জীবনযাপনকুরআনকুরআন শিক্ষাধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

কেন ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী এবং ১৪ জন মাসুম ইমামের মধ্যে কেবল একজন নারী ছিলেন?

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১২ অক্টোবর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির:  ইসলামী ইতিহাসে নবুয়াত ও ইমামত একটি দায়িত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যদিও ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী এবং ১৪ জন মাসুম ইমামের মধ্যে কেবল একজন নারী উপস্থিত ছিলেন, এটি নারীর আধ্যাত্মিক ও মানবিক মর্যাদার অবমূল্যায়ন করে না। নবুয়াত প্রধানত প্রশাসনিক ও কার্যকরী দায়িত্ব হওয়ায় সাধারণত পুরুষদের মধ্যে দেখা গেছে, কিন্তু মানব জীবনের প্রকৃত কামাল (পরিপূর্ণতা)— স্রষ্টার নৈকট্য—লিঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। মহীয়ান নারী যেমন হযরত ফাতিমা (সা.আ.), হযরত মরিয়ম (সা.আ.), হযরত আাসিয়া (সা.আ.), হযরত জয়নব কুবরা (সা.আ.) এবং হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.আ.) আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ ও স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।

কেন ১ লক্ষ ২৪ নবী এবং ১৪ জন মাসুম ইমামের মধ্যে কেবল একজন নারী ছিলেন?
প্রথম কারণ: কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যে কেবল একজন নারীই মাসুম (পবিত্র) হবেন। মহীয়ান নারীরা যেমন হযরত জয়নব কুবরা (সা.আ.) এবং হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.আ.) আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ বা ইসমত অর্জন করেছেন, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে “মাসুম” উপাধি তাদের দেওয়া হয়নি। এটি প্রমাণ করে যে নারীরাও ঈশ্বরের নৈকট্য অর্জনে সক্ষম।

দ্বিতীয় কারণ: নবুয়াত ও রিসালাত একটি প্রশাসনিক ও কার্যকরী দায়িত্ব। এটি শারীরিক শক্তি, ধৈর্য, সামাজিক পরিস্থিতি এবং নেতৃত্বের যোগ্যতা প্রয়োজন, যা সাধারণত পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। নবী হিসেবে কাজ মানে কেবল স্রষ্টার বার্তা প্রচার নয়, বরং সেই বার্তাকে রক্ষা, সম্প্রসারণ এবং পরিচালনা করার দায়িত্বও পালন করতে হয়।

তবে মানব জীবনের প্রকৃত কামালত (পরিপূর্ণত বা “ওলায়াহ্ ইলাহি” লিঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ই আধ্যাত্মিক সাধনা, তাকওয়া এবং ঈমানের মাধ্যমে এই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেন।

মহীয়ান নারীরা যারা এই উচ্চতা অর্জন করেছেন বা অর্জনের পথে ছিলেন:
• ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আাসিয়া (সা.আ.), যিনি তার ঈমানের জন্য বিশ্বস্ততার প্রতীক ছিলেন।
• হযরত মরিয়াম (সা.আ.), যিনি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে পবিত্র সন্তান ধারণ করেছেন।
• হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.), ইসলামের ইতিহাসে আধ্যাত্মিক মর্যাদা ও মাতৃত্বের প্রতীক।
• হযরত জয়নব কুবরা (সা.আ.), কারবালার ঘটনার সময় সাহস, ধৈর্য ও ইসলামের রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
• হযরত ফাতিমা মাসুমা (সা.আ.), আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা ও ইলাহি নৈকট্য অর্জন করেছেন।

যেহেতু, নবুয়াত ও ইমামত একটি প্রশাসনিক ও কার্যকরী দায়িত্ব। নারীদের শারীরিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে এটি সাধারণত পুরুষদের মধ্যেই দেওয়া হয়েছে।

তবে, ওলায়াহ বা ইলাহি নৈকট্য মানব জীবনের সর্বোচ্চ কামালত (পরিপূর্ণতা), যা লিঙ্গের ওপর নির্ভরশীল নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ই সৎ জীবন,তাকওয়া এবং ঈমানের মাধ্যমে এটি অর্জন করতে পারেন।

সংযোজন:
• নবুয়াত প্রশাসনিক ও শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজন রাখে, কিন্তু ওলায়াহ শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক নিখুঁততার বিষয়।
• মহীয়ান নারীরা সমাজ ও ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা প্রমাণ করে নারীর আধ্যাত্মিক কৃতিত্ব লিঙ্গের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।
• আধ্যাত্মিক সাধনা, ধৈর্য ও তাকওয়া দ্বারা নারী ও পুরুষ উভয়ই স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম।

সূত্র: তাসনিম-এ আন্দিসে, দফতর- ১, পৃষ্ঠা- ৮৪

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button