জীবনের মাঠে বিনয় বপন করো, সৌভাগ্য হবে তোমার ফসল
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: দুনিয়া এক বিশাল খেতখামার। এখানে যে বিনয়, ইবাদত ও নেক আমলের বীজ বপন করে—সে আখিরাতে সাফল্য, নূর ও আল্লাহর পুরস্কারের ফসল ঘরে তোলে। আর যে এ দুনিয়াতেই সব লাভ চায়, তার হাতে কেবল সাময়িক প্রাপ্তি আসে—অপরলোকে যার কোনো অংশ থাকে না।
দুনিয়ার খেতখামার—বিনয় বপন করুন, আখিরাতে সৌভাগ্য কাটুন
দুনিয়া এমনই এক কৃষিক্ষেত্র যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার নিজের বপন অনুযায়ী ফল লাভ করে। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা—নবী–রাসুলগণ, সৎলোকেরা—বিনয়, ইবাদত, ধৈর্য ও নেকির বীজ বপন করেছেন; তাই আখিরাতে তাঁদের জন্য রয়েছে নূর, শান্তি ও আল্লাহর বিশেষ প্রতিদান।
মাহে রমজান—আত্মশুদ্ধির এই বরকতময় মাসে—প্রতিদিন “জীবন-গঠনকারী আয়াতসমূহ”-এর সঙ্গে থাকা মানে হলো নিজেকে আল্লাহর বাণীর আলোয় আলোকিত করা।
কুরআনের আয়াত
بِسمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحيمِ
﴿مَن كَانَ يُرِيدُ حَرثَ الآخِرَةِ نَزِد لَهُ فِي حَرثِهِ ۖ وَمَن كَانَ يُرِيدُ حَرثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِن نَّصِيبٍ﴾
যে ব্যক্তি আখিরাতের খেতখামার কামনা করে—আমি তার ফসল বৃদ্ধি করে দিই। আর যে দুনিয়ার খেত কামনা করে—আমি তাকে এর অংশমতো কিছু দিই; তবে আখিরাতে তার কোনো অংশ থাকবে না। সূরা শূরা: আয়াত ২০।
আয়াতের ব্যাখ্যা
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন জাওয়াদ মোহাদ্দেসি এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:
দুনিয়া একটি বিশাল কৃষিক্ষেত্র:এখানে আমরা সবাই একেকজন কৃষক।
আমাদের প্রতিটি চিন্তা, কথা এবং কাজ—সবই একেকটি বীজ। যে বীজ বপন করব, আখিরাতে আমরা তারই ফল পাব।
১.যদি নেক আমল, বিনয়, ধৈর্য, দান, ন্যায় বপন করি— আখিরাতে তাদের ফল হবে সৌভাগ্য, শান্তি, জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি।
২.আর যদি শুধুই দুনিয়ার স্বার্থ, লোভ, অহংকার, গাফেলতি, অন্যায্যতা বপন করি— আখিরাতে তার ফল হবে খালি হস্তে ফিরে আসা।
দুনিয়া এক বাণিজ্যকেন্দ্রও বটে : মানুষ এখানে তার কর্ম দিয়ে পুঁজি তৈরি করছে।
বিচার দিবস সেই দিনের নাম—যেদিন আসল লাভ বা ক্ষতি ধরা পড়বে। হাদিসে এসেছে:দুনিয়া আখিরাতের খেতখামার। অর্থাৎ, এখানে বীজ না বপন করলে আখিরাতে ফসল পাওয়া সম্ভব নয়।
বিনয়—সফল কৃষকের প্রধান বীজ : ইতিহাসে আমরা দেখি— মির্জা কুচক খান, আগা বুজুর্গ, কিংবা অন্যান্য মহান মানুষরা— মর্যাদা ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের আল্লাহর ক্ষুদ্র বান্দা হিসেবে দেখতেন। নবী–রাসুলদের জীবনে এই বিনয় সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে ফুটে ওঠে। হযরত মুহাম্মদ (সা.)—যিনি সমগ্র জগতের জন্য রহমত— তিনিও আল্লাহর সামনে নিজেকে একজন নম্র বান্দা হিসেবে পরিচয় দিতেন।
কেন বিনয় এত গুরুত্বপূর্ণ?
কারণ—
১- অহংকার মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
২- সম্ভ্রমহীনতা আখিরাতের ফসল নষ্ট করে।
৩- আর বিনয় হৃদয়কে উর্বর জমিতে পরিণত করে।
বিনম্র মনের বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয়, নেক আমলের গাছ জন্মায়, এবং আখিরাতে তার ফল হয়—সফলতা ও আল্লাহর রহমত।
আমাদের করণীয়
১. নিজেকে আল্লাহর বান্দা হিসেবে জানা
২. অহংকার দূর করা
৩. নেকির বীজ বপন করা—দয়া, দান, সৎকর্ম
৪. নিয়মিত ইবাদতে স্থির থাকা
৫. মানুষের হক আদায় করা
৬. রিযিক, সময়, সুযোগ—সবকে আখিরাতের ফসলে পরিণত করা
উপসংহার
দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী—কিন্তু এখানে বপন করা প্রতিটি বীজ আখিরাতে অমর হয়ে ফিরে আসে। আজ যদি আমরা বিনয়, নেকি ও বান্দেগীর চারা লাগাই, আগামীকাল কিয়ামতের ময়দানে তার ছায়ায় দাঁড়াবো, তার ফল খাবো, আর আল্লাহর সন্তুষ্টিতে বিভোর হবো। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির বীজ বপন করার তাওফিক দান করুন—আমিন।



