শিশুদের অশোভন বাক্যপ্রয়োগ নিবারণের উপযুক্ত উপায় কী?
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর গালিগালাজ বন্ধ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সম্পূর্ণ উপেক্ষা। কারণ বাবা-মা বা আশপাশের মানুষের যে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াই শিশুর খারাপ শব্দকে আরও দৃঢ় করে তোলে। সচেতন নীরবতা ও বিযুক্ততা শিশুকে স্বাভাবিকভাবে সেই শব্দ ভুলে যেতে সাহায্য করে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন সাইয়্যেদ আলীরেজা তারাশিয়ুন এক প্রশ্নোত্তরে শিশুদের গালিগালাজ থামানোর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
প্রশ্ন: আমার দুই বছর আট মাসের একটি ছেলে আছে। সে সম্প্রতি গালাগালি করা শুরু করেছে। আমি আশপাশের লোকদের অনুরোধ করেছি যেন খারাপ কথা না বলে, কিন্তু সবার কথাবার্তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমি নিজেও, একজন মা হিসেবে, ক্লান্ত হয়ে যাই এবং কখনও কখনও দ্রুত রেগে উঠি। কী করলে সে এই খারাপ কথাগুলো ভুলে যাবে?
উত্তর: এই মায়ের জন্য একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম আছে—যদি তিনি এটি ভালোভাবে মেনে চলেন, শিশুর মনে খারাপ শব্দগুলি বেশিদিন টিকবে না এবং আচরণটিও স্থায়ী হবে না।
নিয়মটি হলো: যখন শিশু খারাপ শব্দ বলে, তখন কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখানো যাবে না। বলতে হবে না—
১. এটা খারাপ।
২. আমি কষ্ট পেলাম।
৩. আর বলবে না!
কেন? কারণ শিশু বুঝে ফেলে যে আমরা কোনো আচরণে সংবেদনশীল হলে সেটি তার মনে স্থায়ী হয়ে যায়। যখন আমরা বলি: – “এই শব্দ খারাপ,” – “আমি কষ্ট পাই,” – “আর বলবে না,” তখন সে আসলে একটি বার্তা পায়: এই শব্দটি অন্যদের বিরক্ত করতে পারে। এবং পরে সে যখনই কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বা বিরক্তি দেখাতে চাইবে, তখনই সেই শব্দ ব্যবহার করবে। ফলে যে আচরণ আমরা সবচেয়ে ঘৃণা করি, সেটিই তার কাছে মনোযোগ পাওয়ার অস্ত্র হয়ে ওঠে। এ কারণে সচেতন উপেক্ষা প্রয়োগ জরুরি। আমরা ভাবি, ভালো শিক্ষা মানে বেশি কথা বলা, বোঝানো, নিষেধ করা। অথচ অনেক সময় সেরা শিক্ষা ঘটে হিসেবি নীরবতা ও উপেক্ষার মাধ্যমে।
শিশু যখন খারাপ শব্দ বলবে, আমরা বুঝব—কিন্তু প্রকাশ করব না। এই “না-দেখা” আচরণটি শিশুর মনে ওই শব্দকে স্থায়ী হতে দেবে না এবং সে খুব দ্রুত ভুলে যাবে।
শিক্ষার মৌলিক নিয়ম: মনোযোগ = আচরণকে শক্তিশালী করে
উপেক্ষা = আচরণকে নিস্তেজ করে
যদি আমরা গুরুত্ব দিই, শব্দটি শিশুর মনে শক্তিশালী হয় এবং সে তা পুনরাবৃত্তি করে। এভাবেই আমরা ক্লান্ত ও অসহায় বোধ করতে শুরু করি।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শুধু মা নন—আশপাশের মানুষেরও জানা উচিত, যখন শিশু খারাপ শব্দ বলে: – উপদেশ দেবে না – নিষেধ করবে না – কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না – এমনকি বিরক্তিও প্রকাশ করবে না
এভাবে আচরণ করতে হবে যেন কেউ শুনেইনি।
এই উপায়ই শিশুর মনে সেই শব্দের স্থায়িত্ব কমিয়ে আনে এবং দ্রুত তা ভুলে যেতে সাহায্য করে।



