জীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

জাহান্নামের খাদ্য: কোরআনের বহুমাত্রিক বর্ণনা ও প্রতীকী অর্থ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: কোরআনে জাহান্নামের খাদ্য কখনও ضَريع (শুকনো কাঁটা), কখনও غِسلين (চর্কাবা), আবার কখনও زقّوم  বৃক্ষের ফল বা ফুটন্ত পানি হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এই বহুবিধ উপস্থাপন আসলে প্রতীকী সতর্কতা—যাতে বোঝানো হয়, জাহান্নামের শাস্তি একরূপ নয়; বরং মানুষের গুনাহের মাত্রা অনুযায়ী তা ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ পায়।

বহুমাত্রিক শাস্তির প্রতীক কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে জাহান্নামের খাদ্যকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে উল্লেখ করা হয়েছে। এক জায়গায় বলা হয়েছে: তাদের জন্য কোনো খাদ্য নেই, শুধু ضَريع (শুকনো কাঁটা)”। অন্যত্র বলা হয়েছে: “আজ তাদের জন্য নেই কোনো বন্ধু, নেই কোনো খাদ্য, শুধু غِسلين (চর্কাবা)।

এতে আপাতদৃষ্টিতে বৈপরীত্য মনে হলেও, প্রকৃত অর্থ হলো—জাহান্নামের শাস্তি স্তরভেদে ভিন্ন। কারও খাদ্য হবে যাক্কুম বৃক্ষের ফল, কারও হবে চর্কাবা, কারও পানীয় হবে ফুটন্ত পানি, আবার কারও জন্য থাকবে পুঁজ ও রক্তের মতো তরল।

ضَريع (শুকনো কাঁটা) এটি হিজাজ অঞ্চলের এক ধরনের গাছ, যার কোনো খাদ্যগুণ নেই। পশুরা এটি খেলে না তৃপ্ত হয়, বরং দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই কোরআনে ضَريع-এর উল্লেখ আসলে প্রতীকী—জাহান্নামের বাসিন্দারা কখনও তৃপ্ত হবে না, বরং চিরকাল ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কষ্ট পাবে।

غِسلين (চর্কাবা) غِسلين শব্দটি এসেছে غَسَلتُ থেকে, যার অর্থ ধোয়া বা ধোয়ার পরের ময়লা। মুফাসসিররা বলেন, এটি হলো সেই পুঁজ ও রক্ত, যা শাস্তিপ্রাপ্তদের শরীর থেকে বের হয়। জাহান্নামের কিছু বাসিন্দার খাদ্য হবে এই ঘৃণিত তরল।

প্রতীকী ব্যাখ্যা কেউ প্রশ্ন করতে পারে—আগুনে তো গাছপালা পুড়ে যায়, তবে জাহান্নামে গাছ কীভাবে থাকবে? উত্তর হলো, এগুলো দুনিয়ার গাছ নয়; বরং আখিরাতের বাস্তবতা। যেমন শৃঙ্খল, সাপ-বিচ্ছু বা অন্যান্য যন্ত্রণা জাহান্নামে আগুনে নষ্ট হয় না। তাই ضَريع বা زقّوم বৃক্ষও আখিরাতের বিশেষ সৃষ্টির অংশ।

উপসংহার

কোরআনে জাহান্নামের খাদ্যের ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা আসলে একই বাস্তবতার বহুমাত্রিক প্রতীক। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষের মনে ভয়, ঘৃণা ও সতর্কতার অনুভূতি জাগানো—যাতে তারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভোগের পরিবর্তে আখিরাতের মুক্তির পথে অগ্রসর হয়।

সংগৃহীত গ্রন্থ: কোরআন কারিমকে ঘিরে উত্থাপিত সংশয়সমূহের সমালোচনা, লেখক: মুহাম্মদ হাদি মারেফাত; অনুবাদকবৃন্দ: হাসান হাকিমবাশি, আলী আকবর রুস্তমি, মির্জা আলীজাদে, হাসান খোরকানি; প্রকাশক: তামহীদ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান; দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৮৮ হিজরি শামসি; পৃষ্ঠা ৩৫৪–৩৫৬।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button