ইতিহাসধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

হযরত ফাতিমা (সা.আ.) বলেছেন, “আলী (আ.) তলোয়ার ধরেছিলেন যাতে তোমরা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারো”

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৯ নভেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ. যখন উম্মতকে গোমরাহি ও দুর্ভাগ্য থেকে উদ্ধার করার প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)-এর ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন, তখন তিনি আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.)-এর বিভিন্ন গুণাবলি তুলে ধরেন—আল্লাহর ওলিদের নেতা, ক্লান্তিহীন সংগ্রামী এবং এমন দৃঢ়চিত্ত যাঁকে আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে কোনোরকম তিরস্কার বিচলিত করতে পারে না। যখন আলী (আ.) ও রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.) জিহাদের ময়দানে লড়াই করছিলেন, তখন জনগণ ছিল নিশ্চিন্ত, উদাসীন এবং সুবিধা-স্বাচ্ছন্দ্যে নিমগ্ন।

আইয়্যামে ফাতিমা (ফাতিমিয়া দিবস) উপলক্ষে মরহুম আয়াতুল্লাহ মিসবাহ (রহ.)-এর হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.-এর খুতবা-এ-ফাদাক বিষয়ে বর্ণিত কিছু বক্তব্য আপনাদের জন্য উপস্থাপন করা হলো:

লক্ষ্য করুন—এই অংশে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ. যখন ব্যাখ্যা করছেন যে তাঁর পিতা কীভাবে জাতিকে দুর্দশা ও বিভ্রান্তি থেকে উদ্ধার করেছেন, তখন তিনি আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর গুণাবলি বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন: আমার পিতা তোমাদের উদ্ধার করেছেন, কিন্তু সহজে নয়; বরং এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে, যার গুণাবলি এইরূপ।”

এরপর তিনি আলী (আ.)-এর গুণাবলি একে একে বর্ণনা করেন—

«سَیِّداً فِی أَوْلِیَاءِ الله» — অর্থাৎ, তিনি আল্লাহর ওলিদের নেতা ও পূর্বসারথি।

«مُشَمِّراً نَاصِحاً مُجِدّاً» — অর্থাৎ, তিনি এমন ব্যক্তি, যিনি দৃঢ় সংকল্পে হাতা গোটানো, সর্বদা প্রস্তুত, অকৃত্রিম সদিচ্ছার অধিকারী, সর্বান্তকরণে পরিশ্রমী এবং কখনো কর্ম থেকে বিরত হন না।

«کادِحاً» — অর্থাৎ, এমন একজন যিনি নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে সত্যের পথে অটলভাবে অগ্রসর হন।

«لَا تَأْخُذُهُ فِی اللهِ لَوْمَةُ لَائِمٍ» — অর্থাৎ, আল্লাহর দায়িত্ব পালনে কোনো নিন্দা, তিরস্কার বা সমালোচনা তাকে পথ থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে না।

হযরত যাহরা (সা.আ. এরপর বলেন যে তাঁর পিতা—রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.)—নিজের চাচাতো ভাই আলী (আ.)-এর মাধ্যমে এসব বিশাল গুরুদায়িত্ব সম্পাদন করেছিলেন এবং তোমাদের বিভ্রান্তি ও অব্যবস্থা থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

তারপর তিনি মসজিদে সমবেত সেই মুসলমানদের উদ্দেশে দৃষ্টি ফেরান এবং তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে সে সময় তোমাদের অবস্থা কী ছিল।

তিনি বলেন—যখন আলী (আ.) এবং আমার পিতা রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.) তোমাদের রক্ষা করতে কঠিন যুদ্ধের ময়দানে সংগ্রাম করছিলেন, তখন তোমরা আরামে ও নিশ্চিন্তে জীবন কাটাচ্ছিলে।”

وَ أَنْتُمْ فِی رَفَاهِیةٍ مِنَ الْعَیشِ، وَادِعُونَ فَاکهُونَ آمِنُونَ، تَتَرَبَّصُونَ بِنَا الدَّوَائِرَ، وَ تَتَوَکفُونَ الْأَخْبَارَ، وَ تَنْکصُونَ عِنْدَ النِّزَالِ، وَ تَفِرُّونَ مِنَ الْقِتَالِ

অর্থাৎ—“তোমরা ছিলে আরাম-আয়েশ ও ভোগ-সুখে নিমজ্জিত, নিশ্চিন্ত ও নিরুদ্বেগ জীবনে মশগুল। আর যখন তারা জীবনবাজি রেখে ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিল, তোমরা ঘরে নিশ্চিন্তে বসে আনন্দ-ফুর্তি, হাসি-ঠাট্টা ও ভোগ-লালসায় মত্ত ছিলে এবং কোনো বিপদের আশঙ্কাই অনুভব করোনি। তোমরা অপেক্ষা করতে যে আমাদের ওপর কোনো দুর্যোগ আসে কি না; খবর পেতে বসে থাকতে; যুদ্ধের মুহূর্তে পিছিয়ে যেতে; এবং লড়াইয়ের সময় ময়দান থেকে পালাতে।”

সারকথা, হযরত (সা.) এই বর্ণনার মাধ্যমে স্পষ্ট করতে চান রাসুলুল্লাহ্‌ (সা.) ও আলী (আ.)-এর সংগ্রাম ও জনগণের উদাসীনতার প্রকট পার্থক্য—যে সময়ে এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব উম্মতের হেফাজত ও দ্বীনের রক্ষায় নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, সে সময় জনগণ ছিল আরাম-আয়েশ ও গাফেলতিতে, এবং চারপাশের বিপদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button