ইতিহাসকুরআনতাফসীরবিশেষ সংবাদবিশ্ব

নারীর দায়িত্ব নির্ধারিত হোক তার যোগ্যতায়, নয় লিঙ্গবৈষম্যে

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: ইসলামী শরিয়ত নারী ও পুরুষের মধ্যে মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে সমতা; কিন্তু সৃষ্টিগত প্রকৃতি ও দায়িত্বের পার্থক্যের কারণে কিছু স্থানে বিশেষ বিধান প্রবর্তন করেছে। এ বিধান বৈষম্যের জন্য নয়, বরং পরিবার ও সমাজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য। মহান মুফাসসির ‘আল্লামা তাবাতাবায়ী (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ তাফসীরে আল-মীযান-এ এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গভীর ও সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।

ইসলামের পবিত্র বিধানে নারী প্রায় সকল ইবাদত, সামাজিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদায় পুরুষের সমান-সম্পূর্ণ সহভাগী। শুধু সৃষ্টিগত স্বাভাবিক পার্থক্যের কারণে কতিপয় বিশেষ ক্ষেত্রে ভিন্নতর নির্দেশ এসেছে—যেমন উত্তরাধিকার, বিচারকার্য, জিহাদের সম্মুখ যুদ্ধ এবং পর্দার বিধান। এর বিনিময়ে ভরণপোষণ, সুরক্ষা ও সম্মানের দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে অর্পিত হয়েছে। নারীর জন্য উপার্জন করা বা বাইরের কর্মজীবন গ্রহণ করা ফরয নয়; কিন্তু যদি তিনি শিক্ষা অর্জন করেন, সমাজসেবা করেন কিংবা উপার্জনে অংশ নেন, তবে তা তাঁর মর্যাদার শিরোভূষণরূপে গণ্য হয় এবং ইসলাম তাকে প্রশংসার সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে।

নবী করীম (সা.)-এর পবিত্র সুন্নাহ নারীর সম্মান, নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে এমন উচ্চতায় স্থাপন করেছেন যা বিশ্বের অন্য কোনো জীবনবিধান দিতে পারেনি।

নারী ও পুরুষের সাধারণ ও স্বতন্ত্র বিধান

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ মানবিক মর্যাদা ও অধিকারে সম্পূর্ণ সমান। উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষালাভ, জ্ঞানদান, ন্যায়সংগত অধিকার আদায় এবং আত্মরক্ষা—এ সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছেন। শুধুমাত্র সেই স্থানগুলোতে বিশেষ বিধান এসেছে যেখানে নারীর স্বভাবজাত সূক্ষ্ম প্রকৃতি ভিন্নতর সুরক্ষা ও সম্মান দাবি করে।

এমন কয়েকটি ক্ষেত্র হলো:

১.রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব ও বিচারকের পদ

২.যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখ সমর (তবে আহতদের সেবা, পশ্চাদ্‌বর্তী সাহায্য—এসব নারীর জন্য অনুমোদিত ও প্রশংসিত)

৩.উত্তরাধিকারে পুরুষের অংশের অর্ধেক প্রাপ্তি

৪.পর্দা ও সৌন্দর্যের পবিত্র আবরণ রক্ষা

৫.দাম্পত্য সম্পর্কে স্বামীর প্রাপ্য অধিকার পূরণে সহযোগিতা

কিন্তু এর বিনিময়ে ইসলাম নারীকে যা দান করেছে তা অতুলনীয়:

১.পিতা বা স্বামীর ওপর জীবিকার পূর্ণ দায়িত্ব

২.স্বামীর সম্পদ ও শক্তির শেষ সীমা পর্যন্ত স্ত্রীর সুরক্ষা ও কল্যাণের নির্দেশ

৩.সন্তান প্রতিপালন ও তাদের হেফাজতের প্রথম ও সর্বোচ্চ অধিকার

৪.ঋতুস্রাব ও প্রসবোত্তর সময়ে ইবাদতের বাধ্যবাধকতা থেকে পূর্ণ অব্যাহতি—যা ইসলামের অপরিসীম দয়া ও মমতার প্রতীক

সারকথা, নারীর ওপর শুধু আকীদা, মৌলিক দ্বীনি জ্ঞান ও ইবাদতের ফরযই আরোপিত। উপার্জন, উচ্চশিক্ষা, পেশাগত জীবন, কারিগরি দক্ষতা কিংবা সমাজকল্যাণমূলক কর্ম—এসব তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু যদি তিনি এ পথে পা বাড়ান, তবে তা তাঁর মুকুটে আরেকটি উজ্জ্বল রত্ন হয়ে জ্বলে, এবং ইসলাম তাঁকে সেই গৌরবের স্বীকৃতি দেয় হৃদয় থেকে হৃদয়ে।

যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া পুরুষের জন্য এমন আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করা পর্যন্ত নিষেধ।

আরও স্থান থাকলে এখানে রাসূলে পাক (সা.)-এর স্ত্রী হযরত খাদীজা (সা.আ.), কন্যা হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.আ.) এবং আহলে বায়েতের মহিয়সী নারীদের জীবনকাহিনি ও তাঁদের প্রতি নবীজির শেষ ওসিয়তসমূহ উদাহরণরূপে তুলে ধরা যেত। পাঠক এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে সূরা আন-নিসার তাফসীরে আল-মীযানের সংশ্লিষ্ট অংশ পড়তে পারেন।

উৎস: তাফসীরে আল-মীযান ,খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪১২।

আরও পড়ুন 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button