ইতিহাসজীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্বসংবাদ বিশ্লেষণ

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে: তোমরা কী জানো মানুষ কী—আর তার অধিকারই বা কী!

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের প্রেক্ষাপটে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী পশ্চিমা বিশ্বের মানবাধিকার দাবিকে ভণ্ডামি হিসেবে সমালোচনা করেছেন। তার মতে, পশ্চিমা শক্তিগুলো প্রকৃতপক্ষে ধর্মহীনতা ও আধিপত্য বিস্তার চায়, কিন্তু মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে নিজেদের নৈতিকতার আড়ালে স্বার্থ হাসিল করে। তিনি ফিলিস্তিন, আফ্রিকা ও অন্যান্য নিপীড়িত জনগণের পক্ষে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অবস্থানকে মানবাধিকারের প্রকৃত প্রকাশ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

পশ্চিমা বিশ্বের তথাকথিত মানবাধিকার-চর্চার ভণ্ডামি নিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য এখানে উপস্থাপন করা হলো:

মানবাধিকার—শত্রুর নতুন মুখোশ

আজ ইরানের জনগণকে আরও সতর্ক হতে হবে, কারণ শত্রু নানা নাম ও স্লোগানের আড়ালে— তার মধ্যে অন্যতম “মানবাধিকার”—ইসলাম ও ইসলামী বিপ্লবকে আঘাত করার ছল খুঁজছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর ‘মানবাধিকার রক্ষা’র দাবি নিছক ভণ্ডামি— যা একই সঙ্গে হাস্যকর ও হৃদয়বিদারক। হাস্যকর— কারণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় অপরাধীরাই মানবাধিকারের কথা বলে বেড়ায়। আজ মানবাধিকার নিয়ে বক্তব্য দেয় কারা? যারা এখনো ফিলিস্তিনের নিরপরাধ মানুষের রক্তে হাত রাঙিয়ে রেখেছে। অতীতে এশিয়া-আফ্রিকার অসংখ্য জাতিকে ধ্বংস করেছে। মানবাধিকারের নামে সবকিছুই উপহাস করেছে।

ফিলিস্তিনের রক্ত ঝরিয়ে মানবাধিকারের বুলি

আজও আমেরিকা ও তার মিত্রদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে সায়োনিস্ট শাসন ব্যবস্থা ফিলিস্তিনের জনগণকে ভয়াবহ নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ও দমন-পীড়নের মধ্যে ফেলে রেখেছে। শহীদ ফিলিস্তিনিদের রক্তের দায় তাদেরই। অথচ তারাই মানবাধিকার দাবিদার!—এ কি নিছক উপহাস নয়?

মানবতার জন্য এর চেয়ে বড় বেদনা আর কী হতে পারে যে নৈতিক মূল্যবোধ ও মানবিক ধারণা আজ এমন নোংরা রাজনীতিকদের হাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে? তারা ইরানকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে—যেখানে ইসলামই মানবাধিকারের সর্বোত্তম রক্ষাকবচ।

আমরা কেন নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াই?

আমরা কেন ফিলিস্তিনের মানুষের পক্ষ নিই? কেন বিশ্বের যে কোনো নিপীড়িত জনগণের জন্য আওয়াজ তুলি? দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই।

তবু আমরা কেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের পাশে দাঁড়াই—যেখানে তথাকথিত ‘গণতান্ত্রিক’ সরকারগুলো আসলে স্বৈরশাসনের মুখোশ পরে মানুষকে ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করে?

ফ্রান্সে—একজন মুসলিম কন্যাকে হিজাব পরতে দেওয়া হয় না। আমেরিকায়—সরকারি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে একজন মুসলমানকে মারধর করে, কারণ সে বিমানবন্দরে নামাজ পড়েছিল। যেখানে যেখানেই কোনো অসহায় মানুষ আর্তনাদ করে—আমরা আমাদের কর্তব্য মনে করি তার পাশে দাঁড়াতে, অন্তত তার কণ্ঠকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিতে। এটি ইসলামি শিক্ষার অংশ, মানবাধিকারের প্রতি ইসলামের অটল প্রতিশ্রুতি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা কারা?

তোমরাই সেই শক্তি যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছো। তোমরাই জাতিসংঘ, মানবাধিকার কমিশন ও মানবিক বিবেচনাকে খেলাচ্ছলে ব্যবহার করেছো।

আমাদের কাছে মানুষের মর্যাদা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তার সুরক্ষার জন্য আমরা বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে প্রস্তুত। বহু বছর আমেরিকাপন্থী শাসকরাই ইরানে রাজত্ব করেছে—এই রাস্তায় শত শত, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে আজও একই বর্বরতা তাদের দোসরদের দ্বারা সংঘটিত হয়। কারাগারগুলো নিরীহ মানুষে ভরা, অথচ বৈশ্বিক মঞ্চে কেউ মুখ খোলে না।

কেন শুধু ইরানকেই নিশানা করা হয়?

তোমরা যদি মানবাধিকারবাদী হও, তবে কেন সেই দেশগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলো না—যেখানে স্বৈরতন্ত্রের কষাঘাত, যেখানে কখনো জনগণের সামনে একটি ভোটবাক্সও রাখা হয়নি?

কেন কেবল ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে লক্ষ্য করো—যেখানে জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, নিয়মিত স্বাধীন নির্বাচন হয়, মানুষ রাস্তায়–ময়দানে নিজ মত প্রকাশ করতে পারে?

মানবাধিকার নয়—তোমাদের লক্ষ্য আধিপত্য

তোমরা মানবাধিকার রক্ষা করো না; তোমাদের লক্ষ্য ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠা ও দেশ-জাতির ওপর আধিপত্য বিস্তার। ইরান থেকে তোমাদের অপবিত্র হাত কেটে গেছে—তাই তোমরা ক্ষুব্ধ। তোমাদের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য ক্ষয়ে যাচ্ছে—তাই তোমরা ইসলামী বিপ্লবের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন।

এই বিপ্লবই তোমাদের দোসরদের ইরান থেকে বিতাড়িত করেছে—তাই তোমাদের ক্ষোভ। মানবাধিকার কেবলই অজুহাত। তোমরা কি আদৌ বোঝো মানুষ কী—তার অধিকারই বা কী?

ইরানের জনগণকে অবশ্যই সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। বৈশ্বিক ঔপনিবেশিক শক্তির এই সর্বব্যাপী শত্রুতাকে চিনতে হবে—এবং আল্লাহর কৃপায় দেশের জনগণের বিশাল অংশ আজ এই বাস্তবতাকে পরিষ্কারভাবেই বুঝে।

[ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী’র বক্তব্য, ২৮ নভেম্বর ১৯৯০]

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button