শুধু ইসলাম ধর্মের মধ্যেই কি মান্নত (নযর) সীমাবদ্ধ?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: কুরআন ও ইতিহাস থেকে জানা যায়: নযর বা মান্নত কেবলমাত্র ইসলাম ধর্মের বিষয় নয়; বরং অতীতের অনেক নবী ও ধর্মীয় সমাজেও নযরের প্রচলন ছিল। কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও ঐতিহাসিক তথ্য থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট।
ইসলামের পূর্বে কি নযরের (মান্নতের) কোনো প্রাচীন প্রথা ছিল?
উত্তর: হ্যাঁ, কুরআন ও পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোতে এর একাধিক উদাহরণ পাওয়া যায়। নিচে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—
১. ইমরানের স্ত্রীর নযর (মান্নত)— মরিয়ম (আ.)-এর জন্মের পূর্বে
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন—
إِذْ قالَتِ امْرَأَتُ عِمْرانَ رَبِّ إِنِّی نَذَرْتُ لَک ما فِی بَطْنِی مُحَرَّراً فَتَقَبَّلْ مِنِّی ۖ إِنَّک أَنْتَ السَّمِیعُ الْعَلِیمُ
যখন ইমরানের স্ত্রী বললেন হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা আছে, আমি তা সম্পূর্ণভাবে তোমার সেবায় নযর করলাম। তুমি তা কবুল করো; নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সুরা আলে ইমরান ৩:৩৫)
বর্ণিত আছে— ইমরানের স্ত্রী ‘হান্না’ দীর্ঘদিন নিঃসন্তান ছিলেন। একদিন তিনি এক পাখিকে তার বাচ্চাদের খাওয়াতে দেখে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষায় দোয়া করেন। পরবর্তীতে তিনি গর্ভবতী হলে আল্লাহর ঘরে সন্তানকে উৎসর্গ করার মান্নত করেন।
২. মরিয়ম (আ.)-এর নীরবতার নযর
আল্লাহ বলেন—
إِنِّی نَذَرْتُ لِلرَّحْمَنِ صَوْماً فَلَنْ أُکَلِّمَ الْیَوْمَ إِنْسِیًّا
আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে নীরব থাকার মান্নত করেছি; তাই আজ আমি কারও সাথে কথা বলব না। (সুরা মারিয়ম ১৯:২৬)
এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, সেই সময়ের সমাজেও নীরবতার নযর (মান্নত) একটি স্বীকৃত ইবাদত ছিল।
৩. বাইবেলের উদাহরণ — ইফতাহ্ এর নযর
তাওরাত/ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ী, ইফতাহ আল্লাহর কাছে মান্নত করেছিলেন যে, যুদ্ধ জিতলে ঘরে ফেরার সময় দরজা খুলে যে প্রথম ব্যক্তি বেরিয়ে আসবে তাকে তিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি করবেন।
৪. ইয়াকুব (আ.)-এর নযর মান্নত
কিছু বর্ণনায় আছে— ইয়াকুব (আ.) অসুস্থ হলে আল্লাহ তাঁকে আরোগ্য দিলে তিনি কিছু প্রিয় খাবার ও পানীয় নিজের উপর হারাম করে দেওয়ার মান্নত করেন।
৫. ইসলামের পূর্বে আরবেও নযর প্রচলিত ছিল
আরবদের মধ্যেও নযরের রীতি ছিল। এমনকি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর পিতা আবদুল্লাহ-কে কুরবানি করার ঘটনাও একটি মান্নতের ফলাফল ছিল বলে বর্ণনায় উল্লেখ আছে। নযর শুধু ইসলাম নয় — সব আসমানি ধর্মেই এটি মানুষের ‘আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, তৌবা বা আশা ব্যক্ত করার একটি আধ্যাত্মিক অঙ্গীকার’। ইসলাম শুধু এটিকে সঠিক নিয়মে পরিশুদ্ধ ও সংহত করেছে।
পাদটীকা
১. সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৫।
২. নাসের মাকারেম শিরাজি, তাফসিরে নমুনা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫২৩, তেহরান, দারুল কুতুবুল ইসলামিয়া, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৪ হিজরি ।
৩. সূরা মারইয়াম, আয়াত ২৬।
৪. তাফসিরে নমুনা, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ৪৫–৪৬; দেখুন: “নীরবতা রোজার বিধান”, নথি নং ১২২৭৯।
৫. দেখুন: বাইবেল, ইফতাহর জীবন অধ্যায়
৬. বাইবেল, উদ্ভব গ্রন্থ অধ্যায় ২৮, আয়াত ২০–২২
৭. শেখ তুসি, মুহাম্মদ ইবনে হাসান, “আত-তিবইয়ান ফি তাফসির আল-কোরআন, ভূমিকা; তেহরানি, আকা বুজর্গ; গবেষক: কাসির আমেলি, আহমদ; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৩২; বৈরুত, দার ইহইয়াউত তুরাস আল-আরাবি; প্রকাশকাল অনির্দিষ্ট।
৮. আব্দুল্লাহকে কোরবান করার মানত করেছিলেন আবদুল মুত্তালিব”—নথি নং ২১২৮২।



