জীবনযাপনকুরআনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

মানুষের বংশবীজে শয়তানের ছায়া-স্পর্শ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: মানুষের বংশধারা, তার উপার্জন ও তার সন্তান—এসবই আসমানি দায়িত্বের সূক্ষ্ম পরিধিতে আবদ্ধ। কোরআন ও রেওয়ায়েত ইঙ্গিত করে, অবহেলা ও গাফিলতির ক্ষুদ্রতম ফাঁক দিয়েও ইবলিস মানুষের জীবনযাত্রায় সেঁধিয়ে পড়তে পারে—তার রিজিকে অংশ নিতে পারে, এমনকি মানব-নিষেকেও নিজের অশুভ ছায়া বিস্তার করতে পারে। তাই হালাল উপার্জন ও পবিত্র সন্তানলাভ নবীগণের কাছে ছিল এক মহাপবিত্র আমানত।

কোরআনের বহু আয়াত ও রেওয়ায়েত সাক্ষ্য দেয়—ইবলিস মানুষের সম্পদে যেমন, তেমনি তার সন্তানেও অংশ নিতে সক্ষম। এই কারণে হালাল রিজিক ও সন্তানলাভের পবিত্রতাকে নবীরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন; এমনকি আল্লাহ বহুবিধ কাহিনির মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি এই সূক্ষ্ম বিষয়ে নিবদ্ধ করেছেন।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নবীগণ (আ.) আল্লাহর দরবারে নেক সন্তান কামনা করতেন এবং বিবাহ ও সন্তানলাভের ক্ষেত্রে অসীম সতর্কতা অবলম্বন করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)–ও ফাতিমা যাহরা (সা.)–এর আগমনী উপলক্ষে দীর্ঘকাল ধরে মুনাজাতে নিমগ্ন ছিলেন; ও পরিশেষে আল্লাহ তাঁর জন্মের বস্তুগত উপাদানকে এক জান্নাতি ফলের মাধ্যমে নির্ধারিত করেন। রেওয়ায়েতে এসেছে—

از طرف خداوند سیبی بهشتی به وسیله جبرئیل به رسول اکرم صلی الله علیه و آله اهدا شد… جبرئیل عرض کرد: «یا رسول‏ الله، بخور که آن نور «منصوره فاطمه» است.» … «دختری است که از صلب تو خارج می شود و نامش در آسمان منصوره و در زمین فاطمه است

কিন্তু মানুষের জীবনে যখন গাফিলতির অন্ধকার নেমে আসে, তখন সে এই সূক্ষ্ম ও পবিত্র দায়িত্বের মর্যাদা ভুলে বসে। আধ্যাত্মিক প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করেই সন্তানলাভে অগ্রসর হয়, আর ঠিক সেই অবহেলার ফাঁকটিতেই শয়তান সুযোগ পায়—মানুষের বীজত্বে নিজের অশুভ ছায়া ফেলতে। এই কারণেই আল্লাহ সূরা ইসরা–তে ইবলিসকে উদ্দেশ করে ঘোষণা করেন—

وَ اسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِکَ وَ أَجْلِبْ عَلَیْهِمْ بِخَیْلِکَ وَ رَجِلِکَ وَ شارِکْهُمْ‏ فِی الْأَمْوالِ وَ الْأَوْلادِ وَ عِدْهُمْ وَ ما یَعِدُهُمُ الشَّیْطانُ إِلاَّ غُرُوراً

এই আয়াত মানুষের কানে সতর্কতার ঘন্টা বাজিয়ে দেয়—ইবলিস মানুষের সম্পদে অংশ নিতে পারে, এবং তার বংশধারার উপরও কালো ছায়া ফেলতে পারে।

আবদুর রহমান ইবনে কাসির ইমাম সাদিক (আ.)–কে প্রশ্ন করলেন, “শয়তান কি যুগল মিলনের সময় কোনোভাবে অংশগ্রহণ করে? ইমাম (আ.) উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, তুমি কি আল্লাহর কণ্ঠ ইবলিসের কাছে পৌঁছেছে বলে শুনোনি?”
এরপর তিনি বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে বোঝালেন।

ইবনে কাসির আবার জানতে চাইলেন, “কীভাবে বোঝা যায় যে শয়তান সেই ঘটনায় অংশগ্রহণ করেছে? ইমাম (আ.) বললেন, “আমাদের পরিবারের প্রতি প্রেম ও ঘৃণার মাধ্যমে সেই বিষয় স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। শাওাহিদুত তানজিল, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৫১।

অতএব, সন্তানলাভের পূর্বে আল্লাহর নাম স্মরণ করা, শয়তানের থেকে আশ্রয় চাওয়া, এবং আহলুলবাইত (আ.) শিক্ষিত দোআসমূহ পাঠ করা—এ সবই মানুষের আধ্যাত্মিক দায়িত্ব।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button