মুমিনের হৃদয়ে আনন্দ দেওয়া—ইবাদতের শ্রেষ্ঠ রূপ
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইসলাম মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সৌজন্যকে ইবাদতের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। ইমাম মুহাম্মদ আল-বাকির (আ.) মানুষের মুখে হাসি ফোটানো ও দুঃখ লাঘব করার মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন ইবাদতের প্রকৃত সৌন্দর্য। তাঁর বাণী মানবিকতার সেই অনাবিল দ্যোতনা প্রকাশ করে।
قَالَ الإِمَامُ مُحَمَّدُ البَاقِرُ (ع): تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ حَسَنَةٌ، وَكَشْفُكَ الكُرْبَةَ عَنْهُ حَسَنَةٌ، وَمَا عُبِدَ اللهُ بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ إِدْخَالِ السُّرُورِ عَلَى قَلْبِ الْمُؤْمِنِ.
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন:কোনো ব্যক্তির তার ভাইয়ের দিকে হাসি দেওয়া একটি নেকি, তার কষ্ট দূর করা একটি নেকি। আর মুমিনের মনে আনন্দ দেওয়ার চেয়ে আল্লাহর নিকট প্রিয় কোনো ইবাদত নেই। (মাজমাউ’ল বায়ান, আল-কাফি, বিহারুল আনওয়ার, অন্যান্য শিয়া সূত্রে বর্ণিত)
ব্যাখ্যা: ইমাম বাকির (আ.)-এর এই বাণী মানবিকতার গভীর মহিমা তুলে ধরে। এ কথাগুলো যেন আমাদের হৃদয়ে এক অনাবিল আলোকরশ্মি হয়ে প্রবেশ করে। তিনি বলছেন— মানুষের প্রতি একটি মমতাময় হাসি, একটি উষ্ণ অভিবাদন, কিংবা সামান্য সান্ত্বনার শব্দ—এসবই আল্লাহর কাছে নেকি হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।
এখানে দুটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে—
১.হাসি: কারও মুখে হাসি ফোটানো শুধু সৌজন্য বা সামাজিক আচরণ নয়; এটি আল্লাহর নিকট একটি সওয়াবময় কাজ। মানুষের সাথে সদাচরণ, বিনয় ও আন্তরিকতার প্রকাশ হিসেবে একটি হাসিই সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করে।
২.দুঃখ-কষ্ট দূর করা: মানুষের দুঃখ দূর করা ইসলামে অত্যন্ত মহৎ কাজ। একটি কষ্ট লাঘব করতে পারা মানে তার হৃদয়ের ভার হালকা করা। এই কাজটিকে ইমাম (আ.) “হাসানাহ”—অর্থাৎ নেকি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এরপর তিনি যে বিষয়টিকে “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত” বলেছেন, তা হলো— মুমিনের হৃদয়ে আনন্দ সঞ্চার করা।
এটি ইঙ্গিত করে যে, ইবাদত কেবল রুকু, সিজদা বা রোজা-নামাজেই সীমাবদ্ধ নয়। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দয়া, উপকার, সান্ত্বনা—এসবে নিহিত রয়েছে ইবাদতের গভীরতম তাৎপর্য।
ইমাম বাকির (আ.) আমাদের শেখাচ্ছেন— ইবাদতের প্রকৃত সার আসলে মানুষের মনের ভেতর আলো জ্বালানোতে। একটি হাসি, একটি সাহায্যের হাত, একটি মমতাময় কথা—এসবই আল্লাহর নিকট প্রিয় ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।
সারকথা:মানুষের হৃদয়ে আনন্দ ঢুকানো শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতারও পথ। ইমাম বাকির (আ.)-এর শিক্ষায় তাই স্পষ্ট—কারও মনে সুখের বীজ বোনা—এটাই ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম রূপ।



