“অন্যের ধর্মীয় মর্যাদা ও বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া কেন অনুচিত?”
রাসেল আহমেদন । প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫
“অন্যের ধর্মীয় মর্যাদা ও বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া কেন অনুচিত?”
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আন’আমের ১০৮ নং আয়াতে ইরশাদ করেন: “তোমরা কাফিরদের উপাস্যদের গালি দিও না, তাহলে তারাও শত্রুতাবশতঃ জেনে-শুনে আল্লাহকে গালি দেবে।”
এই আয়াতের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অংশসমূহে আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশনা দিয়ে শুরু হয়েছে, যেখানে কুফর ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিটি বিবেকবান ব্যক্তি সত্য-মিথ্যা চিনতে সক্ষম। তবে শুধু বুদ্ধিবৃত্তিই নয়, সামাজিক সংস্কৃতি ও পরিবেশও মানুষের বিশ্বাস গঠনে প্রভাব রাখে। এজন্যই সঠিক পথের দিশা পেতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। যারা এই হিদায়াত গ্রহণ করে, তারা নিজেরাই কল্যাণ অর্জন করে; আর যারা প্রত্যাখ্যান করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এখানে উল্লেখ্য, বিবেক ও নবী-রাসূলদের মতো পথপ্রদর্শক থাকা সত্ত্বেও ঈমান বা কুফর উভয়ই মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ফসল। মুমিন জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েই ঈমান আনে, আর কাফিরও সচেতনভাবেই সত্য প্রত্যাখ্যান করে। কাফিররা আল্লাহর আয়াতকে মান্য না করলেও তারা কখনোই কুরআনের সমতুল্য কোনো বাণী উপস্থাপন করতে পারেনি। বরং তারা অপপ্রচার চালায় যে, নবীজি (সা.) এগুলো বিদ্বানদের কাছ থেকে শিখেছেন। অন্যদিকে মুমিনরা সরাসরি এই বাণীকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে।
এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ সূরা আল-আন’আমের ১০৮ নং আয়াতে মুমিনদের সতর্ক করেন: “তোমরা কখনোই কাফিরদের পূজনীয় ব্যক্তিত্বদের অপমান করো না, নতুবা তারাও প্রতিশোধস্বরূপ তোমাদের পবিত্র ব্যক্তিত্বদের অপমান করবে।”
যদি মুমিনরা অমুসলিমদের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বা প্রতীকগুলোর অবমাননা করে, তবে তারাও পাল্টা মুসলিমদের পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি অসম্মান দেখাতে পারে। এতে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। প্রতিটি মানুষ স্বভাবগতভাবে নিজের বিশ্বাস ও আদর্শকে সম্মান করে। তাই কারো বিশ্বাসে আঘাত দেওয়া মানে তার ব্যক্তিত্বে আঘাত করা। ইসলাম এই মৌলিক মানবিক প্রবৃত্তিকে সম্মান করে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। অন্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে সম্মানজনক আচরণ ইসলামের শিক্ষা। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও মক্কার মুশরিকদের সাথে কূটনৈতিক ও নৈতিক আচরণ করেছিলেন। অপমান বা বিদ্রূপের মাধ্যমে কাউকে সত্যের পথে আনা যায় না। বরং সুন্দর আচরণ ও যুক্তির মাধ্যমে ইসলামের বাণী পৌঁছানোই উত্তম পদ্ধতি।
তাফসীরে আল-মীযানে উল্লেখ করা হয়েছে, এই আয়াতে আল্লাহ মানুষের স্বভাব (ফিতরাত)-এর দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা সর্বদা নিজের পবিত্র বিষয়গুলোর মর্যাদা রক্ষা করতে চায়। তাই মুমিনদের উচিত ধর্মীয় শিষ্টাচার বজায় রাখা, যাতে সমাজে শান্তি ও সম্মান বজায় থাকে।
ইসলাম শত্রুতা বা বিদ্বেষের ধর্ম নয়; এটি ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধার শিক্ষা দেয়। অন্য ধর্মের অনুসারীদের বিশ্বাসকে অসম্মান না করে বরং যুক্তি ও সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে ইসলামের সত্যতা উপস্থাপন করাই মুমিনের কর্তব্য। এতে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইসলামের মহানুভবতা ফুটে ওঠে।
মিডিয়া মিহির/ধর্ম ও বিশ্বাস