ইতিহাসধর্ম ও বিশ্বাসবিশেষ সংবাদ

হযরত ফাতিমা (সা.আ.) বলেছেন, “শয়তান তোমাদের আহ্বান করল, আর তোমরা সাড়া দিলে”

রাসেল আহমেদ | প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

মিডিয়া মিহির:  রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর, ইসলামী সমাজে এক গভীর পরিবর্তন দেখা দিল। যে সমাজ একসময় নবীর নেতৃত্বে ঐক্য, সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক ছিল, সেখানে ধীরে ধীরে অচেনা কিছু মুখ প্রকাশ পেতে শুরু করল — এমন সব মানুষ, যাদের কেউ চিনত না, যাদের কোনও সম্মান বা মর্যাদা ছিল না। কিন্তু নবীর পর তারা হঠাৎই সমাজের কেন্দ্রস্থলে উঠে এল। এই পরিবর্তন ছিল আসলে উম্মতের অন্তর্গত এক আধ্যাত্মিক রোগের লক্ষণ — নিফাক (কপটতা)।

হযরত ফাতিমা (সা.আ.) তাঁর ঐতিহাসিক খুতবা-এ-ফাদাকিয়াতে এই বাস্তবতাকে গভীর ব্যথাভরা ভাষায় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন:

«فَخَطَرَ فِی عَرَصَاتِکمْ»
— “তোমাদের সমাজের ময়দানে এমন সব লোকদের চলাচল শুরু হলো, যারা আগে ছিল অচেনা ও অখ্যাত।”

তাঁদের সম্পর্কে কেউ জানত না, কেউ তাদের নেতা বলে মনে করত না। কিন্তু তাদের অন্তরে লুকিয়ে ছিল মুনাফিকতা — এমন এক অন্তর্দ্বন্দ্ব যা নবীর জীবিত অবস্থায় প্রকাশ পায়নি। নবী করিম (সা.)-এর ওফাতের পরই সেই লুকানো নাফরমানি ও কপটতা মুখ উঁচু করল। সমাজের নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে তারা সক্রিয় হয়ে উঠল, আর এভাবেই উম্মতের বিচ্যুতির সূচনা হলো।

এরপর হযরত ফাতিমা (সা.আ.) এক অনন্য চিত্র এঁকেছেন, যা শুধু ইতিহাস নয় — বরং প্রতিটি যুগের জন্য শিক্ষা:

«وَ أَطْلَعَ الشَّیطَانُ رَأْسَهُ مِنْ مَغْرَزِهِ هَاتِفاً بِکمْ، فَأَلْفَاکمْ لِدَعْوَتِهِ مُسْتَجِیبِینَ»
— “শয়তান তার লুকানোর গর্ত থেকে মাথা তুলল, তোমাদের দিকে আহ্বান জানাল; আর দেখল, তোমরা তার আহ্বানে সাড়া দিতে প্রস্তুত।”

শয়তান দীর্ঘদিন ধরে ওত পেতে ছিল, সুযোগের অপেক্ষায়। যখন দেখল সমাজের ভেতর ঐক্য ভেঙে যাচ্ছে, ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ছে, তখনই সে মাথা তুলল। সে ফিসফিসিয়ে বলল, প্রলোভনের সুরে আহ্বান জানাল —
আর মানুষ শুনে সাড়া দিল।

হযরত ফাতিমা (সা.আ.) বলেন,

«وَ لِلْغِرَّةِ فِیهِ مُلَاحِظِینَ»
— “তোমরা অবাক হয়ে চারপাশে তাকালে, কে তোমাদের ডাকছে, কী চায়!”

এই কৌতূহলই প্রমাণ করল — মানুষের হৃদয় তখন প্রলোভনের জন্য প্রস্তুত ছিল। তারা সত্য থেকে বিমুখ হয়ে বিভ্রান্তির দিকে ঝুঁকেছিল।

বার্তা ও শিক্ষা

এই বক্তব্যে হযরত ফাতিমা (সা.আ.) উম্মতের আত্মিক অবক্ষয়ের এক গভীর চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন —
যখন সমাজে সত্যের কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে যায়, যখন স্বার্থপরতা ও কপটতা ঈমানকে গ্রাস করে, তখন শয়তান আবার মাথা তোলে। আর মানুষ — যারা নিজেদের হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখেনি — অনায়াসেই তার আহ্বানে সাড়া দেয়।

এ কারণেই এই খুতবা শুধু ইতিহাস নয়, বরং প্রতিটি যুগের জন্য এক সতর্কবার্তা: যখন শয়তান আহ্বান জানায়, আমাদের হৃদয় যেন তার জবাব না দেয়।

আরও পড়ুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button