বিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

ইসরাইলি বিশ্লেষক: দোহা অভিযানের ব্যর্থতার জন্য দায়ী নেতানিয়াহু

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসরাইলি বিশ্লেষক ডানা বান লোজন হিব্রু দৈনিক ইদিয়োথ আহারোনোথ-এ লিখেছেন: দোহা, কাতারে সাম্প্রতিক আক্রমণের এক সপ্তাহ পার হলেও এর প্রভাব ও জটিলতা এখনো রয়ে গেছে এবং অনেক প্রশ্ন উত্তরহীন রয়ে গেছে।

এই আক্রমণে কতজন নিহত বা আহত হলো? কে এই হামলার তথ্য ফাঁস করেছিল? ইসরাইল কি কখনো ভেবেছে ট্রাম্প হয়তো কাতারিদের এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন? কিভাবে হঠাৎ হামাস নেতারা অন্য একটি ভবনে উপস্থিত হলো?

এইসব অনুত্তরিত প্রশ্ন ছাড়াও সবচেয়ে অবোধ্য বিষয় হলো—কিভাবে এমন এক অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, বিশেষ করে এমন স্থানে যা ইসরাইলের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে? কেন এমন সময়ে এই আক্রমণ চালানো হলো, যখন পরিস্থিতি সবচেয়ে অনুপযুক্ত ছিল?

নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

এই বিশ্লেষক, যিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ এবং হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণ বিষয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থী, লিখেছেন:
কেন প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গেই এই পদক্ষেপের দায়িত্ব নিলেন? কবে থেকে তিনি ব্যর্থ অভিযানগুলোরও দায়ভার কাঁধে নিতে শুরু করেছেন? তিনি সাধারণত কেবল সফল অভিযানগুলোর কৃতিত্ব নিতে চান।

লেখকের মতে, সিদ্ধান্ত নেওয়া একজন নেতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু কাতারে আক্রমণের সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক—যতক্ষণ না আমরা ধরে নিই যে, আক্রমণ নিজেই ছিল মূল লক্ষ্য, সফল হোক বা ব্যর্থ।

জেরুজালেম আক্রমণের ক্ষেত্রেও নেতানিয়াহুর হঠাৎ উপস্থিতি ছিল অস্বাভাবিক। সাধারণত তিনি এমন ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনায় সরাসরি যান না, কারণ এতে দায়িত্ব সরাসরি তার ওপর এসে পড়ে। অথচ এবার তিনি উপস্থিত হয়ে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়ালেন। তিনি শুধু আক্রমণেই থামেননি, বরং এক সংবেদনশীল মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে আবারও প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেছেন।

ভেতরের উদ্দেশ্য উন্মোচন 

নেতানিয়াহু যখন ঘোষণা করলেন যে চারজন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে, তখন ইসরাইলি সমাজ গভীরভাবে ভেঙে পড়েছিল। আর ঠিক তখনই তিনি কাতার আক্রমণকে সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা দিলেন।

বাস্তবে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে আক্রমণের জন্য অনেক কারণই ছিল, কিন্তু তিনি বাড়তি ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন। কারণ তিনি জানতেন, সময় ও স্থান উভয়ই ছিল অত্যন্ত সংবেদনশীল, এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে আগেই সতর্ক করেছিলেন যে আলোচনায় বসা পক্ষকে আক্রমণ করা উচিত নয়।

তবুও তিনি স্পষ্টভাবে দেখাতে চাইলেন যে, তিনিই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং দায়ভারও তার। আর এ কারণেই তিনি আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পরও দায়ভার নিজের কাঁধে নিলেন।

দায়ভার নেওয়ার পেছনের কৌশল

অনেক সাংবাদিক ও বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন যে, নেতানিয়াহু নিরাপত্তা সংস্থার সতর্কতা উপেক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই সফলতা বা ব্যর্থতা—দুটোরই দায়ভার একান্তই তার।

লেখকের মতে, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবেই এ দায়ভার নিয়েছেন। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল সবার কাছে প্রমাণ করা যে তিনি কাতারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। ফলাফল যাই হোক, তার কাছে আক্রমণ নিজেই ছিল লক্ষ্য। এ কারণেই তিনি এটিকে জেরুজালেম অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করলেন, এ কারণেই একক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে দায়ভার নিলেন এবং ব্যর্থতা স্পষ্ট হওয়ার পরও আচরণ বদলালেন না।

উপসংহার

এই আক্রমণের মাধ্যমে নেতানিয়াহু মূলত যুদ্ধের সমাপ্তি কয়েক দিন, হয়তো কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে দিলেন এবং সবাইকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করলেন। স্বাভাবিক সম্পর্ক বা শান্তি আলোচনার প্রয়োজন কী, যখন তিনি বিশৃঙ্খল অবস্থাকেই টিকিয়ে রাখতে চান? আক্রমণ সফল হলো কিনা, কোনো সমঝোতায় প্রভাব ফেলবে কিনা—এসব তার কাছে গৌণ। নেতানিয়াহুর কাছে আক্রমণই ছিল মূল লক্ষ্য, ফলাফল নয়।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button