দ্বীন পরিপর্ণ হয়ে যাওয়ার পর উদভূত শিয়ারা কিভাবে নিজেদেরকে সঠিক মুসলিম দাবী করে?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: শিয়াদের বিরুদ্ধে এক ধরনের অভিযোগ প্রচলিত রয়েছে—দাবি করা হয় যে, শিয়া নবীর (সা.) মৃত্যুর পরে উদ্ভূত হয়েছে। আয়াত «الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ» নির্দেশ করে, ইসলামের পূর্ণতা নবীর (সা.) শেষ জীবনে অর্জিত হয়েছিল। তাই তাদের মতে, নবীর মৃত্যুর পরে উদ্ভূত শিয়ারা সঠিক পথের অনুসারী নয়। কিন্তু সত্যটি এর চেয়ে গভীর: এই অভিযোগ কেবল শিয়াদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করে না; বরং, সেই একই দাবি নিজেই শিয়াদের সঠিকতার এক প্রমাণস্বরূপ। কারণ নবীর মৃত্যুর পরও ইসলামের মূল ধারার ধারাবাহিকতা, শিক্ষা ও নেতৃত্ব রক্ষা করার যে প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছিল, শিয়ারা সেই ধারাবাহিকতার রক্ষাকর্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। সুতরাং, এই অভিযোগের মধ্যে লুকানো রয়েছে শিয়াদের আসল বৈধতা ও নবীর সঠিক পথ অনুসরণের স্বীকৃতি।
আহলে সুন্নাতের জন্যও একই অভিযোগ
এই অভিযোগ মূলতআহলে সুন্নাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, শিয়াদের নয়। মাকতাব-এ-শিয়া নবীর (সা.) সময়েই গঠিত হয়েছিল। প্রশ্ন হলো, কি আহলে সুন্নাত তাদের বিশেষ মতবাদ, ক্যালাম বা ফিকহি ধারার সঙ্গে নবীর সময়েই উপস্থিত ছিল? কি আহলে সুন্নাতের ফিকহি ইমামরা নবীর সঙ্গে বসবাস করতেন এবং নবীর কাছ থেকে তাদের পদ্ধতি ও আইনগত ভিত্তি গ্রহণ করতেন? স্পষ্ট যে, নবীর যুগের মুসলিমরা “সুন্নি” নামে পরিচিত ছিল না, কিন্তু শিয়াদের ক্ষেত্রে, নবীর সময়েই “শিয়া” বা আলী (আ.)-এর অনুসারী ও প্রেমিকদের জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা হতো।
আহলে সুন্নাহ” নামের উৎপত্তি
যারা নিজেদের নবীর সুন্নার অনুসারী মনে করে, তারা কি জানে যে “আহলুস সুন্নাহ” শব্দটি নবীর মৃত্যুর কয়েক দশক পরে উদ্ভূত হয়েছে? তারা কোন সুন্নার অনুসারী, যখন “খিলাফত” সংক্রান্ত নবীর নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয়েছে? তারা কিভাবে হাদিসের উৎস এবং নবীর সুন্না থেকে ধারাবাহিকতা গ্রহণ করে, যখন নবীর হাদিস শত বছর ধরে রাজনৈতিক কারণে সংরক্ষণ করা হয়নি?
কীভাবে আহলুস সুন্নাহকে নবীর সুন্নার অনুসারী বলা যায়, যখন তাদের খলিফারা নবীর হাদিস লিখিত করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং যে হাদিস লেখা ছিল তা ধ্বংস করেছিলেন, তাদের মূল ছলোগান ছিল “حَسْبُنا كِتابُ الله” (আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট), অথচ কিতাব আল্লাহকে নবীর সুন্নাহ ও আহলে বাইতের (আ.) ব্যাখ্যা সহ পাঠ্য হিসেবে গ্রহণ করা আবশ্যক ছিল, যেমন হাদিস-এ-সকলিনেও নির্দেশ আছে।
আহলে সুন্নাহ নবীর সময় কি উপস্থিত ছিল?
