কুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণহাদিস

জীবন সম্পর্কিত আয়াত | পরকালের যাত্রায় সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করেছেন কি ?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: যখন আমরা দুনিয়ার ভ্রমণের জন্য সঙ্গী নির্বাচন করতে যত্নবান হই, তেমনি পরকালের অনাবর্তী যাত্রায়ও উদাসীন থাকা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই একজন বিশ্বস্ত, উপযুক্ত এবং চিরস্থায়ী সহযাত্রী খুঁজে নিতে হবে।”

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন :

مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَمَنْ جَاءَ بِالسَّیِّئَةِ فَلَا یُجْزَیٰ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا یُظْلَمُونَ।
(সূরা আন‘আম, আয়াত ১৬০)

অর্থাৎ:
“যে ব্যক্তি কোনো সৎ কাজ সম্পাদন করে, তার জন্য তার দশ গুণ প্রতিদান রয়েছে, আর যারা খারাফ কাজ সম্পাদন করে, তাদের শুধু সমপরিমাণে বিচার করা হবে এবং তাদের প্রতি কোনো অন্যায় হবে না।”

যখন আমরা কোনো যাত্রার আগে সঙ্গী নির্বাচন করি, আমরা সর্বোচ্চ যত্ন নিই যেন একজন যোগ্য সহযাত্রী বেছে নেওয়া যায়—একজন যিনি বোঝা নয়, বরং সহযাত্রী হবে।

আমরা সকলেই জানি, আমাদের সামনে একটি চিরস্থায়ী যাত্রা অপেক্ষা করছে—একটি যাত্রা, যার কোনো ফিরে আসার সুযোগ নেই। যারা দুনিয়ায় আল্লাহর পথে চলেননি, কিয়ামতের দিনে তারা অনুশোচনার সঙ্গে বলবে:”

فَلَوْ أَنَّ لَنَا کَرَّةً فَنَکُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِینَ.

সূরা শুয়ারা , আয়াত ১০২. 

অর্থাৎ:
হায় আফছোছ! আমাদের জীবনে আরেকবার সুযোগ হতো, যেন আমরা মুমিনদের দলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারতাম।

সুতরাং, যেমন আমরা দুনিয়ার ভ্রমণের সঙ্গী নির্বাচন করতে যত্নবান হই, তেমনি পরকালের অনাবর্তী যাত্রায়ও উদাসীন থাকা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই একজন বিশ্বস্ত, উপযুক্ত এবং চিরস্থায়ী সহযাত্রী খুঁজে নিতে হবে।

আমাদের প্রকৃত চিরস্থায়ী সঙ্গী হল আমাদের আমল—যিনি কবরেও, বারযাখেও, এবং কিয়ামতের দিনও আমাদের সহায়ক হতে পারে, কিংবা অবহেলা করলে ভারী বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ইমাম আমিরুল মুমিনিন (আঃ) এই বিষয়ে হাদিসে বলেন:

إِنَّ اِبْنَ آدَمَ إِذَا کَانَ فِی آخِرِ یَوْمٍ مِنْ أَیَّامِ اَلدُّنْیَا وَ أَوَّلِ یَوْمٍ مِنْ أَیَّامِ اَلْآخِرَةِ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ وَ وُلْدُهُ وَ عَمَلُهُ فَیَلْتَفِتُ إِلَی مَالِهِ فَیَقُولُ وَ اَللَّهِ إِنِّی کُنْتُ عَلَیْکَ حَرِیصاً شَحِیحاً فَمَا لِی عِنْدَکَ فَیَقُولُ خُذْ مِنِّی کَفَنَکَ قَالَ فَیَلْتَفِتُ إِلَی وُلْدِهِ فَیَقُولُ وَ اَللَّهِ إِنِّی کُنْتُ لَکُمْ مُحِبّاً وَ إِنِّی کُنْتُ عَلَیْکُمْ مُحَامِیاً فَمَا ذَا عِنْدَکُمْ فَیَقُولُونَ نُؤَدِّیکَ إِلَی حُفْرَتِکَ نُوَارِیکَ فِیهَا قَالَ فَیَلْتَفِتُ إِلَی عَمَلِهِ فَیَقُولُ وَ اَللَّهِ إِنِّی کُنْتُ فِیکَ لَزَاهِداً وَ إِنْ کُنْتَ لَثَقِیلاً فَیَقُولُ أَنَا قَرِینُکَ فِی قَبْرِکَ وَ یَوْمَ نَشْرِکَ حَتَّی أُعْرَضَ أَنَا وَ أَنْتَ عَلَی رَبِّکَ.
(ওসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১০৫)

অর্থাৎ:
মানুষ যখন দুনিয়ার শেষ দিন ও পরকাল বা মৃত্যুতে প্রথম দিন পৌঁছায়, তখন তার সম্পদ, সন্তান ও আমল তার সামনে উপস্থিত হয়।

১.সে প্রথম তার সম্পদের দিকে তাকায় ও বলে: “আল্লাহর শপথ! আমি তোর প্রতি লোভী ও কৃপণ ছিলাম, এখন তোর কাছ থেকে আমার কী লাভ?”

২.সম্পদ বলে: “আমার থেকে তুই কাফনের পরিমাণ নাও।”

৩.এরপর সে তার সন্তানের দিকে তাকায় ও বলে: “আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের ভালোবেসেছি, তোমাদের রক্ষা করেছি। এখন তোমরা কী দিবে?”

৪.সন্তানরা বলে: “আমরা শুধু তোমার কবর পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আছি এবং তোমার কবর ঢেকে দিচ্ছি।”

৫.এরপর সে তার আমলের দিকে তাকায় এবং বলে: “আল্লাহর শপথ! আমি তোমার পথে পরিহারী ছিলাম, যদিও তা আমার কাছে ভারী ছিল। এখন তোমার কাছ থেকে কী লাভ?”

৫.আমল বলে: “আমি কবরেও, কিয়ামতের দিনও তোমার সঙ্গী। যতক্ষণ আমরা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হব, আমি এবং তুমি একসাথে থাকব।”

সুতরাং, উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন না করলে চিরকালীন অনুশোচনা এবং পলায়নহীন দুঃখ অনিবার্য।

আরও পড়ুন

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button