শিশুর সুস্থতা ও বিকাশে মায়ের দুধের অমূল্য ভূমিকা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন । প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডা. মোহাম্মদ তুর্কমান বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস উপলক্ষে মিডিয়া মিহির সামাজিক সংবাদদাতার সঙ্গে আলাপকালে মায়ের দুধের উপকারিতা নিয়ে বলেন: মায়ের দুধের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সবসময় হাতের নাগালে থাকে, আলাদাভাবে তৈরি করতে হয় না, গরম বা ঠান্ডা করার প্রয়োজন নেই এবং এর উপাদান সম্পূর্ণ ভারসাম্যপূর্ণ। অর্থাৎ, এতে শিশুদের প্রয়োজনীয় পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ সঠিকভাবে বিদ্যমান। এছাড়া, মায়ের দুধ ফর্মুলা দুধের তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। তিনি যোগ করেন: আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মায়ের দুধ প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদাভাবে মানানসই। অর্থাৎ, নবজাতকের বয়স, জন্মের সময় ওজন এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী দুধের গঠন ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপরিণত (প্রিম্যাচিউর) শিশুর জন্য উৎপাদিত দুধে বেশি খনিজ ও পুষ্টি থাকে, যা তার বৃদ্ধি ও সুস্থতার জন্য উপযোগী। এমনকি শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহ ও মাস ধরে মায়ের দুধের উপাদান পরিবর্তিত হয়, যাতে তার প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।
তুর্কমান আরও বলেন: মায়ের দুধ খাওয়া শিশুদের রোগব্যাধি তুলনামূলকভাবে কম হয়। তারা শ্বাসতন্ত্র, ফুসফুস ও মূত্রনালির সংক্রমণ, ডায়রিয়া ও বমি কম ভোগে। এমনকি প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এ ধরনের শিশুদের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি ভালো হয়।
বাগিয়াতুল্লাহ (আ.) হাসপাতালের নবজাতক বিশেষজ্ঞ জানান: মায়ের দুধে মস্তিষ্ক ও দৃষ্টিশক্তির বিকাশে সহায়ক উপাদান থাকে, যেমন লং-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬—যা মস্তিষ্ক ও চোখের রেটিনার পূর্ণ বিকাশের জন্য অপরিহার্য। মায়ের দুধে এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, অথচ ফর্মুলা দুধে এগুলো কৃত্রিমভাবে যোগ করতে হয়।
এই চিকিৎসক জোর দিয়ে বলেন: দীর্ঘমেয়াদে মায়ের দুধ খাওয়া শিশুরা বড় হয়ে হৃদরোগ, স্থূলতা, কিছু ধরনের ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসে কম আক্রান্ত হয়।
বাগিয়াতুল্লাহ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক ব্যাখ্যা করেন: মায়ের দুধ কেবল চর্বি, চিনি ও প্রোটিনের মিশ্রণ নয়; এতে জীবন্ত কোষও রয়েছে, যেমন—বিভিন্ন ধরনের সাদা রক্তকণিকা (ম্যাক্রোফাজ, নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট), টি ও বি লিম্ফোসাইট—যা অ্যান্টিবডি তৈরিতে ভূমিকা রাখে এবং শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মায়ের দুধে আরও থাকে IgA ও IgG, যা মায়ের শরীর থেকে দুধের মাধ্যমে শিশুর কাছে পৌঁছে শিশুর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
তিনি আরও জানান: মায়ের দুধে গ্রোথ হরমোন ও ইনসুলিন-সম্পর্কিত গ্রোথ ফ্যাক্টর রয়েছে, যা শিশুর টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়া, এতে ল্যাকটোফেরিন ও লাইসোজাইমের মতো প্রদাহবিরোধী ও প্রতিরক্ষামূলক উপাদানও আছে।
তুর্কমান বলেন: মায়ের দুধ শিশুর হজমতন্ত্রের জন্যও উপকারী। এতে প্রিবায়োটিক থাকে, যা অন্ত্রের উপকারী জীবাণুর (প্রোবায়োটিক) বৃদ্ধি বাড়ায় এবং ক্ষতিকর জীবাণুর বৃদ্ধি ঠেকায়। এই জীবাণুগত ভারসাম্য শিশুর হজমতন্ত্রের স্বাস্থ্য ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।