কেন ইসলামি শিষ্টাচার ও আচার-আচরণ বাহ্যিকভাবে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: মানুষের অন্তরের ঈমান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তার বাহ্যিক আচার-আচরণ, পোশাক, বিনয় ও শালীনতাও ধর্মীয় জীবনের অপরিহার্য অংশ। একজন সত্যিকারের মুসলমানের মুখমণ্ডল, চোখের দৃষ্টি ও আচরণে যেন আল্লাহর স্মরণ, নামাজের প্রভাব ও বিনয় প্রতিফলিত হয় — এ আহ্বান জানিয়েছেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মানদেগারি তাঁর এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতায়।
সৎ মানুষের চেহারায় ঈমানের ছাপ
সৎ মানুষের চেহারা” বা সীমায়ি সালেহিন — এই শব্দগুচ্ছ ইসলামে শুধু একটি নৈতিক ধারণা নয়, বরং তা একজন মুমিনের জীবনযাপনের পূর্ণ প্রতিচ্ছবি। কুরআনের সুরা ফাতহে বলা হয়েছে:
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ وَالَّذینَ مَعَهُ أَشِدّاءُ عَلَی الْکُفّارِ رُحَماءُ بَیْنَهُمْ، تَراهُمْ رُکَّعاً سُجَّداً یبْتَغُونَ فَضْلاً مِنَ اللهِ وَرِضْواناً، سِیماهُمْ فی وُجُوهِهِم مِنْ أَثَرِ السُّجُود
মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল, আর যারা তাঁর সঙ্গে রয়েছে, তারা কাফেরদের প্রতি দৃঢ় ও একে অপরের প্রতি দয়ালু। তুমি দেখবে তারা রুকু করছে, সিজদায় লিপ্ত, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করছে; তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার চিহ্ন প্রকাশ পাচ্ছে।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বক্তা বলেন — একজন সত্যিকারের ঈমানদার মানুষ শুধু অন্তরে নয়, বাহ্যিক আচারেও ইমান ও ইবাদতের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দেয়।
অন্তর যেমন জরুরি, তেমনি বাহ্যিক শালীনতাও
হুজ্জাতুল ইসলাম মানদেগারি বলেন, যেমন কোনো দোকানে ভালো পণ্যের নমুনা প্রদর্শন করা হয়, তেমনি একজন মুমিনের ভেতরে যদি ঈমান ও আল্লাহভীতি থাকে, তার কিছু নিদর্শন অবশ্যই চেহারা ও আচরণে ফুটে উঠবে।
তিনি বলেন, “মানুষের অন্তর অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বাহ্যিক শালীনতা, আচরণ, পোশাক ও ভঙ্গিমাও সেই ঈমানের প্রতিচ্ছবি বহন করে।
নারীর সৌন্দর্য শালীনতায়, পুরুষের সৌন্দর্য মর্যাদায়
বক্তা বলেন, নারীরা যেন তাদের শান্ত স্বভাব, লজ্জাশীলতা, পবিত্রতা ও বিনয় দিয়ে সীমায়ি সালেহিন”-এর সৌন্দর্য প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, পুরুষেরা — হোক তিনি কর্মকর্তা, সৈনিক, শিক্ষক, আইনজীবী বা সাধারণ কর্মচারী — তাঁদের চেহারা ও ব্যবহারে যেন আল্লাহভীতি ও ইবাদতের ছাপ বহন করেন।
তিনি বলেন, “এটা বাহ্যিক অভিনয় নয়। যিনি দীর্ঘদিন নামাজ ও সিজদায় অভ্যস্ত, তাঁর মুখমণ্ডলে আল্লাহর নূর নিজে থেকেই ফুটে ওঠে।
পুরুষের চেহারায় পুরুষত্বের মর্যাদা
মানদেগারি এক স্মৃতিচারণায় বলেন, “দেখেছি কেউ কেউ মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে চায়, যেন নারীসুলভ চেহারা ধারণ করে। অথচ ইসলাম এমন রূপকে পছন্দ করে না। তিনি আরও বলেন, “যিনি দাড়ি রাখবেন, তা পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল রাখলে সেটিই সৌন্দর্যের প্রতীক এবং সৎ মানুষের চেহারার নিদর্শন।
সৎ মানুষের মুখমণ্ডলে আল্লাহর নূর
বক্তা ব্যাখ্যা করেন, “সীমায়ি সালেহিন”—এর অর্থ হলো এমন এক মুখমণ্ডল যা নামাজ, তাকওয়া ও হালাল জীবনের আলোয় আলোকিত।
তিনি বলেন, “এই চেহারায় হারামের ছায়া থাকে না; তাঁদের দৃষ্টিতে লজ্জা, কথায় বিনয় ও ব্যবহারে মহত্ত্ব থাকে।
আচরণেই হোক দাওয়াতের ভাষা
তিনি আহ্বান জানান, আমরা যেন এমন আচরণ করি যাতে মানুষ ইসলাম থেকে বিমুখ না হয়ে, বরং আকৃষ্ট হয়। এমনকি পাপীও যেন আমাদের দেখে বলে তোমরা সত্যিই ভালো মানুষ, আমি আমার ভুলে লজ্জিত।
তিনি সতর্ক করেন, যদি আমাদের চেহারা ও আচরণে সৎ মানুষের ছাপ না থাকে, তবে আমরা মানুষকে আকৃষ্ট করব না, বরং তাদের দূরে ঠেলে দেব।
শেষে প্রার্থনা
বক্তৃতার সমাপ্তিতে তিনি দোয়া করেন —
আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে দান করেন সৎ মানুষের চেহারা, ঈমানের আলো, নামাজের নূর, কুরআন তেলাওয়াতের প্রশান্তি এবং লজ্জাশীলতা ও পবিত্রতার সৌন্দর্য।