অতএব, কি আহলে সুন্নাতের সমস্ত মতবাদ, ক্যালাম, ফিকহি, হাদিস ও তরিকত – যেমন আহলুল হাদিস, আস-সুন্নাহ, আশআরী, মু’তজিলা, মাওরিদী, মাতরিদী, হানফী, হানবলী, মালিকী, শাফি, সুফিয়ানী তরিকত ইত্যাদি – নবীর সময়েই উপস্থিত ছিল? তাদের খলিফাদের খ্যাতি ও মর্যাদা সম্পর্কে কি নবীর সময়েই কোনো ধারণা ছিল? কিভাবে তারা খলিফাদের ফজিলত নবীর অনুমোদন হিসেবে দাবি করে, অথচ তারা নবীর হাদিস গ্রহণ করত না এবং খিলাফতের ক্ষেত্রে নবীর মত (নিদের্শ) কখনো মানত না?
আহলে সুন্নাহ” শব্দের যথার্থতা
যদিআহলে সুন্নাহ মানে খলিফাদের অনুসারী হয়, তখন শব্দটি প্রযোজ্য হতে পারে। নচেৎ তারা নবীর সুন্নাহ থেকে কিছুই রেখে যায়নি যা তাদের নবীর সুন্নার অনুসারী বানাতে পারে। “আহলে সুন্নাহ” শব্দটি নবীর সময় নয়, বরং উমর ইবনে আব্দুলআজিজের সময় হাদিস সংরক্ষণের সময়ে এবং পরে আব্বাসীয় খলিফাদের সময় প্রচলিত হয়। যদিও, মুয়াবিয়ার যুগেও কিছু মুসলিম যারা উসমানকে সমর্থন করতেন, তাদের “উসমানী” বলা হতো, আর আলী (আ.)-এর প্রেমিকরা “আলাভী” নামে পরিচিত ছিল। পরে আব্বাসীয় যুগে “উসমানী” শব্দটি বন্ধ হয়ে যায় এবং আলাভীরা পূর্বনির্ধারিত নাম “শিয়া” হিসেবে পরিচিত হয়। তখন থেকে “শিয়া” ও “আহলে সুন্নাহ” দুইটি শব্দ প্রচলিত হয়েছে।
নবীর জীবনকালেই শিয়ার সূচনা
আহলে সুন্নাতের বিপরীতে — যারা নিঃসন্দেহে নবীজির (সা.) ইন্তেকালের পর একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে ওঠে — শিয়া মতবাদ নবীর জীবদ্দশাতেই তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। নবীর ইন্তেকালের পর যারা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী ইমাম আলী (আ.)-কে উত্তরসূরি হিসেবে মেনে চললো এবং তাঁর অনুসরণ করলো, তাদেরই “শিয়া” বলা হতো।
বাস্তবে, তাশাইয়্যু (শিয়া মতবাদ) সেই ইসলামই, যা রাসুল (সা.) এনেছিলেন।
শিয়া মতের মূল লক্ষ্য হলো নবীর প্রকৃত ইচ্ছা অনুযায়ী কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা ও বোঝাপড়ার জন্য আহলে বায়তের ইমামদের অনুসরণ করা। কারণ তারাই রাসুল (সা.)-এর শিক্ষার নির্ভরযোগ্য ধারক। এ কারণে শিয়ারা সুন্নাতের প্রকৃত অনুগামীদের থেকে নবীর সুন্নতের নিকটতর। তারা সাহাবার কথা শুধুমাত্র সে ক্ষেত্রে গ্রহণ করে, যখন তা নবী থেকে প্রমাণিত ও বর্ণনাকারী ন্যায়পরায়ণ হন। তাই শিয়ারা সর্বক্ষেত্রে নবীর বাণীকেই মানদণ্ড হিসেবে ধরে।
এই কারণে শিয়াদের বিশ্বাস—নবীর সময়ে যে ইসলাম সম্পূর্ণতা লাভ করেছিল, তা আহলে বায়তের বর্ণনা ও ব্যাখ্যাতেই সংরক্ষিত। সুতরাং প্রকৃত “আহলে সুন্নাত” হলেন শিয়ারা, তারা নয় যারা রাজনৈতিক খেলাফত রক্ষার্থে নবীর নির্দেশ ও এমনকি কুরআনের আয়াতকেও উপেক্ষা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আহলে সুন্নাতের অনেকেই দাবি করে যে, আবু বকরের বর্ণিত “নবীগণ উত্তরাধিকার রেখে যান না” — এই একক হাদিস নাকি রাসুলের (সা.) সময়ে নাজিল হওয়া কুরআনের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধানকে রহস্য করে দিতে পারে!
