হিংসা থেকে মুক্তির সাতটি কুরআনিক ও মনোবৈজ্ঞানিক কার্যকর উপায়
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির : হিংসা দমন করার জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। এখানে আমরা সাতটি কুরআনিক উপায় তুলে ধরছি।
প্রথম উপায়: “অস্তিত্বের ধন-সম্পদ ও আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি মনোযোগ”
অস্তিত্বের ধন-সম্পদ বলতে মানুষের জীবনের সেই সব সম্ভাবনা ও উপহার বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহ তার প্রজ্ঞা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এই উপহার মানুষকে অনন্য করে তোলে। প্রত্যেকের জন্য এই ধন-সম্পদ ভিন্ন হতে পারে; যেমন—কেউকে অনেক সম্পদ দেওয়া হয় কিন্তু সন্তান দেওয়া হয় না; কারো সন্তান হয়, কিন্তু ধন-সম্পদ কম; কেউ গাড়ি পায় না, কিন্তু সুস্থতার আশীর্বাদ পান।
দ্বিতীয় উপায়: “আল্লাহর ন্যায়ের প্রতি মনোযোগ”
হিংসা দূর করার আরেকটি কুরআনিক উপায় হলো আল্লাহর ন্যায়ের প্রতি বিশ্বাস রাখা। আল্লাহ মানুষের মধ্যে যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন তা তাঁর ন্যায়ের ভিত্তিতে। এই পার্থক্য ও প্রভাবশালী অবস্থান জীবনব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন। আল্লাহ বান্দাদের পরামর্শ দেন—নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না, কারণ এটি শুধুমাত্র বাহ্যিক এবং দেখার বাইরে অনেক বিষয় লুকানো থাকে।
সূরা জুখরুফ, আয়াত ৩২-এ আল্লাহ বলেছেন:আমরা তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিকে অন্যদের তুলনায় উচ্চতর স্থানে স্থাপন করেছি, যাতে কিছু ব্যক্তি অন্যদের সেবায় নিয়োজিত হয়; এবং এটি সৃষ্টি ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ।
তৃতীয় উপায়: “আল্লাহপ্রেমী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ”
হিংসা দূর করার আরেকটি কার্যকর উপায় হলো সব পার্থক্য ও অবস্থানকে আল্লাহর দৃষ্টিতে দেখা। অর্থাৎ, এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে, তা আল্লাহর। সকল পার্থক্য ও বৈষম্য আল্লাহর প্রজ্ঞা ও ন্যায়ের ফল।
চতুর্থ উপায়: “আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ধৈর্য”
আমিরুলমুমিনীন আলী (রা.) বলেন:
“আল্লাহর স্মরণে মনোনিবেশ করলে হৃদয় উন্নত হয়, পরিচ্ছন্ন হয় এবং মানসিক রোগ থেকে মুক্ত থাকে।”
যিনি আল্লাহর প্রতি প্রকৃত বিশ্বাস রাখেন, তার হৃদয়ে হিংসার স্থান হয় না।
পঞ্চম উপায়: নিজের সক্ষমতা ও বাস্তবসম্মত ইতিবাচক প্রতিভা চিনতে শিখা
যেমনটি আগে বলা হয়েছে, হিংসার মূল কারণগুলির মধ্যে একটি হলো আত্মবিশ্বাস হারানো এবং নিজের প্রতি অধঃপতনের অনুভূতি। তাই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার এবং হিংসা প্রতিরোধ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো নিজের প্রতিভা ও সক্ষমতা চিনতে শেখা।
হিংসুক ব্যক্তি অন্যের সম্পদ বা সফলতা চাইতে চাইলে বা হিংসা অনুভব করলে, বরং তার নিজের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং নিজের প্রতিভা ও সক্ষমতা আবিষ্কারের চেষ্টা করা উচিত। এছাড়া তাকে বোঝা প্রয়োজন, যে অন্য ব্যক্তি তার অবস্থানে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে পৌঁছেছে। তাই তিনি নিজেও চেষ্টা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে অনুরূপ সাফল্য অর্জন করতে পারেন।
অর্থাৎ, হিংসার পরিবর্তে আত্মবিশ্বাসী হয়ে, চেষ্টা ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে, নিজেকে সেই অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব যা তার অধিকার এবং যা সে চাইছে।
ষষ্ঠ উপায়: তৃপ্তি ও সন্তুষ্টি বৃদ্ধির চেষ্টা
ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, সংযম ও তৃপ্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদি মানুষ নিজেকে দুনিয়ার আয়ত্ত থেকে মুক্ত রাখে, তাহলে তিনি সহজভাবে ও তৃপ্তিভরে জীবন যাপন করতে পারবেন। আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) বলেন:
“যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন অনুযায়ীই সন্তুষ্ট থাকে, তার শান্তি ও স্থায়ী আরাম নিশ্চিত থাকে।”
সপ্তম উপায়: হিংসার ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া
হিংসার ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন থাকা একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধমূলক ও চিকিৎসামূলক উপায়। যখন মানুষ জানে ইর্ষা কত ধরনের ক্ষতি ডেকে আনে—দুনিয়াবি এবং আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই—তাহলে সে আর হিংসা পোষণ করবে না এবং নিজের জীবন ও মনোভাবকে উঁচু দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে।
হিংসার ক্ষতিকারক প্রভাবের মধ্যে রয়েছে—সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, তীব্র উদ্বেগ (যা মূলত মনোবৈজ্ঞানিক), গোপনে অন্যের প্রতি কুপ্রচারণা, তেমনকি মানসিক ও নৈতিক ক্ষতি। এই ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা নিজেই একটি প্রতিরোধমূলক উপায় হিসেবে কাজ করে।