ইতিহাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

তানাসুখ বা পুনর্জন্ম কী এবং কেন তা আকলের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য না?

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১ ডিসেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: তানাসুখ—আত্মার দেহান্তরের প্রাচীনতম কল্পনা—মৃত্যুর পর নতুন দেহে আত্মার পুনঃপ্রবেশের কথা বলে; কিন্তু দর্শনের সূক্ষ্ম বিচার ও বুদ্ধির শাসনে এ বিশ্বাস নানা মৌলিক অসংগতি নিয়ে দাঁড়ায়।

তানাসুখ এমন এক প্রাচীন মিথ বা মতবাদ, যার মতে মৃত্যুর পর আত্মা আরেক দেহে গমন করে; কিন্তু প্রজ্ঞা ও দর্শনশাস্ত্রের বিচারে এ ধারণা বহু মৌলিক প্রশ্নে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

তানাসুখ আত্মার এক দেহ থেকে অন্য দেহে অন্তহীন পরিক্রমার কথা তোলে; অথচ যুক্তিবোধের কঠোর আলোয় এ ধারণা স্থির থাকতে পারে না।

তানাসুখের পরিচয়: বিজ্ঞানের ও ধর্মতত্ত্বের দৃষ্টি

‘তানাসুখ’ বলতে বোঝায়—মানুষের আত্মা মৃত্যুর পর এই জগতেই অন্য দেহে উপস্থিত হয়; কখনো মানুষের, কখনো পশুর, কখনোবা বৃক্ষ বা অন্য জীবের অবয়বে। কেউ কেউ একে কাব্যিক নাম দিয়েছে—‘জন্মান্তরের পর জন্মান্তর’—আত্মার অনাদিকালব্যাপী দেহ-পরিব্রাজন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

এ বিশ্বাসের শিকড় সুদূর অতীতে প্রসারিত। ব্রাহ্মণ্য দর্শন, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মশিক্ষা, এবং সাবিয়ান ধর্মধারার কিছু শাখায় তানাসুখ এক মহাগুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে বিবেচিত। তাদের মতে— সংসার–বিমুখ হয়ে নির্মল হলে মানুষ দেবত্বের সান্নিধ্যে উন্নীত হয়। সৎ হলে আত্মা উন্নত দেহে গমন করে এবং সুকর্মের ফল ভোগ করে।

পাপী হলে কঠোর দেহে বন্দি হয়ে দুঃখভোগ করে; আর আত্মার এই যাত্রা চলতে থাকে অনন্তকাল। এই ধারণায় বিশ্বলীলার শেষ নেই—কিয়ামত বা পরলোকের কোনো পরিণতি এখানে স্থান পায় না।

তানাসুখের দার্শনিক অসারতা

১. এক দেহে দ্বি-আত্মা—অযুক্তিকর ধারণা

যদি কোনো পরিপূর্ণ আত্মা নতুন দেহে প্রবেশ করে, তবে: দেহে যদি আত্মা পূর্বেই থাকে, তবে এক দেহে দুই আত্মার অবস্থান স্বীকার করতে হয়—যা যুক্তিতর্কে অসম্ভব। আর যদি দেহ নির্জীব হয়, তবে পরিণত আত্মাকে আবার অপরিণত অবস্থায় ফেরানো হয়—যা দর্শনের ভাষায় ‘বস্তুতে পশ্চাদ্গমন’, এবং তা অসম্ভব।

২. ক্রমোন্নতির বিধানের বিরোধিতা

আত্মা ধাপে ধাপে পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হয়। সেই পূর্ণ আত্মাকে হীন দেহে স্থাপন করা মানে উন্নতির গতিপথ ভঙ্গ করা; যা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

৩. আত্মা ও দেহের স্বভাবজাত বৈসাদৃশ্য

আত্মা নিজের দেহের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে জ্ঞান, অনুভূতি ও চেতনাকে গড়ে তোলে। সেই পরিণত আত্মাকে অপরিচিত ও অসম দেহে প্রতিস্থাপন করা আত্মা–দেহের স্বাভাবিক সামঞ্জস্যনীতির বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button