শুধুমাত্র শিয়ারাই কি আহলে বাইতের হাদিস মেনে চলে?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: শিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীরা যেকোনো হাদিস গ্রহণ ও অনুসরণ করেন, যদি তা নবীজি (সা.) থেকে সঠিক সূত্রে প্রাপ্ত হয়। তবে বিশ্বাস ও জ্ঞান সম্পর্কিত ক্ষেত্রে একক হাদিসের উপর নির্ভরতা সীমিত, এবং ফিকাহ ও আইন সম্পর্কিত ক্ষেত্রে তারা বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ রাবীয়াদের মাধ্যমে প্রাপ্ত সাহিহ হাদিস গ্রহণ করেন। আহলে বাইতের হাদিস নবীজির সাথে সংযুক্ত হওয়ায় তা সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য।
বিস্তারিত:
শিয়া হাদিস বিদ্বানদের মতে, একটি হাদিস গ্রহণযোগ্য হয় তখনই, যখন তা সঠিক সূত্রে মাসুম—যেমন নবীজি (সা.)—এর কাছে পৌঁছায়। শিয়াদের কাছে থাকা হাদিস দুটি ভাগে বিভক্ত:
সরাসরি ইমামদের মাধ্যমে প্রাপ্ত হাদিস:
এই ধরনের হাদিস বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ রাবীয়াদের মাধ্যমে ইমাম থেকে প্রাপ্ত। এটি সকলের জন্য বাধ্যতামূলক, কারণ ধরে নেওয়া হয় যে বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা ইমাম ও ইসলামের মহান নেতাদের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন। আহলে বাইতের হাদিস নবীজির দিকে পৌঁছেছে এবং এর নীতিবাক্য অনুযায়ী:
حَدِیثى حَدیثُ أَبِى وَحَدِیثُ أَبى حَدِیثُ جَدّى، وَحَدِیثُ جَدّى حَدیثُ الْحُسَین، وَحَدِیثُ الحُسَیْن، حَدیثُ الْحَسَنَ وَحَدِیثُ الْحَسَن حَدیثُ أمیر المُؤْمِنینَ وَحَدیثُ أمیر المُؤْمنین، حَدِیثُ رَسُول اللّهِ (صلَّى اللّه علیه و آله و سلَّم) وَحَدیثُ رَسُولَ اللّهِ قَول اللّه عَزَّوَجَلّ…
আমার হাদিস আমার পিতার হাদিস, আমার পিতার হাদিস আমার দাদার হাদিস, আমার দাদার হাদিস হোসেইনের হাদিস, হোসেইনের হাদিস হাসানের হাদিস, হাসানের হাদিস আমীরুল মুমিনিনের হাদিস, আমীরুল মুমিনিনের হাদিস নবীজির হাদিস, নবীজির হাদিস আল্লাহর বাণী।
সরাসরি আহলে বাইতের মাধ্যমে নয়, নবী (সা.) থেকে প্রাপ্ত হাদিস:
শিয়াদের সকল আলেম এই ধরনের হাদিসও গ্রহণ করেন। কিছু হাদিস, যা সুন্নি সাহিহ ও সুনানে রয়েছে, ফিকাহিদের নজরে আসে। শিয়ার গ্রন্থের সাথে পরিচিতরা সহজেই বুঝতে পারে যে, সুন্নি আলেমরা সাধারণ ব্যক্তিদের হাদিস গ্রহণ করেছেন, কিন্তু আহলে বাইতের হাদিসকে এড়িয়ে গেছেন।
শিয়াদের আলেমরা সকল আহলে বাইতের হাদিস সংগ্রহ করেছেন, যা নবীর সাথে সম্পূর্ণ সংযুক্ত। শিয়াদের মধ্যে প্রধান তিন ধরনের হাদিস সমষ্টি রয়েছে, যা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। সবচেয়ে প্রচলিত হলো কুতুবে আরবাহ (চারটি গ্রন্থ):
১. মুহাম্মদ বিন ইয়াকুব আল-কুলাইনী, রচয়িতা “কাফি” (৮ খণ্ড, ১৬০০০+ হাদিস)
২. মুহাম্মদ বিন আলী বিন হুসাইন শেইখ সাদুক, রচয়িতা “মন লা ইয়হযুরুহুল ফাকিহ” (৪ খণ্ড)
৩. মুহাম্মদ বিন হাসান তুসী, রচয়িতা “আল-তাহযীব” (১০ খণ্ড)
৪. মুহাম্মদ বিন হাসান তুসী , রচয়িতা আল-ইস্তিবসার” (৪ খণ্ড)
শিয়াদের মধ্যে হাদিসবিদ্যা, রেজাল (রাবীয়াদের জ্ঞান) এবং দেরায়াহ (হাদিস বিশ্লেষণ) যুগযুগ ধরে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে।
সূত্র:
১. অুসুলে কাফি, খণ্ড ৭১, পৃষ্ঠা ৪২, হাদিস ১৪।
২. গ্রন্থ থেকে সংকলন: রাহনামায়ে হকিকত, শেইখ জাফর সুবহানি, প্রকাশনা মাশার, তেহরান, ১৩৮৭ হিজরি, পৃষ্ঠা ৩৯৪–৩৯৬।



