ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা বৃদ্ধি ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে বিরত রাখছে: আইআরজিসি মুখপাত্র
রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
মিডিয়া মিহির: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও সামরিক প্রস্তুতির উচ্চমাত্রা তুলে ধরে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি-মোহাম্মদ নায়েনি বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে নতুন যুদ্ধ শুরু করার মতো সামর্থ্য বা সাহস ইসরায়েলের নেই।
মেহর নিউজ এজেন্সির তথ্য মতে, দেশের নিরাপত্তাজনিত সবচেয়ে সংবেদনশীল সময়গুলোর একটিতে আইআরজিসির মুখপাত্র ও জনসংযোগ উপপ্রধান নায়েনির সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে আমরা শুনেছি ইরানের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অথচ সংক্ষিপ্ত সংঘাত—“ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ”—সম্পর্কে তাঁর প্রত্যক্ষ বিবরণ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নায়েনি জানান, এই যুদ্ধ কেবল সামরিক সংঘর্ষ নয়; বরং ছিল একটি কৌশলগত পরীক্ষা—যেখানে ইরানের জাতীয় শক্তির সব স্তর, সামরিক প্রতিরোধ থেকে সামাজিক স্থিতিশীলতা পর্যন্ত, অভূতপূর্ব চাপের মুখে পড়েছিল।
সাক্ষাৎকারে তিনি যুদ্ধের প্রথম দিকের বিস্ময়কর মুহূর্ত ও একাধিক জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের শাহাদতের ঘটনা স্মরণ করেন। তবে তিনি বলেন, নেতৃত্ব কাঠামো দ্রুত পুনর্গঠিত হয়েছিল এবং ইরান আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে কঠোর জবাব দিয়েছে।
১২ দিনের যুদ্ধ আসলে কী ছিল? কেন এটি পূর্বের যুদ্ধগুলোর থেকে আলাদা?
জেনারেল নায়েনি বলেন, “এটি ছিল পূর্ণমাত্রার প্রযুক্তিনির্ভর, ক্ষেপণাস্ত্রভিত্তিক এবং আকাশকেন্দ্রিক যুদ্ধ—একটি প্রকৃত হাইব্রিড সংঘাত।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন— ইরান–ইরাক যুদ্ধ ছিল একটি ধ্রুপদী স্থলযুদ্ধ, যেখানে মূল উদ্দেশ্য ছিল ভূখণ্ড দখল। কিন্তু ১২ দিনের যুদ্ধ ছিল ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, আকাশ শক্তি, সাইবার অপারেশন, তথ্যযুদ্ধ ও কগনিটিভ যুদ্ধের সমন্বয়ে গঠিত আধুনিক বহুমাত্রিক হামলা।
আগের যুদ্ধগুলোতে ধ্বংস ও প্রাণহানি ছিল প্রধান মানদণ্ড। কিন্তু ১২ দিনের যুদ্ধে লক্ষ্য ছিল শত্রুর ওপর রাজনৈতিক ও কৌশলগত ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়া এবং যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষমতার সমীকরণ বদলে দেওয়া—এবং ইরান এতে সম্পূর্ণ সফল হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রথম আঘাতের পর এত দ্রুত ও জোরালো জবাব দেওয়া সম্ভব হলো কীভাবে?
জেনারেল নায়েনি বলেন, “গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। সব মহড়া ও প্রস্তুতি সেই দিনের জন্য ছিল।”
শহিদ বাকেরি, রাশিদ ও সালামির মতো কমান্ডাররা —অস্ত্র, প্রযুক্তি, কৌশল সব ক্ষেত্রেই নিয়মিত প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করতেন।
শত্রুর আকস্মিক হামলায় কয়েকজন কমান্ডার শাহাদত লাভ করলেও “এক ঘণ্টার মধ্যেই কমান্ড ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার হয় এবং পুরো বাহিনী পূর্ণমাত্রায় কার্যকর হয়ে ওঠে।”
তিনি বলেন, এয়ারোস্পেস ইউনিটগুলো নতুন নিয়োগের কারণে ১২ ঘণ্টা বিলম্বে দায়িত্ব পেলেও ঐতিহাসিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। একে তিনি বহু বছরের প্রস্তুতিমূলক কাজের স্বাভাবিক ফল বলে উল্লেখ করেন।
ইরান–ইরাক ৮ বছরের যুদ্ধের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের তুলনা
মূল সাদৃশ্য:
উভয় সংঘাতই যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত প্রকল্পের অংশ, যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় শক্তিকে দুর্বল করা।
মূল পার্থক্য:
-
ইরান–ইরাক যুদ্ধ ছিল স্থলযুদ্ধ এবং হুমকিকে প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
-
১২ দিনের যুদ্ধ ছিল আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্রকেন্দ্রিক—যেখানে ইরান আগাম প্রস্তুত ছিল এবং হুমকি গভীরভাবে মূল্যায়ন করেছিল।
জেনারেল নায়েনি বলেন, “ইরান–ইরাক যুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে—হুমকি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। ভবিষ্যৎ হুমকি আসবে অঞ্চলসীমার বাইরে থেকে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি শাসন থেকে।”
আঞ্চলিক পরিস্থিতি কি আরও উত্তপ্ত হতে পারে? ইরানের প্রস্তুতি কতটুকু?
জেনারেল নায়েনি বলেন, “আমাদের কোনো উদ্বেগ নেই। সশস্ত্র বাহিনী প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে। প্রস্তুতি ও উদ্ভাবনই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
তিনি জানান— প্রত্যেক সামরিক শাখা এমন সক্ষমতা তৈরি করছে, যা ১২ দিনের যুদ্ধে প্রদর্শিত শক্তিকেও ছাড়িয়ে যাবে।
জেনারেল নায়েনির ভাষায়, “শত্রুর এখন যুদ্ধ শুরুর সক্ষমতা নেই। তাদের সবচেয়ে বড় বাধা হলো ইরানের বাড়তে থাকা শক্তি। যুদ্ধের হুমকির কথা—এসব মূলত মানসিক যুদ্ধ।”
শেষে তিনি সতর্ক করে বলেন, “শত্রু আবার কোনো ভুল করলে আরও কঠোর ও অনুতাপজনক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে। আরও জটিল যুদ্ধের জন্যও আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”



