হযরত আদম-হাওয়া (আ.)-এর জান্নাত থেকে বহিষ্কারের প্রকৃত ঘটনা
রাসেল আহমেদ | প্রকাশঃ ২৬ এপ্রিল ২০২৫
হযরত আদম-হাওয়া (আ.)-এর জান্নাত থেকে বহিষ্কারের প্রকৃত ঘটনা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনের ১৫২ নং পৃষ্ঠায় (সূরা আ’রাফ, আয়াত ১২-২২) শয়তানের আদম (আ.)-কে সিজদা না করা, শয়তানের বেহেশত থেকে বহিষ্কার হওয়া, আদম (আ.)-কে নিষিদ্ধ বৃক্ষের প্রতি প্রলোভিত করা এবং শেষে আদম (আ.)-এর বেহেশত থেকে বহিষ্কার হওয়ার ঘটনা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করেছেন।
নবী করীম (সা.) ইমাম আলী (আ.)-কে বলেছেন,
“হে আলী! সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল-কুরআন।” (তাফসীর আবি আল-ফুতুহ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১৯)
কুরআনের ১৫২ নং পৃষ্ঠায় সূরা আ’রাফের ১২ থেকে ২২ নং আয়াতে শয়তানের আদম (আ.)-কে সিজদা না করার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ শয়তানকে প্রশ্ন করলেন, “তুমি সিজদা করলে না কেন?” এটা ছিল শয়তানের জন্য শেষ সুযোগ – তাওবা করে ফিরে আসার ডাক। কিন্তু শয়তান অহংকার করে বলল, “আমি আগুনে তৈরি, আর সে (আদম) মাটি দিয়ে। আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ!” শয়তানের এই অবাধ্যতার পর আল্লাহ বললেন, “ফেরেশতাদের স্থান হলো আনুগত্য ও বিনয়ের, অহংকার ও অবাধ্যতার নয়। অতএব তুমি বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।” কিন্তু শয়তান বেহেশত থেকে বের হওয়ার পর তাওবা না করে বরং আরও বিদ্রোহ করল। সে তার ইবাদতের দোহাই দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত সময় চাইল। আল্লাহ তাকে এই সময় দিলেন, কিন্তু শুধু তার ইবাদতের কারণে নয়—বরং এটি মানুষের জন্য একটি পরীক্ষাও ছিল।
শয়তান বলল, “আমি আদম ও তার বংশধরদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। আমি তাদের সামনে, পিছনে, ডানে ও বামে থেকে প্রলোভন সৃষ্টি করব, যাতে তারা কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত না হয়।” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা শয়তানকে বের হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বললেন, “যারা তোমার অনুসরণ করবে, তাদের আবাস হবে জাহান্নাম, আর আমি তা (জাহান্নাম) তাদের দিয়ে পূর্ণ করব।” এরপর আল্লাহ আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে বেহেশতে ডেকে বললেন, “এটি তোমাদের আবাসস্থল। এখানে স্বাধীনভাবে বিচরণ করো ও নিয়ামত ভোগ করো, কিন্তু এই গাছের নিকটেও যেও না। যদি তোমরা নিষেধ অমান্য করো, তবে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
শয়তান তখনই আদম (আ.)-কে প্রলোভিত করতে শুরু করল। সে বলল,
“আল্লাহ তোমাদেরকে এই জান্নাতের সুখ ভোগ করতে নিষেধ করেছেন, কেননা এতে রয়েছে ফেরেশতাদের মর্যাদা ও চিরস্থায়ী জীবন!” শয়তান এত কসম খেতে লাগল যে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) তাকে বিশ্বাস করে ফেললেন। তারা মানব বংশ বিস্তারের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু যখনই তারা তা পালন করল, তখনই তাদের জান্নাতী পোশাক উধাও হয়ে গেল। তারা নিজেদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখে লজ্জিত হয়ে গাছের পাতা দিয়ে শরীর ঢাকতে লাগলেন। এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ধ্বনি এল, “আমি কি তোমাদের এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করিনি? আমি কি তোমাদের বলে দিইনি যে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?” এভাবেই শয়তান তার প্রথম প্রচেষ্টাতেই সফল হলো এবং আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) বেহেশত থেকে বহিস্কৃত হলেন।
মিডিয়া মিহির/ধর্ম ও বিশ্বাস