নবুয়তের আয়না | যখন নবীর কন্যা নবুয়তের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: নবী করিম (সা.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত ফাতিমা (সা.আ.) মাত্র পঁচাত্তর দিন জীবিত ছিলেন। এই সংক্ষিপ্ত সময়েই জিবরাঈল আমীন বারবার তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়ে ভবিষ্যতের নানা বিষয়—সন্তানদের উত্তরাধিকার ও নবুয়তের ধারাবাহিকতা—উন্মোচন করেছিলেন। এমন মর্যাদা কেবল শ্রেষ্ঠ নবীগণ ও বিশেষ ওলিদের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল, আর এ মহিমা হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর জন্য একক ও অতুলনীয়।
হযরত ইমাম সাদিক (আ.) বর্ণনা করেন: ফাতিমা (সা.আ.) পিতার ইন্তেকালের পর পঁচাত্তর দিন জীবিত ছিলেন। গভীর শোক ও বেদনা তাঁকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এ সময়ে জিবরাঈল আমীন তাঁর কাছে আসতেন, সান্ত্বনা দিতেন এবং ভবিষ্যতের ঘটনাবলি বর্ণনা করতেন।
এই রেওয়ায়েতের প্রকাশ্য অর্থ হলো, ঐ পঁচাত্তর দিনে এক ধারাবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল; জিবরাঈলের আগমন ছিল ঘনঘন ও অব্যাহত। এমন ঘটনা শ্রেষ্ঠ নবীদের বাইরে আর কারও ক্ষেত্রে ঘটেনি।
জিবরাঈল আমীন ঐ সময় ভবিষ্যতের বিষয়সমূহ বারবার ব্যাখ্যা করতেন এবং হযরত আলী (আ.) সেগুলো লিখে রাখতেন। যেমন তিনি রাসূলের (সা.) ওহীর লেখক ছিলেন, তেমনি ঐ দিনগুলোতে ফাতিমা (সা.আ.)-এর জন্যও ওহীর কাতিব ছিলেন।
জিবরাঈলের অবতরণ কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। তাঁর আগমন কেবল সেই আত্মার ওপর সম্ভব, যার মহিমা ও আধ্যাত্মিকতা জিবরাঈলের মহত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ধরনের সামঞ্জস্য কেবল শ্রেষ্ঠ নবীগণ—ইবরাহিম, মূসা, ঈসা ও রাসূলুল্লাহ (সা.)—এর সাথেই বিদ্যমান ছিল।
কিন্তু হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর ক্ষেত্রে এই বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ঐ পঁচাত্তর দিনে জিবরাঈল বারবার তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়ে ভবিষ্যতের ঘটনাবলি, বিশেষত তাঁর বংশধরদের যুগে সংঘটিত বিষয়সমূহ, বর্ণনা করতেন। হযরত আলী (আ.) সেগুলো লিখে রাখতেন। সম্ভবত এর মধ্যে তাঁর মহান বংশধর ইমাম মাহদী (আ.)-এর যুগে সংঘটিত ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে ইরানের বিষয়ও আলোচিত হয়েছে।
আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদী (রহ.) বলেন, আমি এই মর্যাদাকে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)-এর সর্বোচ্চ গৌরব মনে করি। কারণ এটি এমন এক ফজিলত যা কেবল শ্রেষ্ঠ নবীগণ ও কিছু বিশেষ ওলিদের জন্য নির্দিষ্ট, অন্য কারও জন্য নয়। ধারাবাহিক পঁচাত্তর দিনের এই সম্পর্ক ইতিহাসে আর কারও ক্ষেত্রে ঘটেনি। এ মহিমা একান্তই হযরত সিদ্দিকা ফাতিমা (সা.আ.)-এর জন্য নির্দিষ্ট।
সূত্র: জামী আজ্ জোলাল কাওসার , গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৩৬ ও ৩৭।



