওয়াফ ( প্রদক্ষিণ) করতে থাকেন। বাইতুল হারামের পায়া ও খুঁটি সমূহ আসমানে অবস্থিত বাইতুল মামূরের একসমান ও সমপর্যায়ের অর্থাৎ একই ধাচ ও মাপের পৃথিবীর জমিন অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের ওপর বাইতুল হারামের পায়া ও খুঁটি সমূহ স্থাপিত হয়েছে।

ইমাম সাদিক্ব (আ.) মহানবী (সা.) থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বাইতুল মামূরকে আহলে কিসা বা আলে আবার (আহলুল বাইত) পাঁচ জনের নামসমূহের প্রকাশ স্থল হিসেবে সূচিত করে বলেন, অত:পর রাসূলুল্লাহ (সা.) ফেরেশতাদের বললেন, “আমাকে সালাম দিয়ে তোমরা আমার ভাই আলী সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করো।” এরপর আমি ( রাসূলুল্লাহ সা.) তাদেরকে বললাম: “সে (হযরত আলী আ.) পৃথিবীতে আমার খলীফা। তাকে কি তোমরা চিনো ?!” তারা বলল:”কেন আমরা তাঁকে চিনব না? আমরা প্রতি বছর বাইতুল মামূরে হজ্জ করি এবং সেটার ওপর সাদা রংয়ের একটি চর্ম কাগজ আছে যাতে হযরত মূহাম্মাদ ( সা.), আলী, হাসান, হুসাইন, (মাসূম) ইমামগণ ও এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের সকল অনুসারীর নাম উৎকীর্ণ ও লেখা আছে। (দ্রঃ:আল-কাফী,খ:৩,পৃ:৪৮২)

অতএব পবিত্র কুরআন কোনো এক বছরের শবে কদরে বাইতুল মামূরে পৌঁছায় (অবতীর্ণ হয়)। আর এই স্থানটাই এমন এক জায়গা যা বস্তুগত বা পার্থিব স্থান নয়। বরং এটা বারযাখে অবস্থিত। আর এভাবেই পবিত্র কুরআনের খুঁটিনাটি ও সার্বিক দিক ও বিষয়াদিতে মহানবীর (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গজ্ঞান ছিল। আর এটাই হলো মহানবীর (সা.) অশেষ ফযিলত ও গণসমূহের একটি।

বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক

মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

আরো পড়ুন…

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button