কুরআনের সতর্কবার্তা: সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যাওয়াই মানুষের পতনের সূচনা
ডক্টর মুহাম্মাদ ফারুক হুসাইন। প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫
মিডিয়া মিহির: কুরআনের সতর্কবার্তা: আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানে আত্মারও ভুলে যাওয়া। আত্মা যখন নিজের অস্তিত্ব ও লক্ষ্য ভুলে যায়, তখন মানবিক জীবন নেমে আসে অনিশ্চিত পতনের দিকে। সঠিক জীবনযাপন ও মুক্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজন প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর স্মরণ এবং পাপ থেকে দূরে থাকা।
ফরমানে আল্লাহ: সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যাওয়া, মানবপতনের সূচনা
যেখানে প্রতিদিন কোরআনের একটি আয়াতের সংক্ষিপ্ত ও ব্যবহারিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, যা জীবন পরিচালনা ও সাফল্যের পথপ্রদর্শক।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আব্বাস আশ’জা’ ইসফাহানী এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেন: সুরা হাশর, আয়াত ১৯:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ نَسُوا اللَّهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ
তোমরা যেন তাদের মতো না হও যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, অতএব আল্লাহ তাদেরকে তাদের নিজের অস্তিত্বও ভুলিয়ে দিয়েছে। এই আয়াত মানুষের আধ্যাত্মিক অবস্থার মূল্যায়নের একটি মানদণ্ড প্রদান করে এবং আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার ফলাফল সম্পর্কে গুরুতর সতর্কবার্তা দেয়।
১. আল্লাহকে ভুলে যাওয়া = আত্মাকে ভুলে যাওয়া: আয়াতটি আমাদের জানায়—যদি আমরা নিজের অবস্থা মূল্যায়ন করতে চাই, আমাদের দেখার বিষয় হলো, আমরা কি আল্লাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মনে রাখি নাকি না। যারা আল্লাহরকে স্মরণে রাখে না, তারাই নিজেকে ভুলে যায়।
২. আত্মার জ্ঞান শুরু হয় ইলাহীর জ্ঞান থেকে: প্রখ্যাত হাদিসে বলা হয়েছে—
“من عرف نفسه فقد عرف ربه”
যে নিজেকে চেনে, সে তার প্রভুকে চেনে।অর্থাৎ আমরা আত্মা ও নাফসকে চিনে আল্লাহকে চিনি। তাই আল্লাহভ্রষ্টি থেকে আত্মাভ্রষ্টির শুরু।
৩. পাপ ও অসৎকর্ম = আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার মাধ্যম:
আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে—“أولئک هم الفاسقون”, অর্থাৎ যারা আল্লাহকে ভুলে যায়, তারা ফাসিক, অর্থাৎ অসৎ ও অবাধ্য। গুণাতীততা, পাপ, অসৎকর্ম এবং শয়তানের পথে চলা মানুষকে আল্লাহর স্মৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
৪. ফলাফল
যারা পাপের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তারা আল্লাহকে ভুলে যায়। আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসে আত্মাকে ভুলে যাওয়া—যা এক অনিশ্চিত, বিপজ্জনক পতনের পথে নিয়ে যায়। মানুষ জানে না তার শেষ অবস্থা কেমন হবে, সে কীভাবে এই দুনিয়া ছাড়বে।
প্রয়োজনীয় শিক্ষণীয় উপসংহার
১.জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর স্মরণ করুন।
২.পাপ ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকুন।
৩.যদি কোনো ভুল হয়, সঙ্গে সঙ্গে তওবা করুন।
৪.আত্মার ভুল ও পতন থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর প্রতি সচেতন থাকুন।
সর্বোপরি, আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানে নিজের অস্তিত্ব ও লক্ষ্যকে ভুলে যাওয়া, এবং এ থেকে সঠিক জীবন ও মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। আল্লাহর স্মরণে জীবনকে আলোকিত করুন, আত্মাকে চেনার পথ ধরে নাফস ও জীবনকে সযত্নে পরিচালনা করুন।



