ইসরায়েলের “সিলিকন ভ্যালি” বেকারত্বের বেড়াজালে
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ইসরায়েলের “সিলিকন ভ্যালি” বেকারত্বের বেড়াজালে; অর্থনৈতিক ধ্বসের আশংকা বিশেষজ্ঞদের
মিডিয়া মিহির: গাজা যুদ্ধের প্রভাব এখনও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রযুক্তিখাত—যা “ইসরায়েলি সিলিকন ভ্যালি” বলে অভিহিত—সেখানে বেকারত্ব উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফার্স নিউজ এজেন্সির অর্থনৈতিক বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তাওব রিসার্চ সেন্টার” সম্প্রতি হাই-টেক খাতে বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ার সংকটের উপর বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এই খাতে বেকারত্ব বৃদ্ধির মূল কারণ।
হাই-টেক খাতে চাকরির সংকট
তাওব সেন্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সাল থেকে হাই-টেক খাতে চাকরির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বিশেষ করে তরুণ ও নবাগত কর্মীরা “চাকরির সুযোগ কমে যাওয়া” নামে এক বড় সংকটের মুখোমুখি। এই খাত ইসরায়েলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলেও, এখানে বেকারত্বের হার সমগ্র অর্থনীতির গড় হারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, মানবশক্তিকে AI ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার দ্বারা প্রতিস্থাপন চালিয়ে গেলে, যদি যথাযথ নীতি গ্রহণ ও সংস্কার করা না হয়, তবে সংকট আরও গভীর হতে পারে এবং ইসরায়েলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
লিঙ্গ ও আঞ্চলিক বৈষম্য
রিপোর্টে হাই-টেক খাতে লিঙ্গ ও আঞ্চলিক বৈষম্যও তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অনিয়ন্ত্রিত ইহুদি মহিলাদের মাত্র ১২% এই খাতে কাজ করছেন, যেখানে পুরুষদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। হারেদি সম্প্রদায় এবং ফিলিস্তিনি আরবদের মধ্যে হাই-টেক খাতে কর্মসংস্থানের হার যথাক্রমে ১০% এবং ৫% এর কম।
ভৌগোলিকভাবে, উত্তর ইসরায়েল—বিশেষ করে তিবেরিয়াস ও সাফেদ—এ চাকরির সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, আর মধ্যাঞ্চলীয় শহর যেমন তেল আবিব ও জেরুজালেমে সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। তেল আবিব এখনও দেশের প্রধান প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।
“ইসরায়েলি সিলিকন ভ্যালি”
ইসরায়েলের হাই-টেক খাতকে “সিলিকন ভ্যালি” বলা হয় কারণ দেশটি সাইবার সিকিউরিটি, AI এবং স্টার্টআপ শিল্পে বিশেষভাবে মনোনিবেশ করে তেল আবিব অঞ্চলে শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে। এই খাত দেশের অর্থনীতি ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
AI ও স্বয়ংক্রিয়তার প্রভাব
গবেষক প্রফেসর গিল এপস্টাইন উল্লেখ করেছেন, হাই-টেক খাতে AI ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সংমিশ্রণ বাজার কাঠামোকে পরিবর্তিত করেছে এবং সাধারণ চাকরির সংখ্যা কমিয়েছে। পাশাপাশি, বেতন বৃদ্ধি কেবল প্রযুক্তিগত ও উচ্চ প্রশিক্ষিত পেশায় দেখা যাচ্ছে।
তাওব সেন্টার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে, AI ব্যবহারের সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা সামাজিক ও আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে। তা না হলে হাই-টেক খাত, যা দেশের মোট উৎপাদনের ২৫% এবং রপ্তানির অর্ধেকের বেশি তৈরি করে, গভীর সংকটে পড়বে।
ভবিষ্যতের প্রভাব
যুদ্ধ এবং হাই-টেক খাতে অতিরিক্ত নির্ভরতা ইসরায়েলের অর্থনীতিকে কাঠামোগত সমস্যার মুখোমুখি করছে। “Israel Innovation Authority”-এর তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৮,৩০০ হাই-টেক কর্মী দেশ ত্যাগ করেছেন, যা মোট কর্মীর ২.১%। একই সময়ে হাই-টেক খাতে মোট কর্মীসংখ্যা ৩৯৫,০০০ থেকে কমে ৩৯০,০০০ হয়েছে।
সেনাবাহিনীতে রিজার্ভ কর্মীদের নিয়োগের কারণে উৎপাদনশ্রেণী ও প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা কমেছে, যার ফলে হাই-টেক খাতে কর্মীদের অনুপস্থিতি বেড়েছে। এই সকল কারণ—যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, এবং বিনিয়োগ হ্রাস—হাই-টেক খাতকে বেকারত্ব, কর্মী হ্রাস এবং ধীরগতি বৃদ্ধির মুখোমুখি করছে।