শিক্ষা ও গণমাধ্যম: ইসলামী বিশ্বে জায়োনিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কৌশল
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. সাইয়্যেদ মাহদী আলীজাদে মুসাভি ও পাকিস্তানের শীর্ষ আলেম হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ আমিন শহিদীর বৈঠকে শিক্ষা, গণমাধ্যম এবং মুসলিম ঐক্যের গুরুত্বের ওপর জোর
মিডিয়া মিহির: পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম এবং উম্মাহ-এ ওয়াহিদাহ পার্টির সভাপতি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মদ আমিন শহিদী সম্প্রতি আহসান গবেষণা ও সমন্বিত শিক্ষা ইনস্টিটিউটে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাংলাদেশ প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন ড. সাইয়্যেদ মাহদী আলীজাদে মুসাভির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ইসলামী ধারাগুলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন, যা ইসলামী প্রতিরোধ ফ্রন্টকে আরও শক্তিশালী করছে।
পাঠ্যবইয়ে জায়োনিবাদ-বিরোধী শিক্ষা: পাকিস্তানের উদাহরণ
আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থায় জায়োনিবাদ-বিরোধী পাঠ অন্তর্ভুক্তির অভিজ্ঞতা।
ড. আলীজাদে মুসাভি জানান, পাকিস্তান প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে জায়োনিবাদ ও তার বিপদের বিষয়ে পাঠ অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী চেতনা তৈরি করেছে।

হুজ্জাতুল ইসলাম শহিদী বলেন, “এই অভিজ্ঞতা অনুসরণযোগ্য। আফগানিস্তান ও বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশেও এটি বাস্তবায়ন করা জরুরি।”
টেকসই সংস্কৃতির প্রয়োজন
বৈঠকে দুই পক্ষ একমত হন যে ইসরায়েলবিরোধী লড়াই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না।
“এটি হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার অংশ। শিক্ষা ও গণমাধ্যম হলো এই লড়াইয়ের পরস্পর-পরিপূরক দুটি ডানা।”
বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনমত তৈরি করলে তরুণ প্রজন্মকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।
মুসলিম ঐক্য ও মতপার্থক্যের ব্যবস্থাপনা
হুজ্জাতুল ইসলাম শহিদী বলেন, “গত কয়েক বছরের তুলনায় আরব দেশগুলোর প্রতিরোধ ফ্রন্টের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সম্ভাবনা অনেক কমেছে। তবে অ্যান্টি-শিয়া গোষ্ঠীগুলো এখনও বড় হুমকি, যাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বিচক্ষণতার সঙ্গে।”
তার মতে, শত্রু ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন উসকে দিয়ে মুসলিম বিশ্বের মনোযোগ ইসরায়েল থেকে সরাতে চায়। তাই মুসলিম ঐক্য রক্ষায় এবং জায়োনিবাদের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ে সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীলতা দক্ষভাবে পরিচালনা করা জরুরি।
দেওবন্দি আলেমদের সমর্থন
হুজ্জাতুল ইসলাম শহিদী জানান, পাকিস্তানের দেওবন্দি নেতারা খোলাখুলি ইরান ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
- মাওলানা ফজলুর রহমান ও আবদুর রউফ হায়দারি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন যে তারা ইরান ও প্রতিরোধের পাশে থাকবেন।
- প্রভাবশালী খতিব তাহির জামিল স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি যদি ইরানের পক্ষে না থাকি, তবে কি ইসরায়েলের পক্ষে থাকব?”
এমনকি পূর্বে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত অনেক ব্যক্তিত্বও প্রকাশ্যে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম শহিদীর মতে, “দেওবন্দি ধারার বিশাল অনুসারীসমাজ ধীরে ধীরে প্রতিরোধের গোষ্ঠীর দিকে ঝুঁকছে।”
বেরলভি ধারার সম্ভাবনা
হুজ্জাতুল ইসলাম শহিদী বলেন, “পাকিস্তানের বেরলভি ধারার কোটি কোটি অনুসারী ও বিস্তৃত সামাজিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা ফিলিস্তিন প্রশ্নে স্পষ্টভাবে জায়োনিবাদ-বিরোধী অবস্থান নিয়েছে।”
তার মতে, মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এই ধারাকে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের সামাজিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে কাজে লাগানো সম্ভব।
বর্তমান আঞ্চলিক পরিস্থিতি ইসলামী প্রতিরোধকে সম্প্রসারণের জন্য এক অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা, আফগানিস্তানের জনশক্তি ও বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্ভাবনা একত্রিত হলে একটি বৃহত্তর প্রতিরোধ ফ্রন্ট গড়ে তোলা সম্ভব হবে—শর্ত হলো শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম সমন্বিতভাবে কাজ করবে।