শিশুদের ধর্মীয় চেতনা গড়ে তোলার সময়োপযোগী কৌশল
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৯ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: শিশুকে ধর্ম শেখানো মানে শুধুমাত্র নামাজ, রোজা বা হালাল-হারামের নিয়ম শেখানো নয়—এটি ভালোবাসা, অনুভূতি ও আচরণের মাধ্যমে বিশ্বাসের বীজ বপন করা। যদি আমরা চাই সন্তানদের হৃদয়ে ঈমান স্থায়ীভাবে গেঁথে যাক, তবে আমাদের তাদের মতো করে ভাবতে হবে, তাদের ভাষায় কথা বলতে হবে এবং নিজের জীবন দিয়ে হতে হবে তাদের অনুপ্রেরণা।
শিশুর মন বোঝার মাধ্যমে ধর্ম শেখানো
শিশুরা পৃথিবীকে বড়দের চোখে দেখে না। তারা যুক্তি নয়, অনুভূতির মাধ্যমে শেখে। তাই ধর্মের শিক্ষা যদি কঠিন ভাষায় বা ভয় দেখিয়ে দেওয়া হয়, তবে তারা ধর্ম থেকে দূরে সরে যেতে পারে। বরং কোমল ভাষায়, গল্প বা উদাহরণের মাধ্যমে শেখানোই সবচেয়ে কার্যকর।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
«نَحْنُ مَعَاشِرَ الْأَنْبِيَاءِ أُمِرْنَا أَنْ نُكَلِّمَ النَّاسَ عَلَى قَدْرِ عُقُولِهِمْ»
(আমরা নবীগণকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, যেন আমরা মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা অনুযায়ী কথা বলি।)
এই কথাটি আমাদের শেখায়—শিশুর মানসিক বিকাশ অনুযায়ী ধর্ম শেখাতে হবে। যেমন, “আল্লাহ দয়ালু”—এই ধারণা শিশুকে বোঝাতে চাইলে জটিল ব্যাখ্যা নয়, বরং একটা ছোট গল্প বলা যেতে পারে—যেমন, “আল্লাহ কিভাবে পাখিদের খাবার দেন, বা বৃষ্টি পাঠিয়ে গাছপালাকে বাঁচিয়ে রাখেন।” এমন গল্পে শিশুর মন সহজেই স্পর্শ পায়।
ধীরে ধীরে, আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা
শিশুর মনে ধর্মীয় মূল্যবোধ গেঁথে দিতে সময় লাগে। যেমন কুরআন ধীরে ধীরে নাজিল হয়েছে, তেমনি শিশুর মনেও শিক্ষা ধীরে ধীরে বসাতে হয়। সবকিছু একসাথে শেখানোর চেষ্টা না করে, বয়স ও মানসিক প্রস্তুতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা দিন।
প্রত্যেক শিশুর শেখার ধরন আলাদা। কেউ গল্পে মুগ্ধ হয়, কেউ গান বা কবিতায়, কেউ আবার প্রশ্ন করতে ভালোবাসে। তাই শেখানোর ধরনও হওয়া উচিত নমনীয় ও আকর্ষণীয়। খেলাধুলা, ভূমিকা পালন, গল্প বলা—এসব পদ্ধতিই সবচেয়ে সফল হতে পারে।
কাজের মাধ্যমে ধর্ম শেখানো
শিশুরা কথা নয়, কাজ দেখে শেখে। আপনি যা বলছেন, সেটি যদি আপনার আচরণের সঙ্গে না মেলে, তবে সে বিভ্রান্ত হবে। কিন্তু যদি আপনার জীবনে সেই কথাগুলোর প্রতিফলন থাকে—তাহলে ধর্ম তার কাছে বাস্তব হয়ে ওঠে।
যেমন, আপনি যদি সন্তানকে ইমাম হাসান (আ.)-এর দানশীলতার গল্প বলেন, কিন্তু নিজে কাউকে সাহায্য না করেন, তাহলে সে গল্পে বিশ্বাস পাবে না। কিন্তু আপনি যদি সত্যিই কাউকে সাহায্য করেন, কারও মুখে হাসি ফোটান—তাহলে সে শিখবে যে “ভালো কাজ করা মানেই আল্লাহকে খুশি করা।”
যখন সে ঘরের ভেতরে ভালোবাসা, ধৈর্য আর ক্ষমার পরিবেশ দেখে, তখন তার মনেও ধর্মের বীজ অঙ্কুরিত হয়।
উপসংহার
ধর্ম শেখানো কোনো বক্তৃতা নয়—এটি হৃদয়ের ভাষায় কথা বলার এক শিল্প। শিশুর মনে ঈমানের আলো জ্বালাতে চাইলে, প্রথমে আমাদের নিজেদের জীবনেই সেই আলো জ্বালাতে হবে।
যখন সন্তান দেখে তার বাবা-মা সত্যবাদী, দয়ালু ও নম্র—তখন ধর্ম তার কাছে কোনো নিয়ম নয়, বরং ভালোবাসা ও জীবনের সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।
সূত্র: বিহারুল আনওয়ার, আল্লামা মাজলিসি



