শহীদ মোর্তাজা মোতাহ্হারী (রহ.): কোরআন পড়ার সঠিক পদ্ধতি
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: কোরআনকে সত্যিকারের হৃদয়ে ধারণ করতে গেলে কেবল জিহ্বায় আয়াত ঘোরানো যথেষ্ট নয়। দরকার তার ভাষার সৌন্দর্যে ডুব দেওয়া, তার অবতরণের ইতিহাসের রক্তমাংস অনুভব করা এবং নবী ও ইমামদের আলোকবর্তিকায় তার গভীরতা দেখা। শহীদ মোর্তাজা মোতাহ্হারী (রহ.) আমাদের শিখিয়েছেন—কোরআনের দরজা খোলে তিনটি চাবি দিয়ে: আরবি ভাষার সুগভীর জ্ঞান, শান-এ-নুযূলের প্রেক্ষাপট এবং রাসূল ও আহলে বাইতের বাণীর স্নিগ্ধ আলো।
শহীদ মোতাহ্হারী (রহ.) কোরআনের সঙ্গে প্রেমে পড়ার তিনটি অপরিহার্য শর্ত আমাদের উপহার দিয়েছেন। এই তিনটি শর্ত যেন তিনটি উজ্জ্বল তারা—যাদের আলোয় কোরআনের আকাশ আমাদের সামনে পুরোপুরি উন্মোচিত হয়।
১. আরবি ভাষার সৌন্দর্যে ডুব দিতে হবে
কোরআন আরবিতে নেমেছে। যেমন হাফেজের গজল বা সা’দির গোলেস্তাঁ বোঝার জন্য ফার্সি ভাষার সূক্ষ্ম স্বাদ না নিলে কিছুই বোঝা যায় না, তেমনি কোরআনের আধ্যাত্মিক সৌরভ ও শব্দের জাদু উপভোগ করতে গেলে আরবির গভীরে ডুব দিতে হয়। একটি শব্দের মধ্যে দশটি স্তর লুকিয়ে থাকে—কখনো তা রহমতের বৃষ্টি, কখনো সতর্কতার বজ্র। ভাষা না জানলে আমরা কেবল উপরের খোলস ছুঁই, ভিতরের মণি-মুক্তো হাতছোঁয়া থেকে বঞ্চিত থেকে যাই।
২. শান-এ-নুযূলের আলোয় আয়াতকে দেখতে হবে
কোরআন একটি বই নয়, একটি জীবন্ত ইতিহাস। তেইশ বছর ধরে নবীর হৃদয়ে, যুদ্ধের ময়দানে, হিজরতের রাতে, তায়েফের পাথরের আঘাতে, তাবুকের তপ্ত বালুতে ধীরে ধীরে নেমেছে। প্রতিটি আয়াতের পেছনে আছে একটি বুক কাঁপানো ঘটনা, একটি ক্রন্দন, একটি বিজয়ের হাসি। শান-এ-নুযূল জানা মানে আয়াতকে তার জন্মের কক্ষে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া, তারপর দেখা—সেই আয়াত আজও আমাদের বুকের ভেতর কীভাবে জ্বলছে। এ জ্ঞান আয়াতকে সীমাবদ্ধ করে না, বরং তার পাখা মেলে দেয় চিরন্তন আকাশে।
৩. নবী ও আহলে বাইতের আলোয় পথ চলতে হবে
কোরআন নিজেই বলে, “তোমাদের যা জানা নেই, তা রাসূল তোমাদের শিখিয়ে দেবেন।” নবী (সা.) কোরআনের জীবন্ত তাফসীর। আর শিয়া বিশ্বাসে তাঁর পরে সেই আলোর ধারাবাহিকতা বয়ে চলেছে পবিত্র ইমামদের মাধ্যমে। ইমাম সাদিক (আ.)-এর একটি বাক্য কখনো কখনো একটি আয়াতের এমন গভীরতা খুলে দেয়, যা শত তাফসীর পড়েও পাওয়া যায় না। এঁদের বাণী যেন কোরআনের জন্য সোনার চাবি—যে চাবি দিয়ে তার বন্ধ দরজাগুলো একে একে খুলে যায়।
উপসংহার
কোরআন পড়া নয়, কোরআনের সঙ্গে বসবাস করা। একটি বিজ্ঞান, একটি শিল্প, একটি প্রেম। যে তিনটি পথে হাঁটে—ভাষার পথে, ইতিহাসের পথে, আহলে বাইতের আলোর পথে—সে একদিন দেখতে পায়, কোরআন আর তার বুকের মধ্যে কোনো পর্দা রইল না।
শহীদ মোতাহ্হারী আমাদের শুধু পথ দেখাননি, তিনি নিজে সেই পথে হেঁটে আমাদের হাত ধরে টেনেছেন। আসুন, আমরাও সেই তিন তারার আলোয় পথ চলি—যাতে কোরআন আমাদের চোখে নয়, আমাদের হৃদয়ে নেমে আসে।
সূত্র: কোরআন পরিচয়, খণ্ড প্রথম, পৃ. ১৮–১৯”



