নিজেকে ও আপনজনদের কীভাবে জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ রাখব?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির ধর্ম নয়; বরং এটি পরিবার ও সমাজের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্বের ওপরও গভীর গুরুত্ব দেয়।
নিজেকে যেমন জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা জরুরি, তেমনি নিজের পরিবার ও নিকটজনদেরও ঐ একই আগুন থেকে বাঁচাতে তাগিদ দিয়েছে ইসলাম।
কুরআনের নির্দেশনা: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
(হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে আগুন থেকে রক্ষা করো।) সূরা আত-তাহরিম, আয়াত ৬
ব্যাখ্যা: প্রায়ই দেখা যায়— কোনো পিতা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন, কিন্তু তার স্ত্রী বা সন্তান নামাজ না পড়লে তাতে তিনি উদাসীন থাকেন। আবার কোনো মা হিজাব রক্ষা করেন, অথচ তাঁর কন্যা অনাবৃত চলাফেরা করলে তাতেও তিনি কিছু বলেন না। এই অবস্থা কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার পরিপন্থী। ইসলাম স্পষ্টভাবে শিক্ষা দিয়েছে যে, একজন মানুষ শুধু নিজের ধার্মিকতার দায় মিটিয়ে নীরব থাকতে পারে না; বরং তার দায়িত্ব তার পরিবার, সন্তান ও নিকটজনদেরও ঈমান ও নৈতিকতার পথে আহ্বান করা।
প্রশ্ন: কীভাবে আমরা আমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করব?
আর যদি তারা আমাদের কথা না শোনে, তখন কী করব?
ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এর কাছে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন:
هَذِهِ نَفْسِی أَقِیهَا فَکَیْفَ أَقِی أَهْلِی؟
আমি আমার আত্মাকে তো রক্ষা করতে পারি, কিন্তু আমার পরিবারকে কীভাবে রক্ষা করব? ইমাম (আ.) উত্তর দিলেন—
تَأْمُرُهُمْ بِمَا أَمَرَهُمُ اللَّهُ بِهِ وَ تَنْهَاهُمْ عَمَّا نَهَاهُمُ اللَّهُ عَنْهُ.
তুমি তাদের সেইসব কাজের নির্দেশ দাও, যা আল্লাহ আদেশ করেছেন; এবং যেসব কাজ থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন, তাদের তা থেকে বিরত রাখো। তারপর ইমাম (আ.) বলেন—
فَإِنْ أَطَاعُوكَ كُنْتَ وَقَيْتَهُمْ وَ إِنْ عَصَوْكَ فَقَدْ قَضَيْتَ مَا عَلَيْكَ.
যদি তারা তোমার কথা মেনে চলে, তবে তুমি তাদের রক্ষা করেছ; আর যদি না মেনে চলে, তবে তুমি তোমার দায়িত্ব পূর্ণ করেছ। (আল-কাফি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬২)
নবী করিম ﷺ -এর বাণী: আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে— এক মুসলমান ব্যক্তি কাঁদতে কাঁদতে নবীজির ﷺ কাছে এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি নিজের দায়িত্বও ঠিকভাবে পালন করতে পারি না, অথচ আমার পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্বও আমার ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে! নবী ﷺ উত্তরে বললেন:
حَسْبُكَ أَنْ تَأْمُرَهُمْ بِمَا تَأْمُرُ بِهِ نَفْسَكَ وَ تَنْهَاهُمْ عَمَّا تَنْهَى عَنْهُ نَفْسَكَ.
তুমি তোমার আত্মাকে যেমন ভালো কাজের নির্দেশ দাও, তেমনি তাদেরও দাও;
আর যেমন নিজেকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখো, তেমনি তাদেরও নিষেধ করো এতটুকুই তোমার জন্য যথেষ্ট। (আল-কাফি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৬২)
মূল শিক্ষা:ইসলাম আমাদের শেখায় — নিজের ন্যায়পরায়ণতা কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখো না। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আধ্যাত্মিক অবস্থার প্রতি যত্নবান হও। তাদের ঈমান, নামাজ, হিজাব, সততা ও নৈতিকতার বিষয়ে উদাসীন থেকো না। কারণ, কুরআনের ভাষায়, নিজেকে রক্ষা করা এবং পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল হওয়া — এ দুটোই ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
আমরা পরিবারের নেতা হই বা সদস্য— প্রত্যেকের কর্তব্য হলো স্মরণ করানো, উপদেশ দেওয়া, এবং নিজের আমল দিয়ে উদাহরণ স্থাপন করা। যদি তারা সাড়া দেয়, তবে আল্লাহর কৃপায় তুমি সফল। আর যদি তারা না-ও শোনে, তবু তুমি দায়িত্ব পালন করেছ — এটাই আল্লাহর কাছে গৃহীত কাজ।



