জীবনযাপনধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদবিশ্ব

দায়বোধের আলোয় আত্মশুদ্ধির পথ

ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫

মিডিয়া মিহির: নিজের নেক কাজকে বড় মনে করা এবং ক্ষুদ্র ভুলকে তুচ্ছ মনে করা—এটি মানুষের আত্মিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) ও অন্যান্য ইমামদের শিক্ষা অনুসারে, সবসময় নিজেকে অপরিপূর্ণ মনে করে কাজ করা এবং আল্লাহর উপস্থিতি সচেতনভাবে স্মরণ করা আত্মসমালোচনার মূল চাবিকাঠি।

নিখুঁত পরিশীলিত আত্মসমালোচনা: নৈতিকতার পথে অহংকার এড়ানো

হযরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) আল্লাহর প্রতি দোয়া করেছেন:

اللَّهُمَّ … أَلْبِسْنِی زِینَةَ الْمُتَّقِینَ، فِی … اسْتِقْلَالِ الْخَیرِ وَ إِنْ کثُرَ مِنْ قَوْلِی وَ فِعْلِی، وَ اسْتِکثَارِ الشَّرِّ وَ إِنْ قَلَّ مِنْ قَوْلِی وَ فِعْلِی. صحیفه سجادیه، دعای بیستم

হে আল্লাহ! আমাকে মুত্তাকীদের সৌন্দর্য ও অলংকারে অলঙ্কৃত করো— যাতে আমার সৎকর্ম, যদিও তা প্রচুর হয়, আমার কাছে সামান্য মনে হয়; আর আমার দোষ বা পাপ, যদিও তা অল্প হয়, আমার কাছে গুরুতর মনে হয়। সাহিফা সাজ্জাদিয়া, দোয়া নং ২০

ব্যাখ্যা:মানুষের আত্মিক উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে—নিজের নেক কাজকে বড় মনে করা এবং তুচ্ছ ভুলকে অমুল্য মনে করা।
যদি আমরা সর্বদা আল্লাহর সামনে উপস্থিত থাকি এবং সমস্ত কিছু—আমাদের জীবন, দেহ, মন, এবং আত্মা—তাঁর অন্তর্গত মনে করি, তবে এই অহংকার আমাদের কাছে আসে না।

যদি আমরা সমগ্র বিশ্বকে আল্লাহর উপস্থিতির প্রাঙ্গণ মনে করি, আর সর্বদা নিজেকে তাঁর দরবারে উপস্থিত ভাবি; যদি আমরা আল্লাহকে আমাদের অস্তিত্বের প্রতিটি সত্তা ও সম্পদের প্রকৃত মালিক হিসেবে স্বীকার করি—তাহলে আমরা কখনোই সেই ভয়াবহ বিপদের শিকার হব না।

قال الإمام موسى الكاظم (عليه السلام لابنه: يَا بُنَيَّ عَلَيْكَ بِالْجِدِّ، لاَ تُخْرِجَنَّ نَفْسَكَ مِنْ حَدِّ التَّقْصِيرِ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَطَاعَتِهِ، فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يُعْبَدُ حَقَّ عِبَادَتِهِ.» (وسائل الشيعة، ج ١، ص ٩٥

হযরত ইমাম কাজিম (আ.) তাঁর সন্তানকে উপদেশ দিয়ে বলেছেন:হে আমার সন্তান! সর্বদা আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও। কিন্তু কখনোই নিজেকে পূর্ণতার মর্যাদায় মনে করো না। কারণ মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন, আল্লাহর প্রকৃত ও পূর্ণ ইবাদত করা তার সাধ্যের বাইরে। ওয়াসায়েলুশ-শিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৫।

قال الإمام الصادق (عليه السلام): «أَكْثِرْ مِنْ أَنْ تَقُولَ: اللَّهُمَّ لاَ تُخْرِجْنِي مِنَ التَّقْصِيرِ. (أصول الكافي، ج ٢، ص ٧٣

فلما سُئل عن معنى ذلك قال (عليه السلام): كُلُّ عَمَلٍ تُرِيدُ بِهِ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ فَكُنْ فِيهِ مُقَصِّراً عِنْدَ نَفْسِكَ، فَإِنَّ النَّاسَ كُلَّهُمْ فِي أَعْمَالِهِمْ فِيمَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ اللَّهِ مُقَصِّرُونَ.

হযরত ইমাম সাদিক (আ.) নির্দেশ দিয়েছেন:প্রায়শই বলো: হে আমার প্রভু! আমাকে কখনোই সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করো না। উসূলুল কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৩

যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো—সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তখন তিনি ব্যাখ্যা দিলেন: যে কোনো কাজ তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে করো, নিজেকে তাতে অপরিপূর্ণ মনে করো। কারণ মানুষ তার সমস্ত কর্মে—নিজেদের এবং আল্লাহর মধ্যে—অপরিপূর্ণ।

সারসংক্ষেপ:

১- নেক কাজকে বড় মনে করা বা ছোট ভুলকে তুচ্ছ মনে করা—উভয়ই আত্মিক পতনের কারণ।

২- সবকিছু আল্লাহর উপস্থিতিতে এবং তাঁর জন্য করা কাজকে নিজেকে অপরিপূর্ণ মনে করে করাটা আত্মসমালোচনার মূল।

৩- এমন মনোভাব মানুষকে নম্র, সচেতন ও ধারাবাহিকভাবে উন্নতির দিকে পরিচালিত করে।

 ফুটনোটসমূহ

১. সাহিফা সাজ্জাদিয়া, দোয়া নং ২০ (মাকারিমুল আখলাক)।

২. মাওলানা। ৩. ওসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৯৫।

৪. উসূলুল কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৩।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button