নবী যুগে শিয়ার সূচনা
শিয়ারা প্রথমে নবীর জীবন্মধ্যে অল্পসংখ্যক একটি দল ছিল, যারা ইমাম আলী (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়। রাসুলের ইন্তেকালের পর তারা রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে আলী (আ.)-এর খেলাফতকে স্বীকার করে এবং নবীর ঘোষণা অনুযায়ী তাঁর প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে শিয়া সত্তাকে সুস্পষ্ট রূপ দেয়।
কেবল খেলাফত ও ইমামতির বিষয়ে বহু আয়াত ও হাদিসই নয়, আহলে বায়তের অনুসরণকারীদের ‘শিয়া’ হিসেবে অভিহিত করার বিষয়েও নবীজির জীবদ্দশায়ই স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সূরা বাইয়্যিনার ৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ أُوْلَـٰئِكَ هُمْ خَيْرُ الْبَرِيَّةِ
অর্থাৎ — যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারাই সৃষ্টির সেরা।
শিয়া ও সুন্নি উভয় মুফাস্সিরা এই আয়াতকে ইমাম আলী (আ.) ও তাঁর শিয়াদের প্রসঙ্গে নাযিল বলে বর্ণনা করেছেন। সুন্নি তাফসিরের মধ্যে যেমন ‘আদ-দুররুল মানসুর’ ও ‘শাওয়াহিদুত তানযিল’-এ এই ব্যাখ্যা রয়েছে, তেমনি শিয়া তাফসির গ্রন্থসমূহেও এর ওপর ইজমা বিদ্যমান।
নবীর (সা.) বক্তব্যে শিয়াদের উল্লেখ
এ আয়াতের তাফসিরে বহু হাদিস পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নবী (সা.) ইমাম আলীর দিকে ইশারা করে বলেছেন:
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ هَذَا وَشِيعَتَهُ هُمُ الْفَائِزُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
— শপথ তাঁর যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এই ব্যক্তি (আলী) ও তাঁর শিয়ারাই কিয়ামতের দিনে মুক্তিপ্রাপ্ত হবে।
আহলে সুন্নাতের গ্রন্থে এমন চল্লিশটি ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে যেখানে নবীজিই আলীর অনুসারীদের “শিয়া” নামে অভিহিত করেছেন। তাবরসী, সিউতি, হাকিম নিসাবুরি প্রমুখ আলেম এসব বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।
সিউতি সূরা বাইয়্যিনার ৭ নম্বর আয়াতের তাফসিরে আরও বর্ণনা করেন:
“إِنَّ هَذَا وَشِيعَتَهُ لَهُمُ الْفَائِزُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ…”
এবং এই বক্তব্যের পরই ‘খৈরুল বারিয়্যা’ আয়াতটি নাযিল হয়।
আরেক বর্ণনায় নবী (সা.) আলী (আ.)-কে উদ্দেশ করে বলেন:
“أَنْتَ وَشِيعَتُكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَاضِينَ مَرْضِيِّينَ”
— তুমি ও তোমার শিয়ারা কিয়ামতের দিনে হবে সন্তুষ্ট ও প্রিয়ভাজন।
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম” — এর প্রকৃত অর্থ ইমাম আলীর (আ.) নেতৃত্ব
