সংবাদ বিশ্লেষণবিশ্ব

ইরান ও চীনের যৌথ চাল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২রা নভেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইরানের কৃষি মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, ইরান ও চীনের যৌথ উদ্যোগে একটি চাল গবেষণা কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই কেন্দ্রের লক্ষ্য হলো খরা-সহনশীল ও উচ্চফলনশীল হাইব্রিড চালের নতুন জাত উদ্ভাবন, যার উৎপাদনক্ষমতা প্রতি হেক্টরে ছয় টনেরও বেশি হবে।

এই প্রকল্পটি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ২৫ বছর মেয়াদি সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তির আওতায় কৃষি খাতে যৌথ কর্মসূচির অংশ, যা ইরান–চীন সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষি গবেষণায় নতুন অধ্যায়

ইরানের কৃষি উপমন্ত্রী এবং কৃষি গবেষণা, শিক্ষা ও সম্প্রসারণ সংস্থা (AREEO)-এর প্রধান গোলামরেজা গোলমোহাম্মাদি এক বিবৃতিতে বলেন, “যদিও দাবি করা হয় যে খাদ্য ও কৃষি খাত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বাইরে রয়েছে, বাস্তবে ২০১৮ সাল থেকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ছাড়া প্রায় সব আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা ও জেনেটিক সম্পদ বিনিময় কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “তবুও, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে আমাদের বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে এবং তা ক্রমেই গভীরতর হচ্ছে। এই যৌথ উদ্যোগগুলোই ইরানের কৃষি গবেষণাকে টেকসই অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিচ্ছে।”

তরুণ গবেষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

গোলমোহাম্মাদি জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরান ও চীনের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের পারস্পরিক সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রপতি ও কৃষিমন্ত্রীর চীন সফরও অন্তর্ভুক্ত।

এই সফরগুলোর ফলস্বরূপ ছয়জন তরুণ ইরানিবিশেষজ্ঞকে চীনে পাঠানো হয়েছে, যেখানে তারা বীজ প্রজনন ও উন্নয়নবিষয়ক উন্নত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বাগানজাত ফসল, তেলবীজ, গম, চাল, আলু, রেপসিড এবং শোভা-বর্ধক উদ্ভিদের উন্নত বীজ উৎপাদন ও জিনগত উন্নয়নবিষয়ক গবেষণা।

এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সমস্ত ব্যয় বহন করছে চীনা সরকার, যা দুই দেশের কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তি বিনিময়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

জলবায়ু ও খাদ্য নিরাপত্তায় কৌশলগত গুরুত্ব

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান–চীন যৌথ চাল গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইরানের কৃষি খাতে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও খরার প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই কেন্দ্রের গবেষণার মাধ্যমে এমন নতুন প্রজাতির চাল উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে, যা অনাবৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অধিক ফলন দিতে সক্ষম।

এটি শুধু ইরানের খাদ্য নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে না, বরং দেশটিকে আঞ্চলিক কৃষি প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেও সহায়তা করবে।

ইরান–চীন অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত

এই উদ্যোগকে বিশ্লেষকরা দুই দেশের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও কৃষি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখছেন। ২৫ বছর মেয়াদি অংশীদারিত্ব চুক্তির আওতায় কৃষি, জ্বালানি, অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি বিনিময়সহ বিভিন্ন খাতে যৌথ প্রকল্প ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে, যার অন্যতম হলো এই চাল গবেষণা কেন্দ্র।

রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, এই প্রকল্প ইরানের কৃষি খাতের স্বনির্ভরতা ও আধুনিকীকরণের পথে একটি বাস্তব অগ্রগতি, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নীতি ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button