বিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

যুদ্ধবিরতি নাকি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক পতন?

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১১ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির:  বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমান সময়ে তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে জটিল এবং সম্ভবত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন। শুরু থেকেই তিনি “হামাস ধ্বংস” স্লোগানকে নিজের ক্ষমতা রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যুদ্ধাবস্থা বজায় রেখে তিনি চেয়েছিলেন ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে তার বিরুদ্ধে ওঠা তীব্র সমালোচনা ও ব্যর্থতার দায় এড়াতে। কিন্তু এখন তিনি এমন এক প্রস্তাবের মুখোমুখি, যা তার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি নির্দেশ করছে।

রাজনৈতিক আশ্রয় হারানো

যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত তার শেষ রাজনৈতিক আশ্রয় হারিয়েছেন। এতদিন যুদ্ধই ছিল তার ক্ষমতা রক্ষার ঢাল—যুদ্ধ মানেই ছিল “জরুরি অবস্থা”, যা তাকে তদন্ত, জবাবদিহি ও জনরোষ থেকে রক্ষা করত। কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে সেই অবস্থা আর থাকবে না। তখন তাকে ৭ অক্টোবরের নিরাপত্তা ব্যর্থতা, বিপুল প্রাণহানি ও বাস্তব পরাজয়ের দায় স্বীকার করতে হবে।

 

আইনি ঝুঁকি

শুধু রাজনৈতিক নয়, যুদ্ধের অবসান নেতানিয়াহুকে আইনি সংকটে ফেলবে। তার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির চারটি মামলা, যা দীর্ঘদিন যুদ্ধের অজুহাতে স্থগিত ছিল, পুনরায় খোলা হবে। যুদ্ধের আড়ালে যে “বিচার এড়ানোর আশ্রয়” তিনি তৈরি করেছিলেন, তা আর থাকবে না। যুদ্ধ থামলেই তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব আইনি দিক থেকেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

 

জোটের ভিত অস্থির

যুদ্ধবিরতি তার ডানপন্থী মিত্রদের—ইতামার বেন গাভির ও বেজালেল স্মোটরিচ—রোষের কারণ হয়েছে। এই দুই চরমপন্থী মন্ত্রী প্রকাশ্যে সরকার থেকে পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন। তাদের মতে, নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত যুদ্ধের লক্ষ্য থেকে “বিশ্বাসঘাতকতা”। ফলে তিনি এখন আন্তর্জাতিক চাপ ও জোট টিকিয়ে রাখার দ্বৈত সংকটে পড়েছেন।

যুদ্ধলক্ষ্যের ব্যর্থতা

ঘোষিত তিনটি যুদ্ধলক্ষ্য—

– হামাসের সম্পূর্ণ ধ্বংস

– কোনো ছাড় না দিয়ে বন্দিদের মুক্তি

– পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

এর কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। সেনাবাহিনী তুলনামূলকভাবে বাস্তবসম্মত সমাধান চাইলেও, নেতানিয়াহুর সরকার ডানপন্থী রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব ইসরায়েলের নিরাপত্তা কাঠামোর ভিতর গভীর আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে।

ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কোনো বিজয় কৌশল নয়; বরং এটি ক্ষমতার ভারসাম্যে মৌলিক পরিবর্তনের দলিল। হামাসের বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিরোধ এবং নেতানিয়াহুর সামরিক ব্যর্থতা ইসরায়েলকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে গেছে, যেখানে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার আর কোনো যুক্তি নেই। এই প্রস্তাব মূলত প্রতিরোধশক্তির চাপের ফল।

আজ যুদ্ধবিরতি মানে কেবল গুলিবর্ষণ বন্ধ হওয়া নয়; এটি নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক, আইনি ও জোটগত তিনদিকের পতনের সূচনা। “যুদ্ধবিরতি” যেন তার জন্য রূপ নিয়েছে এক রাজনৈতিক অগ্নিপরীক্ষায়।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button