আমেরিকার সবুজ সংকেতে গাজা শহরে ইসরাইলের স্থল হামলা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি শাসনব্যবস্থার গণহত্যামূলক যুদ্ধের ৭১১তম দিনে দখলদারদের বর্বরোচিত হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং এর পাশাপাশি তারা গাজা শহরে ব্যাপক স্থল আক্রমণ শুরু করেছে। গতরাতে গাজার মানুষ ইসরাইলি বাহিনীর ভয়াবহ বোমাবর্ষণের মধ্যেই রাত কাটিয়েছে। ভোর হবার আগেই বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন বা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক গাজায় স্থল দখল অনুমোদনের পর থেকে দখলদারদের হামলা আরো তীব্র হয়েছে। দখলদার বাহিনীর যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং আর্টিলারি গাজার বিভিন্ন অঞ্চল যেমন—আল-জাহরা স্কুল, আল-দারাজ এলাকার বাড়িঘর, নুসিরাত শিবিরের উত্তরাংশ, কেন্দ্রীয় এলাকার শেখ রিজওয়ান, পশ্চিমের আশ-শাতি শিবির, দক্ষিণের তেল হাওয়া, মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ শহরের সুক স্ট্রিট, দক্ষিণ গাজার মাগরিবি অঞ্চলের সাবরা পাড়া, আল-শাওয়া আল-দারাজ স্কয়ার, উত্তর গাজার আল-আমন আল-আম শাখা, মধ্যাঞ্চলের আল-বুরেইজ শিবিরসহ বহু স্থানে হামলা চালিয়েছে। গাজার আল-শাওয়া স্কয়ারের একটি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে আরও ৩০ জন এখনো চাপা পড়ে আছে। খিদরিয়া এলাকায় বোমাবর্ষণে অন্তত চারজন শহীদ হয়েছেন। উত্তর গাজার আল-আমন আল-আম এলাকায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আটজন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তবে আরও ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় মুক্তি ফ্রন্ট, ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের উদ্ধত মন্তব্যের জবাবে বলেছে: “গাজা মার্কিন অপরাধী ক্ষেপণাস্ত্রের আগুনে জ্বলছে, কিন্তু আমাদের জনগণ তাদের প্রতিরোধ ও অটলতার মাধ্যমে শত্রুর ভ্রান্ত কল্পনাকে আগুনে ভস্ম করবে।”
রয়টার্সের দাবি: ইসরাইলি সেনারা গাজা শহরে প্রবেশ করেছে
রয়টার্স এক ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছে যে এই শাসনের পদাতিক বাহিনী গাজার ভেতরে প্রবেশ করছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিবৃতি
ইসরাইলি সেনারা ঘোষণা করেছে যে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে “গিদিওনের রথ” নামক অভিযানের পরবর্তী ধাপ শুরু করেছে এবং দুইটি সেনাদল গাজার কেন্দ্রের দিকে হামলা চালাচ্ছে। তাদের দাবি, ১৬২ ও ৯৮ নম্বর ডিভিশন বর্তমানে গাজার চারপাশে রয়েছে এবং শিগগিরই ৩৬ নম্বর ব্রিগেড তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে শহরটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে।
গাজা শহরে ব্যাপক বোমাবর্ষণ
ইসরাইলি বাহিনী মুহূর্ত আগেই গাজা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বিমান ও আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে।
ইসরাইলি সেনাদের লিফলেট বিতরণ
ইসরাইলি টেলিভিশন চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, সেনারা গাজার আকাশে লিফলেট ছড়িয়েছে এবং বাসিন্দাদের দ্রুত শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছে।
বৃহৎ হামলার ঘোষণা
ইসরাইলি সেনাবাহিনী রেডিও জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী গাজার সাবরা, দারাজ, শেখ রিজওয়ান, আশ-শাতি শরণার্থী শিবির, তেল হাওয়া ও অন্যান্য বহু স্থানে হামলা চালাচ্ছে।
নেতানিয়াহুর দাবি
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইয়েদিওথ আহারনথকে বলেছেন: “আমরা গাজায় শক্তিশালী অভিযান শুরু করেছি।” সেনাবাহিনীও দাবি করেছে যে তারা হামাসের বহু অবকাঠামো ধ্বংস করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর মন্তব্য
ইসরাইল সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন: “গাজার বিষয়ে একটি সীমিত সময় আছে। হামাসকে পরাজিত করার পর গাজা পুনর্গঠনের বিষয়ে কথা বলা হবে। হামাসের উপস্থিতিতে গাজার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।”
লিবারম্যানের সমালোচনা
ইসরাইলের সাবেক যুদ্ধমন্ত্রী ও “ইসরাইল বেইতেনু” দলের প্রধান লিবারম্যান বলেছেন: নেতানিয়াহু স্বীকার করেছেন যে তিনি ক্ষমতায় থাকার জন্য বন্দিদের, কৌশলগত সম্পর্ক ও অর্থনীতিকে বলি দিতে প্রস্তুত।
হেলিকপ্টার হামলা
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি হেলিকপ্টার দক্ষিণ-পশ্চিম গাজার তেল হাওয়া এলাকায় বাড়িঘর ও সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে।
৪১ ফিলিস্তিনির শাহাদাত
চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪১ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, যার মধ্যে ৩৭ জন গাজা শহরের বাসিন্দা।
জাতিসংঘ তদন্ত কমিটি: ইসরাইল গণহত্যা করছে
জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা করছে। কমিটি বলেছে, ইসরাইলি কর্মকর্তাদের বক্তব্য প্রমাণ করে যে তারা গণহত্যার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আকসিওসের প্রতিবেদন: স্থল হামলা শুরু
আকসিওস জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা সোমবার গাজা শহরে স্থল হামলা শুরু করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন এই হামলায় সবুজ সংকেত দিয়েছে। রুবিও নেতানিয়াহুকে বলেছেন, “আমরা স্থল হামলাকে সমর্থন করি, তবে দ্রুত শেষ করা দরকার।”
একজন মার্কিন কর্মকর্তা আকসিওসকে জানিয়েছেন: “এটি ট্রাম্পের যুদ্ধ নয়, বরং নেতানিয়াহুর যুদ্ধ। ভবিষ্যতে যা ঘটবে তার দায়িত্ব নেতানিয়াহুর উপরই বর্তাবে।”