যদি কেউ যুবক বয়সে নিজেকে সংশোধন না করে, বার্ধক্যে সেই অভাব পূরণ করা অত্যন্ত কঠিন
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইরানের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও মারজায়ে তাকলীদ আয়াতুল্লাহ আব্দুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি (দা.বা.) এক লেখায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, মানুষ যদি এই সরজ-সরল ধারণা ধরে রাখে যে বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে সে তার গুনাহগুলো সংশোধন করবে, তবে তার অবস্থা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
কারণ—
প্রথমত, সে বর্তমানে করণীয় সংশোধনকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে;
দ্বিতীয়ত, বার্ধক্যে এসে শয়তানের নতুন ফাঁদ ও প্রবঞ্চনা তার সংশোধনের পথ আটকে দেবে।
শয়তান কি বৃদ্ধদের ছেড়ে দেয়? সে কি তাদের জন্য আলাদা ফাঁদ তৈরি করে না? বৃদ্ধ মানুষের জন্য তাকাসুর (ধন–সম্পদ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা, পরিবার, অনুসারী বা বাহ্যিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে অহংকার, দুনিয়ার বৃদ্ধি ও প্রদর্শনীর প্রতি আসক্তি, ‘আরও বেশি’ অর্জনের লোভ, যা কখনো শেষ হয় না…)—কি এক নতুন পথভ্রষ্টতা নয়?
যে ব্যক্তি যুবক বয়সে নিজেকে ঠিক করতে পারেনি, বার্ধক্যে তার জন্য সংশোধন কঠিন—কারণ তখন তাকে যুবকের ভুলের দায়ও বহন করতে হবে, আবার বার্ধক্যের ঝুঁকিগুলোর জবাবও দিতে হবে।
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহর দীর্ঘশ্বাস
একবার জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.)–এর সামনে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন (تنفّسُ الصُّعَدَاء), অর্থাৎ অন্তর থেকে ভারী “আহ” উঠল।হযরত আলী (আ.) জিজ্ঞেস করলেন: “এই দীর্ঘশ্বাস কি দুনিয়ার জন্য?”
জাবির বললেন, “হ্যাঁ।”
তখন হযরত আলী (আ.) বললেন, “হে জাবির! আমি তোমাকে দুনিয়াকে ব্যাখ্যা করি, যাতে তুমি বুঝতে পারো— দুনিয়া মোটেই দীর্ঘশ্বাস ফেলার মতো কোনো জিনিস নয়।”
এরপর তিনি বললেন— দুনিয়ার সব আনন্দ শেষ পর্যন্ত খাদ্য, বস্ত্র এবং ইন্দ্রিয়সুখে সীমাবদ্ধ। দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম খাদ্য হলো বিশুদ্ধ মধু—যা একটি ক্ষুদ্র কীটের তৈরি! আর সবচেয়ে উন্নত পোশাক হলো রেশম—যা আরেকটি কীটের উৎপাদন!
সুতরাং ধিক তার প্রতি—যে এই কারণে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যে কেন তার কাছে রেশম নেই (অর্থাৎ এক কীটের তৈরি বস্তু পায়নি), অথবা কেন তার কাছে মধু নেই (অর্থাৎ মৌমাছির পরিশ্রম থেকে সে কিছু পায়নি)।” [বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৭৫, পৃ. ১১]
পার্থিব ভোগ–বিলাস কখনোই আফসোস করার মতো নয়। পদ–পদবীও ক্ষণস্থায়ী এক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। আর আল্লাহ অহংকারী, আত্মম্ভরী মানুষকে ভালোবাসেন না।



