এতেকাফের বিধান ও ফজিলত
এতেকাফ আরবি শব্দ -যার অর্থ হচ্ছেঃ কোন কিছুর পাশে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিবন্ধ থাকা বা আবদ্ধ অবস্থায় থাকা। কিন্তু যখন ইবাদতের উদ্দেশ্যে শব্দটি ব্যবহৃত হয়, তখন শব্দটির দ্বারা বিশেষ নিয়তে ইবাদতের জন্য কোন পবিত্র ইবাদতের স্থানে অবস্থান করাকে বুঝায়।
শরিয়তের পরিভাষায়, যে মসজিদে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত হয়, সেই মসজিদে পার্থিব বিষয়াবলী পরিত্যাগ করে মহান আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। এই ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অহকাম বা নিয়মাবলী ও আদব মেনে চলতে হয়। এতেকাফ এমন একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত যার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াবী বিষয় ছেড়ে বাহ্যত আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যায়। এতেকাফ সুন্নতে মোয়াক্কাদা আলাল কেফায়া অর্থাৎ মহল্লার কোনো একজন মুসলিম এতেকাফের ইবাদত সম্পাদন করলে, সেই মহল্লার সবার পক্ষ থেকে তা আদায় করার বাধ্যবাধকতা উঠে যাবে; আর কেউ তা পালন না করলে সবাই গুনাহগার হবে। এক কথায় বলতে গেলে, এই ইবাদতের জন্য কমপক্ষে ৩ দিন নির্ধারণ করে নিতে হবে, যে ৩ দিনে রোজা অবস্থায় থাকতে হবে। আর কিছু আচার-আচারণ ও অভ্যাস পরিহার করে চলতে হবে এবং সেই সাথে ওয়াক্তিয়া নামাজগুলোকে জামাতের সাথে আদায় করতে হবে।
সন্যাস-ব্রত বা (সামাজিকতা পরিহার করে) এক কোণে পড়ে থাকাকে -যদিও ইসলাম শক্তভাবে বিরোধিতা করে, কিন্তু মানুষ প্রয়োজনে আল্লাহর সাথে নির্জনতা-অবলম্বন করতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিক ও যথাযথভাবে নিয়ম মাফিক হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। সেই জন্য যে বিশেষ নীতিমালা রয়েছে তা মেনে চলার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এই ইবাদত সাধারনত নির্জন পরিবেশে সংক্ষিপ্ত নামাজ শেষে শুরু করতে হবে। অতপর রাতের নির্জন পরিবেশে (দীর্ঘ-সময়ের জন্য) তাহাজ্জুদের নামাজ ও দোয়া-মুনাজাতের নসিহত করা হয়েছে। ওয়াক্তিয়া (ফরজ) নামাজগুলোর পরও এতেকাফের (ইবাদত ও দুয়াগুলোতে) আদবের সাথে দীর্ঘ সময় ব্যায় করতে হবে।
এই আধ্যাতিক-নির্জনতার ইবাদতকে পরিপূর্ণ করতে, এতেকাফকে ৩ দিন পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ সহ অব্যাহত রাখতে হবে। এই কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেও রমজান মাসের মতই কখনো কখনো চন্দ্র মাসের ১০ তারিখগুলোতে, এতেকাফের নিয়তে মসজিদে থাকতেন এবং সাহাবিগণকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতেন।
পবিত্র কুরআনেও এতেকাফের বিষয়টি বর্ণিত রয়েছে। যেমন সূরা বাকারার ১২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ দিয়েছিলাম যেন তারা আমার ঘরকে (কাবা) তাওয়াফকারীদের জন্য, এতেকাফকারীদের জন্য ও (সর্বোপরি তাঁর উদ্দেশ্যে রুকু ও সিজদাহকারীদের জন্য পবিত্র রাখে।”
উল্লেখ্য যে, এতেকাফ কেবল দ্বীন-ইসলামের বিশেষ ইবাদত নয় বরং তা কিছু পার্থক্য ও পরিবর্তন সহকারে পূর্ববর্তী ধর্মেও বিষয়টি পালিত হতো। তবে ইসলামে এতেকাফের বিষয়টি অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাসুল (সঃ) বলেনঃ “এতেকাফকারী নিজেকে পাপ থেকে মুক্ত রাখার কারণে তাঁর জন্য সকল পুণ্যকাজ সম্পাদনের সওয়াব জারি রাখা হয়”।
বর্তমানে বেশীর ভাগ মুসলিম দেশগুলোতে রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে এতেকাফ আনুষ্ঠানিক ভাবে পালন করা হয়। ইরানেও এতেকাফের নিয়তে রজব-মাসের ১৩-১৪-১৫ তারিখে, আট হাজার জামে মসজিদে, প্রায় দশ লক্ষেরও অধিক মানুষের সমাগম ঘটে; যারা সবাই নির্জনতা অবলম্বনপূর্বক, এতেকাফের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকঠ্য ও সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতে নিমগ্ন থাকেন।
এতেকাফের শর্তগুলো হচ্ছে
১. নিয়ত করা। ২. নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে এতেকাফ করা। ৩. এতেকাফকারী রোজাদার হওয়া। ৪. জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান নারী-পুরুষের জানাবাত ও মহিলাদের হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া। ৬. পুরুষের জন্য জামে মসজিদে এতেকাফ করা এবং নারীদের নিজেদের ঘরে এতেকাফ করা। ৭. সর্বদা পাক-পবিত্র থাকা।
মিডিয়া মিহির/ধর্ম ও বিশ্বাস/কামরুল হাসান