আমেরিকার সবুজ সংকেতেই ইরাকি প্রতিরোধকে নেতানিয়াহুর হুমকি; তেলআবিব ক্ষুব্ধ
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইরাকের নুজাবা আন্দোলনের মহাসচিবের ইরানস্থ প্রতিনিধি বলেছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হুমকি মার্কিন সবুজ সংকেতেই এসেছে।ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেওয়ার সময়, গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞের কারণে বিশ্বের বহু দেশের নেতা ও কূটনীতিকদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে পড়লেও, তার ভাষণ শুরু করেন ইরান ও প্রতিরোধ অক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও হুমকি দিয়ে। হামাস, হিজবুল্লাহ, আনসারুল্লাহ থেকে শুরু করে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে তিনি সরাসরি লক্ষ্যবস্তু বানান এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।
নেতানিয়াহুর এই হুমকি, যা ইরাকের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে, ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তিনি কঠোর ভাষায় সতর্ক করে বলেন, “ইরাকের যে কোনো নাগরিকের ওপর হামলা গোটা ইরাকের ওপর হামলার সমান।”
এই প্রেক্ষাপটে ইরাকে নুজাবা আন্দোলনের মহাসচিবের ইরানস্থ প্রতিনিধি সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভির সঙ্গে মেহর নিউজ কথা বলেছে। তার বিস্তারিত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো:
কেন নেতানিয়াহু ইরাকি প্রতিরোধকে হুমকি দিলেন?
সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি বলেন, ইরাকি জনগণ ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো নেতানিয়াহুর হুমকিকে অবমাননা নয় বরং সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে।
“নেতানিয়াহুর হুমকি প্রমাণ করে যে ইরাকি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের গত দুই বছরের হামলাগুলো কতটা কার্যকর ও বেদনাদায়ক ছিল। আমরা যে হামলাগুলো করেছি — ডেড সি উপকূল, হাইফা এবং দখলদার শাসনের হৃদপিণ্ডে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও নিরাপত্তা স্থাপনায় — তা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং শত্রু এগুলো ভালোভাবেই জানে।”
তার মতে, ইরাকি প্রতিরোধ ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে, শক্তিশালী ও সংগঠিত হচ্ছে এবং অবৈধ ইসরায়েলি শাসনের জন্য একটি বাস্তব হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“ইসরায়েল জানে যে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো তাদের কৌশলগত স্বপ্ন ‘নাইল থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ড দখল’ বাস্তবায়ন করতে দেবে না। কয়েক দশক ধরে তারা এই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছে কিন্তু আমাদের প্রতিরোধই তাদের থামিয়ে দিচ্ছে।”
ইরাক ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীর আনুষ্ঠানিক অবস্থান
মুসাভি বলেন, নেতানিয়াহুর এই হুমকি বহু দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
“প্রথমত, এটি ইরাকের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও জনগণের মর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত।
দ্বিতীয়ত, ইরাকি জনগণ ও প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো একমত যে এই হুমকি মার্কিন সবুজ সংকেত ছাড়া সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, এই হুমকি কার্যকর হোক বা না হোক, এটি ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠী, তাদের সমর্থক এবং সমগ্র ইরাকের জনগণের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবেই ধরা হবে। আমরা উপযুক্ত সময়ে এর জবাব দেব।
চতুর্থত, এই ধরনের হুমকি প্রতিরোধকে কখনো দুর্বল করতে পারে না; বরং আমাদের শক্তি, স্থিতিশীলতা এবং সংকল্পকে আরও দৃঢ় করে।”
মুসাভি আরও বলেন, এই হুমকি এসেছে এমন সময়ে যখন প্রতিরোধ অক্ষের শহীদদের নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতবার্ষিকী চলছে।
“নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শাহাদাতই আমাদের পথপ্রদর্শক। আমরা নাসরুল্লাহর আদর্শ অনুসরণ করব এবং তার মতোই হয় বিজয় অর্জন করব, নয়তো শাহাদাত বরণ করব।”
ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট
মুসাভি বিশ্বাস করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য সরাসরি সংঘর্ষ ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর জন্য শিক্ষণীয় ও শক্তিবর্ধক হবে।
“আমরা জানি কিছু নেতা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি শহীদ হতে পারেন। এটি ন্যায় ও অন্যায়ের যেকোনো যুদ্ধে স্বাভাবিক ঘটনা। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আল্লাহর ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত বিজয় আমাদের হবে। শহীদদের রক্ত আমাদের পথ আলোকিত করে, আমাদের প্রেরণা দেয় এবং প্রতিরোধের ধারাবাহিকতাই শেষ পর্যন্ত বিজয় নিশ্চিত করে।”



