কেন আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) সরাসরি ইসলামী বিপ্লবে অংশ নেননি?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৫ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির:ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী স্মৃতিচারণে আল্লামা তাবাতাবায়ী-এর সাথে পিতার সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বিশিষ্ট আলেম বিপ্লবী আন্দোলনের প্রভাব সম্পর্কে হতাশ ছিলেন, কিন্তু এর অর্থ কখনো ইসলামের শাসন বা প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে থাকা নয়। বরং, তার ছাত্রদের অনেকেই বিপ্লবের মূল ভুমিকায় ছিলেন।
আল্লামা তাবাতাবায়ী-এর দর্শন ও হতাশা
ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেন: দুইবারই আমরা পিতাকে কোমে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন আল্লামা তাবাতাবায়ী দেখা করতে এসেছিলেন। আমাদেরও মনে আছে আমরা ওনাদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম। এক সাক্ষাতের সময় আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী আল্লামা তাবাতাবায়ীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন:
আমরা বিপ্লব ও সংগ্রামের বিষয়গুলির অনেক কিছু আপনাকেই থেকে শিখেছি—বিশেষ করে ‘তাফসীর আল-মিজান’-থেকে। আপনি কেন নিজে এই পথে সরাসরি অংশ নেননি? আল্লামা তাবাতাবায়ী-এর সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিল: কোনও লাভ নেই।
তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: আমাদের—অর্থাৎ আলেমদের—একটি বড় দোষ আগে সংঘটিত হয়েছে যা এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তবে এখন সময় গেছে, আর কোনো কার্যকর উপায় নেই। হ্যাঁ, সংগ্রাম তখন অবশ্যক ও কার্যকর ছিল। আমরা আলেমরা এক সময়ে প্রভাব ফেলতে পারতাম। কিন্তু সংবিধানিক সময় ও সভ্যতার প্রাথমিক প্রবেশকালে একটি বড় দোষ—যার কথা আমি বলেছি—ঘটিয়েছে। সময় নষ্ট হয়েছে, আর এখন কার্যকর কোনো ফল নেই।
আলেম হিসেবে তার বিশ্লেষণ
ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বলেন, আল্লামা তাবাতাবায়ী ছিলেন একজন দূরদর্শী ও জ্ঞানী ব্যক্তি, যিনি সমাজের বাস্তবতা ও সামাজিক বিষয়গুলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত ছিলেন। তাঁর এই মূল্যায়ন দেখায় যে হতাশা ছিল কার্যকরী প্রভাবের অনুপস্থিতি সম্পর্কে, না যে তিনি ধর্ম বা ন্যায়ের পথে অদক্ষ ছিলেন। তিনি ছিলেন নৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে বহু গুণী, এমনকি যারা সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদের থেকেও অনেক বেশি।
ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী নিশ্চিত ভাবে বলেন: যদি তারা জানত যে একদিন এই বিপ্লব হবে, তারা অবশ্যই সংগ্রামে অংশ নিত। তিনি হতাশ ছিলেন, কিন্তু বিরোধী নন।
ছাত্রদের বিপ্লবী ভূমিকা
আল্লামা তাবাতাবায়ী-এর ছাত্ররা ইসলামী বিপ্লবের মূল ভুমিকায় ছিলেন—চাই তা হোক পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে বা সংবিধান প্রণয়নে, অথবা বিখ্যাত শহীদ হিসেবে। উল্লেখযোগ্য ছাত্র ও শহীদরা হলেন:
১.শহীদ মোতাহারী (রহ.)
২.শহীদ বেহেশতী (রহ.)
৩.শহীদ কুদ্দুসি (রহ.)
৪.শহীদ শেখ আলী হাদারী নাহবান্দী (রহ.)
এছাড়াও অন্যান্য বিশিষ্ট শহীদরা তার ছাত্র ছিলেন।
ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী স্পষ্টভাবে বলেছেন: কেউ কল্পনা করতে পারবে না যে আল্লামা তাবাতাবায়ী ইসলামের শাসন বা ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিলেন। একইভাবে মরহুম আল্লামা মিলানি—তিনি ও চিন্তাশীল, কিন্তু হতাশ ছিলেন। বিপ্লবের অগ্রগতির মূল কারণ ছিল ইমামের জনগণের প্রতি আশা ও বিশ্বাস, যে কাজ অবশ্যই সফল হবে। আল্লামা তাবাতাবায়ী-এর মধ্যে সেই আশা ছিল না।
উপসংহার
আল্লামা তাবাতাবায়ী-এর দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শেখায় যে জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা এবং বিপ্লবের প্রতি সমর্থন কখনোই হারানো হয় না, যদিও সরাসরি অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তার ছাত্ররা নিজেরাই ইসলামী বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উদ্ভাসিত হয়েছে।
সূত্র:
রাওয়ায়েত আকা (আয়াতুল্লাহ আল-উজমা খামেনেয়ী-এর পিতার জীবনের স্মৃতিকথা), প্রকাশনা: ইসলামী বিপ্লব, পৃষ্ঠা ৬৯–৭১



