নবুয়তের আয়না | হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর শিয়া ও অনুরাগীরা কীভাবে জান্নাত লাভ করবেন?
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির: কিয়ামতের দিনে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর শাফাআত উদিত সূর্যের মতো দীপ্ত ও মহিমান্বিতভাবে প্রকাশ পাবে। তিনি শুধু তাঁর সন্তান ও অনুসারীদেরই নয়, বরং তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণকারীদেরও— যেমন একটি পাখি উৎকৃষ্ট দানা বেছে নেয়— মানুষের মধ্য থেকে আলাদা করে নেবেন, যাতে তাদের মর্যাদা ও স্থান সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রয়াত মরহুম আলেম আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদি (রহ.)–এর মূল্যবান বয়ানের একটি নির্বাচিত অংশ পাঠকদের উদ্দেশে উপস্থাপন করা হলো:
কিয়ামতের ময়দানে শাফাআতকারীদের মাঝে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর নাম সর্বোচ্চ মর্যাদায় আলোকিত হয়ে উঠবে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং আহলে বাইত (আ.)–এর বহু নির্ভরযোগ্য হাদিসে তাঁর অতুলনীয় ও সর্বব্যাপী শাফাআতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
এই শাফাআত এতই বিস্তৃত যে তা শুধু তাঁর শিয়া, সন্তান ও অনুসারীদেরই নয়, বরং যারা তাঁর বন্ধুদের বন্ধু—তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করে।
এখানে কিয়ামতের ময়দানে তাঁর শাফাআতের মহান চিত্র ফুটিয়ে তোলা কয়েকটি হাদিসের সারমর্ম তুলে ধরা হলো।
১. কিয়ামতের ময়দানে সম্মানময় ঘোষণা
কিয়ামতের ভয়াবহ মুহূর্তে হঠাৎ জিবরাইল (আ.)–এর পক্ষ থেকে এক মহিমান্বিত ঘোষণা শোনা যাবে— غُضّوا أَبصارَكُم حتّى تَجوزَ فاطِمَةُ بنتُ مُحَمَّد
“তোমরা দৃষ্টি নিচু করো—যতক্ষণ না মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা অতিক্রম করেন।”
এই ঘোষণার পর কোনো নবী, কোনো সিদ্দিক, কোনো শহীদ—কেউই ব্যতিক্রম হবে না; সবাই সম্মানসূচকভাবে দৃষ্টি নিচু করে দাঁড়াবে।
জিবরাইল (আ.)–এর নেতৃত্বে হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–এর সওয়ারি অগ্রসর হয়ে আরশের সামনে পৌঁছাবে। সেখানে তিনি নেমে আল্লাহর দরবারে আরজি পেশ করবেন।
তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করবেন— يا حَبيبَتي! سَليني تُعْطَی، واشْفَعي تُشَفَّعي…
“হে আমার প্রিয় বান্দা! যা চাইবে তা দেয়া হবে; যার জন্য শাফাআত করবে—তা গ্রহণ করা হবে।”
হযরত ফাতিমা (সা.আ.) আরজ করবেন— إلهي! ذُرّيتي وشيعَتي وشيعةُ ذُرّيتي ومُحبّي ومُحبّ ذُرّيتي…
“হে আমার রব! আমার সন্তানরা, আমার শিয়ারা, আমার সন্তানদের শিয়ারা, এবং যারা আমাকে ও আমার সন্তানদের ভালোবাসে…।”
তখন আল্লাহ ঘোষণা করবেন— “ফাতিমার সন্তানরা কোথায়? তাঁর শিয়া ও অনুরাগীরা কোথায়?”
ফেরেশতারা তাঁদের ঘিরে নেবে, আর হযরত ফাতিমা (সা.আ.) তাঁদের অগ্রভাগে থেকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবেন; তাঁর অনুসারীরা তাঁর পথ অনুসরণ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
২. মর্যাদা প্রদর্শনের মহিমান্বিত দৃশ্য
এক লক্ষ ফেরেশতা হযরত ফাতিমা (সা.আ.)–কে তাঁদের ডানায় বহন করে জান্নাতের দরজায় নামিয়ে দেবে। তিনি সেখানে থেমে যাবেন এবং এখনও জান্নাতে প্রবেশ করবেন না; তাঁর দৃষ্টি থাকবে কিয়ামতের ময়দানের মানুষের দিকে।
আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন—
“হে আমার প্রিয় হাবিবের কন্যা! কেন থেমে গেলে, অথচ তোমাকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে?”
তিনি আরজ করবেন— “রব! আজকের দিনে আমার প্রকৃত মর্যাদা যেন প্রকাশ পায়— এটাই আমার কামনা।”
আল্লাহ তখন নির্দেশ দেবেন— “হে ফাতিমা! ময়দানের প্রতিটি মানুষের হৃদয় দেখো; যার হৃদয়ে তোমার বা তোমার সন্তানদের প্রতি সামান্যতম ভালোবাসাও পাও—তাকে জান্নাতে নিয়ে নাও।”
এরপর হযরত ফাতিমা (সা.আ.) তাঁর অনুরাগী, শিয়া ও প্রেমিকদেরকে মানুষের ভিড় থেকে আলাদা করে নেবেন, যেমন একটি পাখি উৎকৃষ্ট দানা বেছে তুলে নেয়।
উৎস: জামী আজ জালালে কাওসার, পৃষ্ঠা- ২৯



