মস্কোতে সহযোগিতা কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন আরাকচি ও ল্যাভরভ
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইরান ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং সের্গেই ল্যাভরভ বুধবার মস্কোতে এক বৈঠকের পর একটি সহযোগিতা কর্মসূচি সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেছেন। বৈঠকের শেষে স্বাক্ষরিত এই নথিটি ইরান–রাশিয়া সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় প্রণীত। এতে ২০২৬ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পরামর্শ ও সহযোগিতার রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সহযোগিতা নথিতে স্বাক্ষরের পর আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেন,
“আজ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে চলতি বছরে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও রুশ ফেডারেশনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে।”
আরাকচি আরও বলেন, “২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত সমন্বিত অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের সহযোগিতা নতুন এক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। চুক্তিটি বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে এবং উভয় পক্ষ এতে নির্ধারিত দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে অগ্রসর হচ্ছে।”
তিনি জানান, “আজ স্বাক্ষরিত নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২৬–২০২৮ সময়কালের জন্য দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত হয়েছে, যা আগামী তিন বছরের সহযোগিতার একটি রোডম্যাপ হিসেবে কাজ করবে। ইরান–রাশিয়া সম্পর্ক সর্বাঙ্গীণ ও বহুমাত্রিক।”
অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে আরাকচি বলেন, “ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি, পরিবহন ও ট্রানজিট খাতে সহযোগিতা এগিয়ে চলেছে, বিশেষ করে কৌশলগত উত্তর–দক্ষিণ করিডোর এবং এর রাশত–আস্তারা অংশে।”
তিনি যোগ করেন, “দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা সম্প্রসারণে নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ১৭টি বিশেষায়িত কর্মদল অংশ নেবে।”
পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানের অবস্থান তুলে ধরে আরাকচি বলেন, “পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে ইরান তার সব বাধ্যবাধকতা পালন করে; তবে চুক্তির আওতায় নিজের বৈধ অধিকার থেকে কখনো সরে আসবে না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সমৃদ্ধিকরণসহ পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ইরানের অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং সাম্প্রতিক হামলা সত্ত্বেও এই অধিকার অক্ষুণ্ন রয়েছে।”
আরাকচির ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্র ও জায়নবাদী শাসনের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় কিছু ভবন ও সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা ইরানের স্বদেশীয় প্রযুক্তি ধ্বংস করতে বা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দৃঢ় সংকল্প দুর্বল করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আধিপত্যবাদ, হুমকি ও দ্বৈত মানদণ্ডের বিরুদ্ধে—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে—একটি সুস্পষ্ট ঐকমত্য গড়ে উঠছে।”
আঞ্চলিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আরাকচি জানান, “ইরান ও রাশিয়া গাজায় ইসরাইলি গণহত্যাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে।” তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের দাবি সত্ত্বেও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।”
অন্যদিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, “রাশিয়া ব্রিকসকে পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রস্তুত এবং যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান অব্যাহত রাখবে।” তিনি বলেন, “ইরান ও রাশিয়ার শত্রুরা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।”
ল্যাভরভ আরও জানান, “রাশিয়া ও ইরান ব্রিকস এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-এর মতো বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা জোরদার করতে আগ্রহী।”
তিনি সমালোচনা করে বলেন, “আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলার বিষয়ে এখনো সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে ব্যর্থ হয়েছে।”



