“১৫ই শাবান তথা শবে বরাতের দিন ও রাতের আমল”
১৫ শাবান বরকতময় ও শেষ ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদী (আ.)-এর পবিত্র জন্ম দিবস। ১৫ই শাবান রাত বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলির মধ্যে একটি। এ রাতের ফজিলত প্রায় শবে কদরের রাতের মতই। আহলে বাইত (আ.) ও নিষ্পাপ ইমামগণ এই রাতকে লাইলাতুল কদরের সমকক্ষ বা কদরের নিকটবর্তী রাত বলে উল্লেখ করেছেন এবং এ রাতকে তাকদির (ভাগ্য নির্ধারণ) ও আধ্যাত্মিক রিযিক বণ্টনের ক্ষেত্রে লাইলাতুল কদরের প্রস্তুতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
মাফাতিহুল জিনান গ্রন্থেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। ১৫ শাবানের রাতের তাৎপর্য সম্পর্কে ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইমাম বাকির (আ.)-কে ১৫ শাবান রাতের ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এই রাত লাইলাতুল কদরের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রাত। এই রাতে মহান আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ বান্দাদের উপর বর্ষণ করেন এবং তাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করেন। তোমরা এই রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা কর। এটা সেই রাত যাতে আল্লাহ তাঁর পবিত্র সত্তার শপথ করেছেন যে, কোনো প্রার্থনাকারীকে তাঁর দরবার থেকে খালি হাতে ফেরত দেবেন না, যদি না সে কোনো গুনাহের কাজ চায়। ১৫ শাবানের রাত হল সেই রাত যা আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।”

“১৫ শাবানের রাতের আমলসমূহ”
“প্রথমতঃ
গোসল করা: যা গুনাহসমূহকে হালাকা করে।”
“দ্বিতীয়তঃ
নামাজ, দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করা -যা ইমাম জয়নুল আবিদীন (আ.) করতেন। বর্ণিত হয়েছে: যে ব্যক্তি এই রাতকে প্রার্থনা ও ইবাদতে কাটাবে, তার হৃদয় সেই দিনও মরবে না যেদিন সব হৃদয় মরে যাবে।”
“তৃতীয়তঃ
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জিয়ারত পাঠ করা -যা এই রাতের সর্বোত্তম আমল এবং গুনাহ মাফের কারণ। যে ব্যক্তি চায় যে ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবীর রূহ তার সাথে সাক্ষাৎ করুক, সে যেন এই রাতে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জিয়ারত পাঠ করে। কেউ যদি সম্পূর্ণ যিয়ারত পড়তে না পারে কমপক্ষে যেন নিজ বাড়ির ছাদে উঠে ডানে-বামে তাকায়, অতপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
«السَّلامُ عَلَیْکَ یَا أَباعَبْدِاللّه، السَّلامُ عَلَیْکَ وَرَحْمَةُ اللّه وَبَرَکاتُهُ».
«আস-সালামু আলাইকা ইয়া আবা আবদিল্লাহ, আস-সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু»।”
“চতুর্থঃ
শেখ তুসী থেকে বর্ণিত দোয়া এবং ইমামে জামান (আ.)-এর যিয়ারতের মর্যাদায় রয়েছে।
اللّهُمَّ بِحَقِّ لَیْلَتِنا هذِهِ وَمَوْلُودِها وَحُجَّتِکَ وَمَوْعُودِهَا، الَّتِى قَرَنْتَ إِلى فَضْلِها فَضْلاً، فَتَمَّتْ کَلِمَتُکَ صِدْقاً وَعَدْلاً، لَامُبَدِّلَ لِکَلِماتِکَ، وَلَامُعَقِّبَ لِآیاتِکَ، نُورُکَ الْمُتَأَلِّقُ، وَضِیاؤُکَ الْمُشْرِقُ، وَالْعَلَمُ النُّورُ فِى طَخْیاءِ الدَّیْجُورِ، الْغائِبُ الْمَسْتُورُ جَلَّ مَوْلِدُهُ، وَکَرُمَ مَحْتِدُهُ، وَالْمَلائِکَةُ شُهَّدُهُ، وَاللّهُ ناصِرُهُ وَمُؤَیِّدُهُ، إِذا آنَ مِیعادُهُ، وَالْمَلائِکَةُ أَمْدادُهُ، سَیْفُ اللّهِ الَّذِى لَایَنْبُو، وَنُورُهُ الَّذِى لَایَخْبُو، وَذُوالْحِلْمِ الَّذِى لَایَصْبُو، مَدارُ الدَّهْرِ، وَنَوامِیسُ الْعَصْرِ، وَوُلاةُ الْأَمْرِ، وَالْمُنَزَّلُ عَلَیْهِمْ مَا یَتَنَزَّلُ فِى لَیْلَةِ الْقَدْرِ، وَأَصْحابُ الْحَشْرِ وَالنَّشْرِ، تَراجِمَةُ وَحْیِهِ، وَوُلاةُ أَمْرِهِ وَنَهْیِهِ؛ اللّهُمَّ فَصَلِّ عَلَى خاتِمِهِمْ وَقائِمِهِمُ الْمَسْتُورِ عَنْ عَوالِمِهِمْ. اللّهُمَّ وَأَدْرِکْ بِنا أَیَّامَهُ وَظُهُورَهُ وَقِیامَهُ، وَاجْعَلْنا مِنْ أَنْصارِهِ، وَاقْرِنْ ثارَنا بِثارِهِ، وَاکْتُبْنا فِى أَعْوانِهِ وَخُلَصائِهِ، وَأَحْیِنا فِى دَوْلَتِهِ ناعِمِینَ، وَبِصُحْبَتِهِ غانِمِینَ، وَبِحَقِّهِ قائِمِینَ، وَمِنَ السُّوءِ سالِمِینَ، یَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِینَ، وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعالَمِینَ، وَصَلَواتُهُ عَلَى سَیِّدِنا مُحَمَّدٍ خاتَمِ النَّبِیِّینَ وَالْمُرْسَلِینَ وَعَلَى أَهْلِ بَیْتِهِ الصَّادِقِینَ وَعِتْرَتِهِ النَّاطِقِینَ، وَالْعَنْ جَمِیعَ الظَّالِمِینَ، وَاحْکُمْ بَیْنَنا وَبَیْنَهُمْ یَا أَحْکَمَ الْحاکِمِینَ؛”
“পঞ্চমঃ
শেখ ইসমাইল ইবনে ফজিল -হাশেমী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.) আমাকে এই দোয়া শিখিয়েছেন এবং বলেছেন যে আমি যেন এটি শবে বরাতের রাতে পাঠ করি-
اللّهُمَّ أَنْتَ الْحَىُّ الْقَیُّومُ الْعَلِىُّ الْعَظِیمُ الْخالِقُ الرَّازِقُ الْمُحْیِى الْمُمِیتُ الْبَدِىءُ الْبَدِیعُ، لَکَ الْجَلالُ، وَلَکَ الْفَضْلُ، وَلَکَ الْحَمْدُ، وَلَکَ الْمَنُّ، وَلَکَ الْجُودُ، وَلَکَ الْکَرَمُ، وَلَکَ الْأَمْرُ، وَلَکَ الْمَجْدُ، وَلَکَ الشُّکْرُ، وَحْدَکَ لاشَرِیکَ لَکَ، یَا واحِدُ یَا أَحَدُ یَا صَمَدُ یَا مَنْ لَمْیَلِدْ وَلَمْیُولَدْ وَلَمْیَکُنْ لَهُ کُفُواً أَحَدٌ، صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَاغْفِرْ لِى وَارْحَمْنِى وَاکْفِنِى مَا أَهَمَّنِى وَاقْضِ دَیْنِى، وَ وَسِّعْ عَلَىَّ فِى
۰۲:۱۵ بعدازظهر
رِزْقِى، فَإِنَّکَ فِى هذِهِ اللَّیْلَةِ کُلَّ أَمْرٍ حَکِیمٍ تَفْرُقُ، وَمَنْ تَشاءُ مِنْ خَلْقِکَ تَرْزُقُ، فَارْزُقْنِى وَأَنْتَ خَیْرُ الرَّازِقِینَ، فَإِنَّکَ قُلْتَ وَأَنْتَ خَیْرُ الْقائِلِینَ النَّاطِقِین: (وَ سْئَلُوا اللّهَ مِنْ فَضْلِهِ)فَمِنْ فَضْلِکَ أَسْأَلُ، وَ إِیَّاکَ قَصَدْتُ، وَابْنَنَبِیِّکَ اعْتَمَدْتُ وَلَکَ رَجَوْتُ، فَارْحَمْنِى یَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِین؛”
“ষষ্ঠঃ
রাসূল্লাহ (সা.) এই রাতে নিম্নের দোয়াটি পড়তেন,
اللّهُمَّ اقْسِمْ لَنا مِنْ خَشْیَتِکَ مَا یَحُولُ بَیْنَنا وَبَیْنَ مَعْصِیَتِکَ، وَمِنْ طاعَتِکَ مَا تُبَلِّغُنا بِهِ رِضْوانَکَ، وَمِنَ الْیَقِینِ مَا یَهُونُ عَلَیْنا بِهِ مُصِیباتُ الدُّنْیا . اللّهُمَّ أَمْتِعْنا بِأَسْماعِنا وَأَبْصارِنا وَقُوَّتِنا مَا أَحْیَیْتَنا وَاجْعَلْهُ الْوارِثَ مِنَّا، وَاجْعَلْ ثارَنا عَلَى مَنْ ظَلَمَنا، وَانْصُرْنا عَلَى مَنْ عادانا، وَلَاتَجْعَلْ مُصِیبَتَنا فِى دِینِنا، وَلَاتَجْعَلِ الدُّنْیا أَکْبَرَ هَمِّنا وَلَامَبْلَغَ عِلْمِنا، وَلَاتُسَلِّطْ عَلَیْنا مَنْ لَایَرْحَمُنا، بِرَحْمَتِکَ یَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِینَ؛”
“সপ্তমঃ
যে দরূদ প্রত্যেকদিন (শার’য়ি জোহরের সময়) পাঠ করা হয় সেটি পাঠ করা। দোয়াটি নিম্নে উল্লেখ করা হল,
اللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَآلِمُحَمَّدٍ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ، وَمَوضِعِ الرِّسالَةِ، وَمُخْتَلَفِ الْمَلائِکَةِ…
“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন শাজারাতিন নুবুওয়্যাতি, ওয়া মাওদিআর রিসালাতি, ওয়া মুখতালাফিল মালাইকাতি…”
“অষ্টমঃ
দোয়ায়ে কুমাইল পড়ারও এই রাতে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।”

“১৫ ই শাবানের দিনের আমলসমূহ”
“১৫ শাবান দিনে ইমাম মাহদী (আ.)-এর জিয়ারত পাঠ করা মুস্তাহাব। যে কোনো সময়, স্থান ও অবস্থানের চেয়ে এই দিনে তাঁর (ইমাম মাহদি) আর্বিভাবের জন্য দোয়া করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।”
মিডিয়া মিহির/ধর্মও বিশ্বাস/মুহাম্মাদ রুস্তম আলী