বারযখ ও কিয়ামতের প্রশ্ন: দুই জগতের জিজ্ঞাসা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: বারযখ ও কিয়ামত—উভয়ই এমন দুটি জগৎ, যেখানে মানুষের বিশ্বাস, কর্ম ও চরিত্রের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ হয়। তবে এই দুই জগতের প্রশ্নের ধরন, গভীরতা ও উদ্দেশ্যে রয়েছে মৌলিক পার্থক্য, যা মানুষের পরকালীন নিয়তি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাসউদ আলি,তিনি একজন প্রখ্যাত ইরানি ধর্মতাত্ত্বিক বক্তা, যিনি ইসলামী দর্শন, পরকালচিন্তা এবং নৈতিকতা বিষয়ে গভীর আলোচনায় বলেন:বারযখে প্রশ্ন করা হয় মূল বিশ্বাস ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসম্পর্কে। এটি এক ধরনের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ। যেমন: “তুমি কি নামাজ পড়তে?”—এই প্রশ্নটি মূলত নামাজের অস্তিত্ব নিয়ে। কিন্তু কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হবে: “তোমার নামাজে নিয়ত কী ছিল?”, “তোমার পোশাক কি হালাল উপায়ে অর্জিত ছিল?”, “তোমার রুকু, সিজদা ঠিক ছিল কি না?”—অর্থাৎ প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।
বারযখে প্রশ্ন করা হয় সেই মৌলিক বিশ্বাসগুলো নিয়ে, যা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও জীবনের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করে। যেমন: “তোমার উপাস্য কে ছিল?”, “তোমার ধর্ম কী?”, “তোমার নবী ও ইমাম কে ছিলেন?” এছাড়া কিছু নির্দিষ্ট আমল যেমন নামাজ, রোজা, হজ, খুমস ইত্যাদি নিয়েও প্রশ্ন করা হয়, কারণ এই আমলগুলো বিশ্বাসের সত্যতা প্রমাণ করে।
তাদের আরও প্রশ্ন করা হয়: “তোমার জীবিকা কোন পথে অর্জিত হয়েছিল—হালাল না হারাম?”, “তুমি তোমার যৌবন ও জীবন কোন পথে ব্যয় করেছ?”
এই প্রশ্নগুলোর উদ্দেশ্য হলো—যে ব্যক্তি দাবি করে, “আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি”, তার সেই দাবির প্রমাণ কী? যদি সে বলে, “আমি নবী ও ইমামকে মানি”, তবে প্রশ্ন হবে: “তুমি কি তাদের হক আদায় করেছ?”, “তুমি কি খুমস দিয়েছ?”, “তুমি কি নিজের আয় সৎ পথে অর্জন করেছ?”, “তুমি কি নিজের সময় আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ?”
এই প্রশ্নগুলো পরীক্ষার প্রশ্নের মতো নয়, যেখানে উত্তর দিতে সময় দেওয়া হয়। বরং ফেরেশতারা সহজেই মানুষের অন্তর থেকে উত্তর বের করে নেন।
যদি কেউ এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে সফল হয়, তবে তার জন্য বারযখে জান্নাতের দরজা খুলে যায়। সে জান্নাতের এক ঝলক পায়, যাতে তার বারযখের সময় শান্তিতে কাটে। আর যদি কেউ ব্যর্থ হয়, তবে তার জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে যায়।
এই প্রশ্নগুলো বারযখে প্রবেশের শুরুতেই হয়। সেখানে কোনো অনিশ্চয়তা বা বিলম্ব নেই—প্রথম পদক্ষেপেই মানুষের অবস্থান নির্ধারিত হয়ে যায়।



