রাসূল (সা.)-এর পথনির্দেশ: কোরআনের জ্ঞান ও হেদায়তের জন্য
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন | প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির,তাসনিম সংবাদ সংস্থা, সাঈদ শিরি: কোরআন হলো এমন একটি পবিত্র গ্রন্থ যা আল্লাহ মানুষদের জন্য পাঠিয়েছেন, যাতে তারা সত্য ও মিথ্যা আলাদা করতে পারে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সুখী জীবন লাভ করতে পারে। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন:
«كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَ لِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ»
(এটি এমন একটি বরকতময় গ্রন্থ যা আমরা তোমার কাছে নাজিল করেছি, যাতে মানুষ আয়াতগুলো বিবেচনা করে এবং বুদ্ধিমানরা শিক্ষা গ্রহণ করে।) — [সুরা সাদ ৩৮:২৯]
কোরআন শুধু নির্দেশমূলক নয়, এটি গভীর অর্থ ও লুকানো রহস্যও ধারণ করে, যা সাধারণ মানুষের প্রাথমিক বোঝার বাইরে।
এ জন্য আল্লাহ এই গ্রন্থের ব্যাখ্যা ও শিক্ষার জন্য শিক্ষক নিযুক্ত করেছেন। নবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর পবিত্র আহলুলবাইত (আ.) হলেন সেই শিক্ষক, যারা সর্বদা সত্য এবং ত্রুটিমুক্ত।
হাদিসে নবী বলেছেন:
«فَإِنَّهُ الشِّفَاءُ النَّافِعُ وَ الدَّوَاءُ الْمُبَارَكُ عِصْمَةٌ لِمَنْ تَمَسَّكَ بِهِ وَ نَجَاةٌ لِمَنِ اتَّبَعَهُ»
(কোরআন হলো উপকারী আরোগ্য, বরকতময় ঔষধ, যার প্রতি স্থির থাকে সে নিরাপদ এবং যে অনুসরণ করে সে রক্ষা পায়।)
তবে এটি অর্জনের শর্ত হলো কোরআন ও তার তাওয়ীল আহলুলবাইতের কাছ থেকে নেওয়া, ব্যক্তিগত মত বা বিতর্কের মাধ্যমে নয়:
«هُوَ الَّذِی یَأْخُذُ الْقُرآنَ وَ تَأْوِیلَهُ عَنَّا أَهْلَ الْبَیْتِ»
(সে হলো যে কোরআন এবং তার তাওয়ীল আমাদের আহলুলবাইত থেকে গ্রহণ করবে।)
নবী সতর্ক করেছেন যে, যে ব্যক্তি কোরআনকে নিজের মত ব্যাখ্যা করবে:
«مَنْ فَسَّرَ الْقُرآنَ بِرَأْیِهِ فَقَدِ افْتَرى عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ»
(যে ব্যক্তি কোরআনকে নিজের মত ব্যাখ্যা করে, সে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা ধার্য করেছে।)
তিনি আরও বলেন, বিদ্যা ছাড়া ব্যাখ্যা দেওয়া বিপজ্জনক, এবং আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর প্রতি স্থির হওয়াই উত্তম পথ:
«فَعَلَیْكَ بِعَلِیِّ بْنِ أَبِی طَالِبٍ إِمَامِ أُمَّتِی وَ خَلِیفَتِی مِنْ بَعْدِی»
(তোমার জন্য আলী ইবনে আবি তালিব, আমার উম্মতের ইমাম ও আমার পরবর্তী খলিফা, তার প্রতি স্থির হও।)
ইমাম সাদিক (আ.) বলেন, কোরআনের আয়াত বোঝার চেষ্টা করার সময় ব্যক্তিগত ও অস্থির ধারণা বিপদ সৃষ্টি করে। কোরআনের সঠিক অর্থ বোঝার জন্য বিশ্বাসী ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। তিনি বলেন:
«وَ إِنَّمَا الْقُرْآنُ أَمْثَالٌ لِقَوْمٍ یَعْلَمُونَ… وَ أَمَّا غَیْرُهُمْ فَمَا أَشَدَّ إِشْكَالَهُ عَلَیْهِمْ وَ أَبْعَدَهُ مِنْ مَذَاهِبِ قُلُوبِهِمْ»
(কোরআন শুধুমাত্র সেই মানুষের জন্য বোঝার যোগ্য, যারা জ্ঞানী ও বিশ্বাসী; অন্যদের জন্য এটি কঠিন এবং হৃদয়ের কাছে দূরে।)
সকল হাদিস ও আয়াতের মূল শিক্ষা হলো ব্যক্তিগত মত অনুযায়ী তাফসীর স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। আহলুলবাইত (আ.) একমাত্র নিযুক্ত তাফসীরকারক, এবং তাদের ব্যাখ্যা কোরআনের সত্যের সমান।
«فَأَمَّا مَنْ قَالَ فِی الْقُرآنِ بِرَأْیِهِ… فَقَدْ جَهِلَ… وَ إِنْ أَخْطَأَ… فَقَدْ تَبَوَّأَ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ»
(যে ব্যক্তি কোরআনকে নিজের মত ব্যাখ্যা করবে… যদি সঠিক হয়, তবুও সে অজ্ঞ; যদি ভুল হয়, তার স্থান আগুনে।)
কোরআন বোঝার জন্য আহলুলবাইতের গুরুত্ব
এই মূলনীতি উম্মতের কর্তব্য স্পষ্ট করে: কোরআন বোঝার ক্ষেত্রে আহলুলবাইত (আ.)-এর কাছে রিভার্স করা, উদ্ধারের শর্ত, কোনো সুপারিশ বা ইচ্ছাকৃত কাজ নয়। ইমাম সাদিক (আ.) এর ভাষায়:
«وَ أَنْ یَسْتَنْطِقُوا… عَنْهُمْ لَا عَنْ أَنْفُسِهِمْ»
(এবং যা প্রয়োজন, তা তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, নিজের অনুমান থেকে নয়।)
এই সব হাদিসের সংযোজন একটি স্থায়ী নীতি নির্দেশ করে: কোরআন আল্লাহর হেদায়তের আলো, কিন্তু এর সঠিক বোঝার আলো কেবল আহলুলবাইত (আ.)-এর মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়। তাঁরা কোরআনের জ্ঞানী, এবং তাদের পথ ছাড়া অন্য কোনো পথ, যদিও বাইরের দিকে কোরআনসম্মত মনে হয়, শেষ পর্যন্ত বিভ্রান্তি ও ভুল পথে নিয়ে যায়।