ইতিহাসজীবনযাপনবিশ্ব

তুরস্ক কি ইসরাইলি সম্প্রসারণবাদের পরবর্তী লক্ষ্য?

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

তুরস্ক কি ইসরাইলি সম্প্রসারণবাদের পরবর্তী লক্ষ্য?

 

মিডিয়া মিহির: মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের “গ্রেটার ইসরাইল” স্বপ্ন কোনো নতুন বিষয় নয়। গত কয়েক দশক ধরে জায়নিস্ট শাসন তার আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের যে নীতি অনুসরণ করছে, তা আজও অব্যাহত আছে। কিন্তু আজকের বাস্তবতা ইঙ্গিত দিচ্ছে—এই সম্প্রসারণবাদী নীতির পরবর্তী প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তুরস্ক।

কেবল হামাস নয়, বড় খেলার অংশ তুরস্ক

প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে, ইসরাইল-তুরস্ক সম্পর্কের উত্তেজনা মূলত হামাস ও তার নেতাদের তুরস্কে উপস্থিতি ঘিরে। কিন্তু বিষয়টি এর চেয়েও গভীর। ইসরাইলের লক্ষ্য কেবল হামাসকে দুর্বল করা নয়; তাদের বড় পরিকল্পনা সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এবং অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্য নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা।

তুরস্ক এই সমীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আঙ্কারা সিরিয়ায় সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রাখতে চায়, একদিকে নিজের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য, অন্যদিকে অঞ্চলে প্রভাব ধরে রাখার জন্য। এই অবস্থান সরাসরি ইসরাইলের আঞ্চলিক পরিকল্পনার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উন্মুক্ত মুখোমুখি সংঘাতের সম্ভাবনা

আজ আমরা দেখছি তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে প্রকাশ্য উত্তেজনা। ইসরাইল সিরিয়া বিভক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে—এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। বিপরীতে তুরস্ক চায় কৌশলগত অঞ্চলগুলোতে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং তার মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করতে। এই বিরোধ ভবিষ্যতে দুই পক্ষকে সরাসরি সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

জনমত: তুরস্কের বড় শক্তি

তুরস্কের সাধারণ মানুষও ইসরাইলের প্রতি স্পষ্টতই বিরূপ মনোভাব পোষণ করে। এ কারণে আঙ্কারার জন্য ইসরাইলের সীমান্তবর্তী উপস্থিতি মেনে নেওয়া রাজনৈতিকভাবে প্রায় অসম্ভব। তাই এই দ্বন্দ্বকে কেবল হামাস বা ফিলিস্তিন ইস্যুর সঙ্গে সীমাবদ্ধ করে দেখা একেবারেই ভুল হবে।

আঞ্চলিক ভবিষ্যৎ এবং ঝুঁকি

তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থান এবং আঞ্চলিক ভূমিকা ইসরাইলের বৃহত্তর সম্প্রসারণ পরিকল্পনার পথে বড় অন্তরায়। লেখক হিসেবে আমার বিশ্বাস, তুরস্ককে চাপে ফেলা বা সরাসরি লক্ষ্যবস্তু বানানো ইসরাইলের জন্য কৌশলগত পরবর্তী ধাপ হতে পারে।

এটি শুধু তুরস্ক-ইসরাইল দ্বন্দ্ব নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতির ভবিষ্যৎ পুনর্লিখনের সম্ভাবনা বহন করে। সিরিয়ার ভাগ্য, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রাম, এবং ইরানের আঞ্চলিক ভূমিকা—সবই এই নতুন বাস্তবতায় প্রভাবিত হবে।

তুরস্ক আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক, অন্যদিকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্বাধীন নীতি—এই দুইয়ের সমন্বয় করা সহজ নয়। কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার: যদি ইসরাইলের সম্প্রসারণবাদকে থামানো না হয়, তবে এর প্রভাব নিকট ভবিষ্যতে তুরস্কের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button