আয়াত «الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ» সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এটি শিয়াদের দাবির বিপরীতে নয়, বরং তাদের বিশ্বাসের একটি শক্তিশালী প্রমাণ। শিয়া মত অনুযায়ী, ইসলামের পূর্ণতা অর্জিত হয়েছিল ইমাম আলী (আ.)-এর বেলায়াত ঘোষণা করার মাধ্যমেই, যা নাজিল হয়েছিল সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াত:
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ…
এই আয়াত অবতীর্ণ হয় গদীর খুমের দিনে, যখন নবী (সা.) ইসলামি সমাজের ভবিষ্যৎ স্থপতি হিসেবে ইমাম আলী (আ.)-কে ঘোষণা করেন। এখানে ‘দীনের পরিপূর্ণতা’ বলতে অপ্রধান বিধান বা ফিকহি শাখা-প্রশাখা বোঝানো হয়নি; কারণ এই আয়াতের পরেও বহু বিধান ও বর্ণনা নাজিল হয়েছে। বরং এখানে পরিপূর্ণতার অর্থ হলো ইসলামের মূল কাঠামো, ভিত্তি ও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতাকে সুপ্রতিষ্ঠা করা—অর্থাৎ নবীর (সা.) উত্তরসূরি নির্ধারণ।
সুন্নি আলেমদের কাছেও এ প্রমাণ স্বীকৃত
শুধু শিয়া নয়, আহলে সুন্নাতের বহু বিশিষ্ট আলেমও এ ব্যাপারটি বর্ণনা করেছেন যে, আয়াতটি গদীর খুমে ১৮ জিলহজ্জে নাজিল হয়েছিল। যেমন:
১. আলুসি
২.সিয়ুতি
ইত্যাদি প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব তাঁদের গ্রন্থে এ ঘটনা উল্লেখ করেছেন।
আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো—সুন্নি আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য আছে যে, রাসুল (সা.) এ আয়াত নাজিল হওয়ার ৮১ বা ৮২ দিন পর ইন্তেকাল করেন। আবার তাঁদেরই মতে, নবীজির ওফাত ছিল ১০ অথবা ১২ রবিউল আউয়াল। সুতরাং নিজস্ব হিসাব অনুযায়ীও স্পষ্ট হয় যে, এই আয়াত ১৮ জিলহজ্জ—অর্থাৎ গদীরের দিনে—নাজিল হয়েছে, এবং তা ইমাম আলী (আ.)-এর বেলায়তের সঙ্গেই সম্পর্কিত। আর এই ভাবেই দু’টি সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি নিজেদের মধ্যেই সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
আহলে বাইতই দ্বীন পূর্ণতার মাধ্যম
উপরের দলিল, হাদিসে সাকালাইন এবং অন্যান্য বহু আয়াত ও বর্ণনার ভিত্তিতে শিয়া বিশ্বাস করে—নবীর (সা.) সময়ে যে ইসলাম পূর্ণতা পেয়েছিল তা হলো আহলে বাইতের বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও ব্যাবস্থার মাধ্যমে সংরক্ষিত ইসলাম। আর শিয়াত্ব মানে আসলে নবীর প্রতি আনুগত্য এবং তাঁর নির্দেশের অনুসরণ। অতএব এই অর্থে শিয়াত্ব ইসলাম থেকে পৃথক নয়, বরং ইসলামের প্রকৃত রূপ।
শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী প্রকৃত ইসলাম সেই, যার ব্যাখ্যাকর্তা ও সুন্নাহর ধারক আহলে বাইত (আ.)। তাঁদের অনুসরণ করাই ইসলাম; কারণ—
১. তাঁরা সূরা নাহল, আয়াত ৪৩-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ:
«فَسْئَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ»
(যদি না জানো, তবে জ্ঞানধারীদের জিজ্ঞাসা করো)
২. তাঁরা আয়াতে তাথিরের (তাহারাতের আয়াত) প্রকৃত ধারক, যেখানে আল্লাহ তাঁদের সব অপবিত্রতা থেকে মুক্ত ঘোষণা করেছেন।
৩. এবং সূরা ওয়াকেয়া, আয়াত ৭৯ অনুসারে—
«لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ»
(এ কিতাবের গূঢ় জ্ঞান শুধু পবিত্ররা উপলব্ধি করতে পারে)
— অর্থাৎ কুরআনের প্রকৃত জ্ঞান তাঁদেরই হাতে।
সুতারাং : স্পষ্ট যে ইসলামের পূর্ণতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নবীর (সা.) ঘোষিত উত্তরাধিকার সূত্রের মাধ্যমে, আর সেই ধারাবাহিকতার রক্ষক হলো আহলে বাইত (আ.) যাদের অনুসরণ করাই প্রকৃত ইসলাম এবং শিয়াত্বের প্রকৃত ভিত্তি।
পদটীকা:
১. মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-আমীর আল-সানআনী, তাওযীহ আল-আফকার লি মা’আনি তানকীহ আল-আনযার, আল-মাকতাবাহ আল-সালাফিয়্যাহ, মদীনা মুনাওয়ারা, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ২, পৃ. ৩৬৫।
২. সাইয়্যেদ মুহসিন আল-আমীন, আ‘ইয়ানুশ শিয়া, دار التعارف للمطبوعات, বৈরুত, প্রথম মুদ্রণ, খণ্ড ১, পৃ. ১৯।
৩. মুসলিম ইবনে হজ্জাজ নীশাপুরি, সহিহ মুসলিম, তহকিক: মুহাম্মদ ফুয়াদ আবদুল বাকী, دار إحياء التراث العربي, বৈরুত, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৭২ খ্রি., খণ্ড ৩, পৃ. ১৩৭৯, হাদিস ১৭৫৮।
৪ . যমাখশারী, মাহমুদ ইবনে উমর, আল-কাশশাফ আন হাকায়িক গাওয়ামিদ আত-তাওয়ীল, نشر أدب الحوزة, কুম, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ১, পৃ. ২২৪।
৫. আদ-দুররুল মানসূর ফি তাফসীর আল-মাসূর, সিউতী, জালালুদ্দীন, আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফী লাইব্রেরি, কুম, ১৪০৪ হিজরি, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ৬, পৃ. ৩৭৯।
৬. শাওয়াহিদুত তানযীল লিকাওয়ায়িদিত তাফযীল, হাক্কানী, উবায়দুল্লাহ ইবনে আহমদ, ইরানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রকাশনা সংস্থা, তেহরান, ১৪১১ হিজরি, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ২, পৃ. ৪৬৭।
৭. আদ-দুররুল মানসূর, একই সূত্র; শাওয়াহিদুত তানযীল, একই সূত্র; তাফসীর ফুরাত আল-কূফী, ফুরাত ইবনে ইবরাহিম, মুআসসাসাতুত তাব’ ওয়ান নাশর, তেহরান, ১৪১০ হিজরি, প্রথম সংস্করণ, পৃ. ৫৮৫।
৮. একজন তরুণ শিয়ার ওহাবীদের প্রশ্নের উত্তর, মুহাম্মদ তাবরী, নাশর মশআর, তেহরান, ১৩৮৬ শামসি, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ১৮০।
৯. আদ-দুররুল মানসূর, একই সূত্র।
