কুরআনকুরআন শিক্ষাজীবনযাপনতাফসীরধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্বহাদিস

ইমাম আলী (আ.) এর দৃষ্টিতে সঠিক ঈমানের চারটি মূল স্তম্ভ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির:ইমাম আলী (আ.) কে ঈমান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন:

وَ سُئِلَ (علیه السلام) عَنِ الْإِیمَانِ، فَقَالَ الْإِیمَانُ عَلَی أَرْبَعِ دَعَائِمَ: عَلَی الصَّبْرِ وَ الْیَقِینِ وَ الْعَدْلِ وَ الْجِهَادِ
ঈমান চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েছে: ধৈর্য (সবর), দৃঢ় বিশ্বাস (ইয়াকীন), ন্যায় (আদল) এবং জিহাদ।(নাহজুল বালাগা, হিকমাত ৩১)।

বিস্তারিত ব্যাখ্যা:

ইমাম (আ:) বলেন, ঈমানের চারটি ভিত্তি হলো: সবর, ইয়াকীন, আদল এবং জিহাদ।

. ধৈর্য (সবর):
সবরের চারটি শাখা রয়েছে: আকাঙ্ক্ষা, ভয়, সংযম ও প্রত্যাশা।

১.যে ব্যক্তি স্বর্গের আকাঙ্ক্ষা রাখে, সে অনিয়ন্ত্রিত কামনা ও লোভকে ভুলে যায়।

২.যে ব্যক্তি জাহান্নামের ভয় পায়, সে পাপ থেকে দূরে থাকে।

৩.যে ব্যক্তি সংযমী ও দুনিয়ার প্রতি উদাসীন, সে বিপদকে নগণ্য মনে করে।

৪.যে ব্যক্তি মৃত্যুর প্রত্যাশা রাখে, সে সৎকর্ম সম্পাদনে দ্রুত এগিয়ে আসে।

. দৃঢ় বিশ্বাস (ইয়াকীন):
ইয়াকীনও চারটি শাখায় প্রতিষ্ঠিত:

১-বুদ্ধিমত্তার দর্শন, জ্ঞানের গভীরতা, শিক্ষা গ্রহণ ও পূর্বপুরুষদের অনুসরণ।

২-যে ব্যক্তি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে দেখাশোনা করে, তার জন্য বিষয়ের সূক্ষ্মতা স্পষ্ট হয়।

৩-যে ব্যক্তি বিষয়ের সূক্ষ্মতা বুঝতে পারে, সে শিক্ষা গ্রহণ করে।

৪-শিক্ষা গ্রহণকারী এমন, যেন সে সর্বদা পূর্বপুরুষদের সঙ্গে রয়েছে।

. ন্যায় (আদল):
ন্যায়ের চারটি শাখা:

১.সঠিক বোঝাপড়া, গভীর জ্ঞান, সঠিক বিচার ও দৃঢ় ধৈর্য।

২.সঠিকভাবে চিন্তা করা ব্যক্তির জন্য জ্ঞানের গভীরতা স্পষ্ট হয়।

৩.গভীর জ্ঞান অর্জনকারী উৎস থেকে বিধি-পদ্ধতি অনুধাবন করে।

৪.ধৈর্য ও সহনশীলতা পালনকারী ব্যক্তির কাজকর্মে অনিয়ম হয় না এবং সে মানুষের মাঝে সম্মানজনকভাবে জীবন কাটায়।

. জিহাদ:
জিহাদের চারটি শাখা: ভালকাজের আহ্বান, মন্দকাজ থেকে বিরত রাখা, যুদ্ধে সততা এবং অসৎ ব্যক্তিদের শত্রুতা।

১-যে ব্যক্তি ভালকাজের আহ্বান দেয়, সে বিশ্বাসীদের শক্তিশালী করে।

২-যে ব্যক্তি মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে, সে কাফের ও মুনাফিকদেরকে পরাস্ত করে।

৩-যে ব্যক্তি যুদ্ধে সততা প্রদর্শন করে, সে জিহাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে।

৪-যে ব্যক্তি অসৎদের শত্রুতা রাখে ও আল্লাহর পথে ক্রোধ করে, আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন এবং পরকালে সন্তুষ্টি প্রদান করেন।

কাফেরি (অবিশ্বাস):
ইমাম (আ.) বলেছেন, কাফেরি চারটি ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়: অযথাযথ অনুসন্ধান, তর্ক ও বিরোধ, সত্য থেকে বিচ্যুতি, ও বিরোধিতা।

১. যে ব্যক্তি অনর্থক অনুসন্ধান করে, সে কখনো সত্যের পথে ফিরে আসে না।

২. যে ব্যক্তি অতিরিক্ত বিরোধে লিপ্ত, সে সত্যকে বুঝতে অক্ষম থাকে।

৩. যে ব্যক্তি সত্য থেকে বিচ্যুত হয়, ভালকে খারাপ মনে করে এবং বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে।

৪. যে ব্যক্তি হিংস্র ও জেদী, তার জন্য সত্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যায়।

সংশয় (শক):( সংশয় ও অস্থিরতা)
সংশয়ও চারটি ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়: অর্থহীন তর্ক (মারায়ে), ভয়, দ্বিধা ও আত্মসমর্পণ।

১. যে ব্যক্তি অর্থহীন তর্ককে অভ্যাসে পরিণত করে, তার সংশয়ের অন্ধকার কখনো নিশ্চিততার আলোতে পরিণত হয় না।

২. যে ব্যক্তি সত্যকে ভয় পায়, সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

৩. যে ব্যক্তি দ্বিধাগ্রস্ত, শয়তানের প্রভাবের মধ্যে পড়ে।

৪. যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসের সম্মুখীন হয়।

অবশেষে মরহুম সৈয়্যদ রজী বলেছেন: এই কথার পর আরও কিছু বক্তব্য ছিল, কিন্তু দীর্ঘ হওয়ার ভয় ও মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত না হওয়ার জন্য সেগুলো এড়িয়ে চলা হয়েছে।

সূত্র: পায়াম ইমাম (.) নাহজুল বালাগহের উপর সমকালীন বিস্তারিত ব্যাখ্যা।

আরও পড়ুন

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button