ইতিহাসজীবনযাপনতাফসীরবিশেষ সংবাদবিশ্ব

নারীত্বের অবমাননা ও ইতিহাসের ছায়া: আল্লামা তাবাতাবাইয়ের দৃষ্টিতে এক অন্তর্দৃষ্টি

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৯ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মানবজীবনের প্রকৃত কল্যাণ–অকল্যাণ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন একমাত্র আল্লাহ; তাই ইসলামের আইন কোনো পরীক্ষামূলক বা মানবিক অভিজ্ঞতার ফল নয়, বরং বাস্তব উপকার ও ক্ষতির ভিত্তিতে নির্মিত। আল্লামা তাবাতাবাই বলেন, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে হলে প্রথমে ইতিহাসে ফিরে দেখতে হবে—মানবসভ্যতা নারীর প্রতি কী আচরণ করেছিল এবং ইসলাম কী পরিবর্তন এনেছে।

প্রথম অংশ

যেহেতু ইসলামের আইনপ্রণেতা নিজেই মহান আল্লাহ, তাই এ আইন মানুষের মতো পরীক্ষা–নিরীক্ষার ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়—যে আইন বানানো হলো, কিছুদিন পরে ত্রুটি ধরা পড়ল, আবার তা সংশোধন করতে হলো। ইসলামের বিধান মানুষের প্রকৃত কল্যাণ ও অকল্যাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ সৃষ্টিকর্তাই জানেন মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন কী এবং কোন পথ তার জন্য ক্ষতিকর।আল্লামা তাবাতাবাই বলেন, জিনিসকে তার বিপরীত দিয়ে চেনা যায়। তাই ইসলামী আইন কত মহান—তা বুঝতে হলে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে; অতীত ও বর্তমান জাতিগোষ্ঠীর আইন, সামাজিক রীতি এবং নারী সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

একদিকে দেখতে হবে—মানবসুখ আসলে কী?
অন্যদিকে—ইসলাম মানুষের কল্যাণে কী নির্দেশ দিয়েছে?

এই দুইয়ের তুলনায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব উন্মোচিত হয়—যেখানে আইন জীবন্ত, মানবিক এবং সৃষ্টিকর্তার জ্ঞানের আলোয় পরিচালিত।

গবেষণার দৃষ্টিকোণ:

১. ইসলামে নারীর পরিচয় কী? নারী ও পুরুষ—উভয়ের মানবিক সত্তা কি সমান?
২. নারীর সামাজিক মূল্য ও ভূমিকা কী? মানবসভ্যতায় তিনি কী অবদান রাখেন?
৩. ইসলাম নারীর জন্য কী অধিকার ও বিধান দিয়েছে?
৪. এ বিধানগুলোর ভিত্তি কী? কেন এগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে?

আরও স্পষ্ট বোঝার জন্য ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখতে হয়—ইসলামের আগের যুগে নারী কী অবস্থায় ছিল? আর ইসলামের পর, অমুসলিম সভ্যতা নারীর প্রতি কেমন আচরণ করেছে?

পশ্চাৎপদ জাতির সমাজে নারীর জীবন

বর্বর ও উপজাতীয় সমাজে (আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, আমেরিকার আদিবাসী ইত্যাদি) নারীর অবস্থান ছিল গৃহপালিত প্রাণীর মতো। যেমন মানুষ গরু–ছাগলের ওপর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ দাবি করে, ঠিক তেমনি নারীও ছিল পুরুষের ব্যক্তিগত মালিকানা। মানুষ পশুকে খাওয়ায়, বেঁধে রাখে, কাজ করায়, তার দুধ ও মাংস ব্যবহার করে—কেবল নিজের প্রয়োজন মেটাতে।

নারীকেও তেমন ব্যবহার করা হতো—
১. পুরুষের শ্রমে সহায়তা করা
২. সন্তান জন্ম দেওয়া
৩.দায়িত্ব পালন করা

তার নিজস্ব কোনো অধিকার ছিল না। যেমন পশুর জীবন নির্ভর করে তার মালিক কতটুকু সুযোগ দেয় তার ওপর— ঠিক তেমন নারীর জীবনও নির্ভর করত পুরুষের ইচ্ছা ও অনুমতির ওপর। যদি কেউ কোনো পশুকে আঘাত করত—প্রশ্ন উঠত না পশুর প্রতি অন্যায় হয়েছে কিনা; বরং প্রশ্ন উঠত মালিকের সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে কিনা। নারীর ক্ষেত্রেও একই মানসিকতা কাজ করত। এটি শুধু ইতিহাস নয়—নারী অবমাননার ভয়াবহ বাস্তবতা; আর সেখান থেকেই ইসলামের আবির্ভাব—যেখানে নারী প্রথম মানবিক মর্যাদা পেতে শুরু করে।

(চলবে…)

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button