ইতিহাসজীবনযাপনবিশেষ সংবাদবিশ্ব

দেশপ্রেম কি আল্লাহর পথে পৌঁছানোর একটি রাস্তা হতে পারে?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: যে ভালোবাসা মাটির জন্য নয়, মাটিতে বেঁচে থাকা সত্যের জন্য জাগে; যে প্রেম ক্ষণিকের উত্তাপ নয়, বরং চিরন্তন আগুনের মতো জ্বলে—সেই প্রেমই মানুষের আত্মাকে আসমানে তুলে দেয়। দেশপ্রেম আর আদর্শের প্রতি বিশ্বাস এমনই দুটি পবিত্র আবেগ, যা আত্মত্যাগের সিঁড়ি বেয়ে মানুষকে ফেরেশতার কাছাকাছি নিয়ে যায়। শহীদে-মিল্লাত অধ্যাপক  ‍মুর্তোজা মোতাহারী (রহ.) লিখেছেন,মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা আসলে মানবিক বিশ্বাসেরই এক উজ্জ্বল প্রকাশ।

ক্ষণিকের নেশা, নাকি চিরন্তনের আহ্বান? যুবকের হৃদয় যখন সুন্দর মুখের ঝলকে কেঁপে ওঠে, কোঁকড়া চুলের ছোঁয়ায় অস্থির হয়, কোমল হাতের স্পর্শে পাগল হয়ে যায়—তখন সে ভাবে এই-ই প্রেম। কিন্তু না। এ তো কেবল শরীরের ক্ষুধা, প্রাণীর মতো বস্তুগত টান। এ প্রেম আসে ঝড়ের মতো, চলে যায় ধুলোর মতো। এর মধ্যে কোনো মহত্ত্ব নেই, কোনো গভীরতা নেই; আছে শুধু বিপদ আর চরিত্রের ধ্বংস।

কামনা নিজে কখনো মহৎ হয় না। কিন্তু যখন আত্মা তার ঝড় সহ্য করে, তার লোভের কাছে মাথা নোয়ায় না—তখনই সেই শক্তি রূপান্তরিত হয়, হয়ে ওঠে আত্মার পুষ্টি, আত্মার উড্ডয়নের ডানা।

যে প্রেম আত্মাকে দেবত্ব দেয় মানুষের আরেক প্রেম আছে—যা কামনার বিপরীত মেরুর তারা। এ প্রেম কুরআনের ভাষায় “মাওয়াদ্দাত” ও “রহমত”। এ প্রেমে মানুষ নিজের জন্য চায় না, প্রিয়জনের জন্য নিজেকে মুছে ফেলে। এ প্রেমে জাগে শ্রদ্ধা, জাগে মহিমা, জাগে এমন ভালোবাসা যে নিজের জীবনও তার পায়ে বিছিয়ে দিতে দ্বিধা করে না।

এই প্রেম থেকে জন্ম নেয় কোমলতা, আন্তরিকতা, ত্যাগের সৌরভ আর মানবিক সৌন্দর্য। আর কামনা থেকে জন্ম নেয় হিংসা, নিষ্ঠুরতা আর অপরাধের অন্ধকার।

মায়ের কোল থেকে শহীদের রক্ত পর্যন্ত মায়ের বুকের ভালোবাসা, সাধু-দরবেশের প্রতি শ্রদ্ধা, আল্লাহর ওলীর প্রতি মুগ্ধতা, দেশের জন্য জীবন দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, আদর্শের জন্য রক্ত ঝরানোর প্রতিজ্ঞা—সবই এই উচ্চতর আবেগের ফুল।

যখন এই আবেগ তার পূর্ণ যৌবনে পৌঁছায়, তখন আত্মা আর মানুষ থাকে না—সে হয়ে ওঠে মহিমায় ভাস্বর, মর্যাদায় উজ্জ্বল, ব্যক্তিত্বে পরিপূর্ণ। এ প্রেম কখনো মরে না; মিলনের পর সে আরও গভীর হয়, আরও অটুট হয়। কিন্তু কামনার প্রেম? মিলনই তার মৃত্যু, মিলনই তার কবর।

শহীদ মোতাহারী (রহ.)-এর অমর গ্রন্থ জাযেবে ও দাফেয়ে আলী (আ.) পৃষ্ঠা ৫১–৫২।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button