১.. একজন তরুণ শিয়ার ওহাবীদের প্রশ্নের উত্তর, মুহাম্মদ তাবরী, নাশর মশআর, তেহরান, ১৩৮৬ শামসি, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃ. ১৮০।
১১. আদ-দুররুল মানসূর, একই সূত্র।
১২. একই সূত্র।
১৩. একজন তরুণ শিয়ার ওহাবীদের প্রশ্নের উত্তর, একই সূত্র।
১৪. রূহুল মা‘আনী ফি তাফসীর আল-কুরআন আল-আযীম, আলূসী, সাইয়্যেদ মাহমুদ, دار الكتب العلمیه, বৈরুত, ১৪১৫ হিজরি, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ৩, পৃ. ৩৬১।
১৫. আদ-দুররুল মানসূর, একই সূত্র, খণ্ড ২, পৃ. ২৫৯।
১৬. ইমাম-শিক্ষা কুরআনে এবং সংশয় নিরসন, আলী আসগর রিজওয়ানী, মসজিদে মুকাদ্দাসে জামকরান, কুম, ১৩৮৫ শামসি, প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ১, পৃ. ২৬৮।
১৭.মাফাতিহুল গাইব (তাফসীর আল-কবীর), ফখরুদ্দীন রাজী, دار إحياء التراث العربي, বৈরুত, ১৪২০ হিজরি, তৃতীয় সংস্করণ, খণ্ড ১১, পৃ. ২৮৮।
১৮.ইমতিআ‘ আল-আসমা‘, মাকরিযী, তাকিুদ্দীন আহমদ ইবনে আলী, دار الكتب العلميه, বৈরুত, ১৪২০ হিজরি/১৯৯৯ খ্রি., প্রথম সংস্করণ, খণ্ড ১৪, পৃ. ৫৪৪।
১৯. আল-মাগাজী, ওয়াকিদী, মুহাম্মদ ইবনে উমর, তহকিক: মার্সডেন জোন্স, মুআসসাসা আল-আলামী, বৈরুত, ১৪০৯ হিজরি/১৯৮৯ খ্রি., দ্বিতীয় সংস্করণ, খণ্ড ৩, পৃ. ১১২০; আল–কাফি, কুলায়নী, মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক, دار الكتب الإسلامية, তেহরান, ১৪০৭ হিজরি, চতুর্থ সংস্করণ, খণ্ড ১, পৃ. ৪৩৯।
২০. গাদীর ঘটনার সময় নির্ধারণ প্রসঙ্গে: দিওয়াল-আওয়াল মাসের ১০ বা ১২ তারিখ থেকে ৮১ বা ৮২ দিন পিছিয়ে গেলে, এই আয়াত গাদীর দিনের সাথেই মিলে যায়, আরাফার দিনের সাথে নয়। দেখুন: আয়াতুল ওলায়াত ফি আল-কুরআন, নাসের মাকারেম শিরাজী, নাশর নাসলে জাওয়ান, কুম, ১৩৮৬ শামসি, তৃতীয় সংস্করণ, পৃ. ৬০।
২১. মাশহুর হাদিসে সাকালাইন: রাসুল (সা.) বলেছেন— “আমি তোমাদের মাঝে দুটি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি: আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত। যদি তোমরা এদের আঁকড়ে ধর, তবে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। আর এ দু’টি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না, যতক্ষণ না কাওসারের ধারে এসে আমার সাথে মিলিত হয়।”
দেখুন: নাহজুল হক ও কাশফুস সিদক, আল্লামা হিল্লী, বৈরুত, ১৯৮২ খ্রি., পৃ. ২২৬; সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃ. ১১০, কিতাব আল-ফাযাইল; আল-মুজাম আল-কবীর, তাবারানী, খণ্ড ৩, পৃ. ৬৫; মুসনাদ আহমদ ইবনে হাম্বল, খণ্ড ৩, পৃ. ১৭।
২২. আয়াতুল তাথীর: সূরা আহযাব, আয়াত ৩৩— “নিশ্চয়ই আল্লাহ চান, হে আহলে বাইত! তোমাদের থেকে অশুদ্ধি দূর করতে এবং তোমাদের পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করতে।



