ইসলামী জীবনব্যবস্থা আধুনিক সভ্যতা গঠনের মূলভিত্তি
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৭ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইসলামি জীবনধারা শুধু মুসলমানদের ব্যক্তিগত জীবনযাপনের মানদণ্ড নয়; এটি নবীন ইসলামি সভ্যতা গঠনের মূল ভিত্তি। যেখানে পারিবারিক বন্ধন, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচিত, সেখানে পশ্চিমা জীবনধারার দুনিয়াকেন্দ্রিক ও ভোগবাদী মনোভাব সমাজে অসামঞ্জস্য, নৈতিক অবক্ষয় ও পারিবারিক দুর্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হুজ্জাতুল ইসলাম আমিন আফজালি বলেন, মুসলিম উম্মাহকে কেবল কুরআন ও আহলে বাইতের শিক্ষার ভিত্তিতে জীবনধারার সংস্কার আনা হলে নতুন ইসলামি সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
১. ইসলামী জীবনধারার নৈতিক ভিত্তি
আফজালি বলেন, কুরআন জীবনকে কেবল দৈনন্দিন আচরণের সমষ্টি হিসেবে দেখেনি; বরং এটিকে পরিপূর্ণতা ও আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে উন্নতির পথ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“وما خَلَقتُ الجِنَّ وَالإِنسَ إِلّا لِیَعبُدون”
(সূরা যারিয়াত, আয়াত ৫৬)
এই আয়াত জীবনধারার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে আল্লাহর বন্দেগি নির্দেশ করে, যা ইসলামি জীবনধারার মর্মবস্তু।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, নবীন ইসলামি সভ্যতা কেবল তখনই সম্ভব যখন মুসলমানরা পশ্চিমা জীবনধারার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে কুরআন ও আহলে বাইতের শিক্ষার ভিত্তিতে জীবনধারা পুনর্গঠন করবে।
২. দুনিয়া ও আখিরাতের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
আফজালি ব্যাখ্যা করেন, ইসলামী জীবনধারা সম্পূর্ণ ও সামগ্রিক — এটি শুধু পার্থিব জীবন নয়, বরং আখিরাতকে মধ্যনজরে রেখে পরিকল্পিত। কুরআন এই ভারসাম্য নির্দেশ করে:
وَابْتَغِ فِیمَا آتَاک اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِیبَک مِنَ الدُّنْیَا
(সূরা কাসাস, আয়াত ৭৭)
অর্থাৎ, দুনিয়ার প্রয়োজন এবং আখিরাতের লক্ষ্য—উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।
পশ্চিমা জীবনধারা সাধারণত দুনিয়াকেন্দ্রিক ও ভোগবাদী, যেখানে ব্যক্তি শুধুমাত্র পার্থিব সাফল্য ও সুখের প্রতি মনোনিবেশ করে। ইসলামে জীবনকে চূড়ান্ত পরকালীন জীবনকে সামনে রেখে অস্থায়ী যাত্রাপথ হিসেবে দেখা হয়।
৩. পরিবার ও সামাজিক কাঠামো
ইসলামী জীবনধারায় পরিবারকে সমাজের ভিত্তি ও মানবজীবনের প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“ما بُنِیَ فِی الإسلامِ بُنیانٌ أحَبُّ إلی اللهِ عَزَّوَجَلَّ مِن التَّزویج”
অর্থাৎ, ইসলামে কোনো প্রতিষ্ঠান আল্লাহর কাছে পরিবারের চেয়ে প্রিয় নয়।
পশ্চিমা সমাজে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। ইসলামে পরিবার ও পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব, এবং সন্তান ও অভিভাবকের সম্পর্কের মর্যাদা, সমাজে স্থিতিশীলতা ও নৈতিকতা রক্ষার মূল ভিত্তি।
৪. নৈতিকতা ও চরিত্রগুণ
আফজালি বলেন, ইসলামী জীবনধারার অন্যতম মূল স্তম্ভ হলো নৈতিকতা ও গুণাবলি। কুরআন সতর্ক করে বলে: “وَلا تَمشِ فِی الأَرضِ مَرَحًا” (সূরা ইসরা, আয়াত ৩৭)
ইমাম আলী (আঃ) বলেন:
“تواضع را میان خود و دشمن شیطان سپر قرار دهید.”
সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, আমানতদারিতা ও বিনয় ইসলামী জীবনধারার মূল স্তম্ভ। এ শিক্ষা প্রমাণ করে, ভৌত বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ছাড়া নৈতিক উন্নতি না থাকলে জীবনধারা অসম্পূর্ণ।
৫. ইসলামী সভ্যতার পুনর্গঠন ও সমাধান
আফজালি পুনর্ব্যক্ত করেন, ইসলামী সভ্যতার বিকাশ সম্ভব নয় যতক্ষণ মুসলমানরা নিজেদের জীবনধারাকে কুরআনিক ও আহলে বাইতের আদর্শ অনুযায়ী পুনর্গঠন না করে।
এই পুনর্গঠন হওয়া উচিত:
১.তাওহীদ
২.ন্যায়বিচার ও সামাজিক নৈতিকতা
৩.পরিবারকেন্দ্রিক মূল্যবোধ
৪.জীবনের অর্থ ও প্রেরণা
এভাবে মুসলমানরা পশ্চিমা বস্তুবাদী সমাজের বিকল্প একটি সুষম, মানবিক ও আল্লাহকেন্দ্রিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। কুরআন এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়:
“كُنْتُمْ خَیْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ”
(সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১১০)
অর্থাৎ, শুধুমাত্র সেই উম্মাহই শ্রেষ্ঠ হবে, যারা মানবজাতির কল্যাণে উদ্ভাসিত।
ফলাফল
১. ইসলামি জীবনধারা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের নৈতিক ভিত্তি।
২. পারিবারিক বন্ধন, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা নবীন সভ্যতার মূল স্তম্ভ।
৩. জীবনধারার সংস্কার ছাড়া পশ্চিমা ভোগবাদী সভ্যতার বিকল্প গঠন সম্ভব নয়।
৪. কুরআন ও আহলে বাইতের শিক্ষার ভিত্তিতে জীবনধারা পুনর্গঠন করলে সুষম, মানবিক ও আল্লাহকেন্দ্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।



